অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে ভূমির সাড়ে ৬ লাখ মামলা, ই-নামজারি হটলাইন অক্টোবরেই

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে ভূমির সাড়ে ৬ লাখ মামলা,  ই-নামজারি হটলাইন অক্টোবরেই
অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে ভূমির সাড়ে ৬ লাখ মামলা, ই-নামজারি হটলাইন অক্টোবরেই

অনলাইনভিত্তিক নামজারি বা মিউটেশন ( ই-নামজারি )সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া ও ডিজিটাল সেবা নিশ্চিতে আগামী অক্টোবরেই হটলাইন চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

তিনি বলেন, এর মাধ্যমে জনগণ ভূমিসংক্রান্ত সমস্যা জানাতে পারবে। ভূমি বিষয়ক ৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২০টি মামলা অনলাইনে নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় মোট মামলা হয়েছে ১০ লাখ। সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ই-নামজারির সক্ষমতা মূল্যায়নে গবেষণালব্ধ ফল বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী জানান, সরকারের অল্প সময়ে ১ কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৩ জন সুবিধাভোগী ই-নামজারি থেকে সুবিধা পেতে শুরু করেছেন। ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮১৫টি নামজারি আবেদন দাখিল হয়েছে অনলাইনে। মন্ত্রী বলেন, ১ জুলাই থেকে সারা দেশে ই-নামজারি শুরু হয়েছে। তবে তিনটি পার্বত্য জেলা এই কর্মসূচির বাইরে রয়েছে। বর্তমানে ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিসে এবং ৩ হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই-নামজারি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভূমিমন্ত্রী জানান, ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো হয়রানির কথা সরাসরি মন্ত্রণালয়ে জানাতে আগামী মাসের মধ্যে হটলাইন নম্বর চালু করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ভুক্তভোগী তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়।

এছাড়া সেবা নিশ্চিতের পর গ্রাহকরা সেবার মান নিয়ে তাদের সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির বিষয়ক প্রতিক্রিয়া যাতে জানাতে পারেন, ওয়েবসাইটে সে ব্যবস্থা রাখা হবে। ফলে পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন করে ভূমিসেবার মান বাড়ানোর ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ই-নামজারি সেবা চালু হওয়ায় নামজারির সময়সীমা ৪৫ থেকে ২৮ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। ই-নামজারি পদ্ধতিতে সেবা গ্রহণে, সনাতন পদ্ধতির চেয়ে উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা প্রার্থীদের গমনের হার ১৭ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে সময় ব্যয়ের হার ৭ শতাংশ কমেছে। ডিজিটাল সুবিধা আরও বাড়লে এবং আইসিটি লিটারেসি বাড়লে আরও সময় কমে আসবে। অর্থাৎ ভূমিসেবা গ্রহণে সময় ও পরিদর্শন কমে যাওয়ার ফলে ব্যয় কমে যাচ্ছে। ফলে নাগরিক সন্তুষ্টি বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা ই-গভর্নেন্সের রোল যত বেশি বাড়াতে পারব তত বেশি স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। আমরা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত এ সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এজন্য আমাদের সময় দিতে হবে।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। এজন্য আমরা কয়েকটি পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষদের। কারণ তারা একহাত জায়গাও ছাড়তে চায় না। তিনি বলেন, সাড়ে ৪ কোটি আরএস ও সিএস খতিয়ানের মধ্যে পৌনে চার কোটি আমাদের ডাটাবেজে আপলোড করা হয়েছে। এগুলো অনলাইনে পাচ্ছে সবাই। আর ৫০ হাজার আপলোড করতে পারলেই এক্ষেত্রে শতভাগ হয়ে যাবে। তাৎক্ষণিক ভিজিটের কথা উল্লেখ করে ভূমিমন্ত্রী বলেন, সিস্টেমের উন্নয়ন করতে না পারলে তাৎক্ষণিক ভিজিটের কোনো উপকারিতা পাওয়া যাবে না। রেজিস্ট্রেশন বিভাগের অংশটায় বেশ সমস্যা রয়েছে। এটা কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় না, এটা হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ের আওতায়। রেজিস্ট্রেশন বিভাগটা যেহেতু আমার মন্ত্রণালয়ের আওতায় নয়, তাই আমি এখানে হাত দিতে পারছি না।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলে দেখানো হয়, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সেবা দেওয়ার হার ই-নামজারির মাধ্যমে ৪৫ দিনের ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ সেবা দেওয়ার সক্ষমতা বেড়েছে এবং বর্তমান ২৮ দিনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বেড়েছে। প্রান্তিক অঞ্চলে অনেক সময় সেবাগ্রহীতারা ভূমি অফিসে গিয়ে বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা নেন। গত ১৮ এপ্রিল থেকে জুন ১৯ পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নামজারি সেবা ও ই-নামজারি সেবা দেওয়ার বিষয়ে ১৫৫টি উপজেলায় এ বিষয়ে গবেষণা করা হয়েছে।