সুপারশপ ‘বাস্কেট’ করোনার ঝুঁকি নিয়েই খুলতে যাচ্ছে !

সুপারশপ ‘বাস্কেট’ করোনার ঝুঁকি নিয়েই খুলতে যাচ্ছে !

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রামের অভিজাত খুলশী এলাকায় লকডাউন হওয়া সুপারশপ ‘দি বাস্কেট’ চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে খোদ প্রশাসনেই আছে দ্বিমত ও সংশয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো চাইছে কর্মীদের সুস্থতা এবং বাস্কেটের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ জীবাণুমুক্ত হওয়ার নিশ্চয়তা।

৩ এপ্রিল নগরীর দামপাড়া নিবাসী এক বৃদ্ধের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে পরদিন ‘বাস্কেট’ নামের সুপারশপটি বন্ধ করে প্রশাসন। ওই বৃদ্ধের এক ছেলে বাস্কেটের বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। ৫ এপ্রিল ওই ছেলের শরীরেও করোনা ধরা পড়ে। আগে ধারণা করা হয়েছিল বৃদ্ধের সৌদিফেরত মেয়ে ও তার শাশুড়ি থেকে করোনা ছড়িয়েছে। কিন্তু ছেলের শরীরে শনাক্ত হওয়ার দিনই রেজাল্ট আসে বিদেশফেরত দুই নারী করোনামুক্ত।

তখন শুরু হয় নতুন হিসাব— ছেলে পিতার শরীরে, নাকি পিতা থেকে ছেলের শরীরে করোনা ছড়ালো? এই সমীকরণ মেলাতে গিয়ে প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তাই ভাবছেন বাস্কেটে বিদেশী নাগরিকদের যাতায়াতে ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস। কারণ খুলশীতে প্রচুর বিদেশী নাগরিক বসবাস করেন এবং তাদের ৩০ জনের বেশি করোনার সংকটময় সময়ে বিদেশ থেকে চট্টগ্রাম এসে হোম কোয়ারেন্টাইন অনুসরণ করেননি।

৪ এপ্রিল বাস্কেট লকডাউন করার সময় প্রশাসনের নির্দেশ দিলে তাদের ৭০ জনের সকল স্টাফকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ৬ এপ্রিল সীতাকুণ্ডের স্থানীয় প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ওই এলাকায় অবস্থানরত স্টাফদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার কাজ করেন। তাদের একজনের সর্দি-কাশিসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তার টেস্ট করায় প্রশাসন। ৮ এপ্রিল টেস্ট রিপোর্টে সেটা ‘নেগেটিভ’ আসলে বাস্কেট খোলার তোড়জোড় শুরু হয় বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বাস্কেটের পরিচালক নাজমুল হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের এক কর্মীর প্রাথমিক টেস্টে ‘পজিটিভ’ আসার পর প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। পজিটিভ রেজাল্ট আসা স্টাফের চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও আসেনি। তবে সে সর্ব শেষ ২৪ মার্চ কর্মস্থলে উপস্থিত ছিল। সে হিসেবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৪ দিন ওভার হয়ে গেছে, যে সময়ের মধ্যে কোন স্টাফের শরীরে করোনার কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়নি। সেই হিসেবে আগামী দুই এক দিনের মধ্যে প্রশাসন আমাদের প্রতিষ্ঠান চালু করার অনুমতি দেবে।

এ বিষয়ে নগর পুলিশের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা পজিটিভ হওয়া স্টাফ ২৬ মার্চ শেষ ডিউটি করলে ১৪ দিন শেষ হয় ৯ এপ্রিল। আমরা হাতে আরও একটা দিন সময় নিয়ে বাস্কেট খোলার অনুমতি দিতে পারি। তবে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, আরও কয়টা দিন সময় লাগবে, করোনাভাইরাস শনাক্ত হলোই কেবল। আরও কয়েকটা দিন পরে আমরা এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবো।

তবে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার কমিশনের ডেপুটি গভর্নর আমিনুল হক বাবু বলেন, বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো করোনাভাইরাসের আক্রমণের চতুর্থ স্টেজে আমরা প্রবেশ করেছি। সামনের কয়েকটা দিন আমাদের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে আমি দাবি জানাবো, বাস্কেটের সকল স্টাফের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, তাদের ক্রেতাদের সুরক্ষা। সকল স্টাফের হোম কোয়ারেন্টাইন সমাপ্ত করা এবং সকল কর্মীর শরীরের করোনাভাইরাস আছে কিনা তার টেস্ট করানো। স্টাফরা শতভাগ সুরক্ষা পেলে তাদের দিক থেকে তাদের ক্রেতারাও সুরক্ষা পাবে।

পাশাপাশি, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দিয়ে বাস্কেটের অভ্যন্তর পরীক্ষা করা যাতে করোনার উপস্থিতি রয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়। যদি প্রতিষ্ঠানের ভেতরে জীবাণুর অস্তিত্ব থাকে তবে স্টাফ, মালিক কিংবা ক্রেতা কেউ নিরাপদ নয়। একটা কথা সত্য প্রতিষ্ঠানে মালিকের বিশাল বিনিয়োগ আছে। বিনিয়োগের সুরক্ষা যেমন জরুরি তার চেয়ে বেশি জরুরি তিনিসহ তার স্টাফ ও ক্রেতাদের জীবনের সুরক্ষা ।