অনন্য জয়ের মধ্য দিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক ।।

অনন্য জয়ের মধ্য দিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
জয় এর মধ্য দিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

জিম্বুবয়েকে ১৭৬ রানের লক্ষ্য বেধে দেয়ার পরই বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, বাংলাদেশই জিততে যাচ্ছে এই ম্যাচে। শেষ পর্যন্ত বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেটাই সম্ভব হলো এবং জিম্বাবুয়েকে ৩৯ রানে হারিয়ে সবার আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে পৌঁছে গেলো সাকিব আল হাসানের দল। বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। টার্গেট তাড়া করতে নেমে অভিষিক্ত আমিনুলের লেগ স্পিন আর দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা শফিউলের গতির মুখে পড়ে ১৩৬ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অভিষিক্ত নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে উড়ন্ত সূচনা করেন লিটন কুমার দাস। ওপেনিংয়ে তারা ৪.৫ ওভারে ৪৯ রানের জুটি গড়েন। এরপর মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে বিদায় নেন দুই ওপেনার। কাইল জার্ভিসের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত। তার আগে ৯ বলে মাত্র ১১ রান করার সুযোগ পান তরুণ এ ওপেনার। আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হওয়া জাতীয় দলের ওপেনার লিটন দাস আজ শুরু থেকেই অসাধারণ ব্যাটিং করেন। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান ক্রিস মফুর বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন। সাজঘরে ফেরার আগে ২২ বলে চারটি চার ও দুই ছক্বায় ৩৮ রান করেন লিটন। তার বিদায়ে ৫.৫ ওভারে ৫৫ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৫৫ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব। প্রত্যাশা ছিল তিনি ব্যাটিংয়ে ঝলক দেখাবেন। আগের দুই ম্যাচে ১৬ রান করা সাকিব এদিন ফেরেন মাত্র ১০ রানে। তিন ম্যাচে সাকিবের সংগ্রহ মাত্র ২৬ রান। তার বিদায়ে ৭.২ ওভারে ৬৫ রানে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম। চতুর্থ উইকেটে একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৭৮ রানের জুটি গড়েন তারা। রিয়াদ-মুশফিকের ব্যাটিং দেখে একটা সময়ে মনে হয়েছিল বাংলাদেশ দুইশ’ রানের কাছাকাছি যাবে। কিন্তু ২৬ বলে ৩২ রান করে মুশফিক আউট হলে রান সংগ্রহের সেই অগ্রযাত্রা থেমে যায়। এরপর তরুণ ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে সেভাবে ব্যাটিং তাণ্ডব চালাতে পরেননি রিয়াদ।

অভিষেক ম্যাচে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে জয় উপহার দেয়া আফিফ এদিন ফেরেন মাত্র ৭ রানে। ইনিংসের শেষ ওভারে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন রিয়াদ। তার আগে ৪১ বলে এক চার ও ৪টি ছক্কায় ৬২ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আউট হয়ে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ইনিংসের শেষ ওভারে পরপর দুই বলে রিয়াদ-সৈকতের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে দুই বলে এক চারের সাহায্যে ৬ রান আদায় করে নেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তাতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭৫/৭ রান। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৪ ওভারে ৩২ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন কাইল জারভিস। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ইনিংসের প্রথম ওভারে জিম্বাবুয়ান ওপেনার ব্রান্ড টেইলরকে ফেরান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। ঠিক পরের ওভারে ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে নামা চাকাভাকে আউট করেন সাকিব। দুই বছর পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরেই সাফল্যে ফেরেন শফিউল ইসলাম। ২৯ বছর বয়সী এই পেসার নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই শেন উইলিয়ামসকে আফিফ হোসেনের ক্যাচে পরিণত করেন শফিউল। ইনিংসের সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই টিনোটেন্ডা মুতুমবাজিকে আউট করেন অভিষিক্ত লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম। প্রথম ওভারে মাত্র ৩ রানে ১ উইকেট শিকার করেন আমিনুল। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে ছিলেন রায়ান বার্ল। জিম্বাবুয়ের এ তারকা ক্রিকেটার বুধবার ব্যাটিংয়ে নেমেই শফিউলের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন। ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়েকে খেলায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যান অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। জিম্বাবুয়ের এ ওপেনারকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন আমিনুল। রান আউট হয়ে ফেরেন নাভিল মাদজিভা। ৬৬ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান রিচমন্ড মুতুমবামি। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে গর্তে পড়ে থাকা দলকে খেলায় ফিরিয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখান। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই তারকা ব্যাটসম্যানকে তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন শফিউল ইসলাম। তার আগে ৩২ বলে চারটি চার ও তিন ছক্কায় ৫৪ রান করেন মুতুমবামি। তার ফিফটিতে ১৩০ রানে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলতে সক্ষম হয় জিম্বাবুয়ে।