আরও ৬ মাস করোনা আতঙ্ক , প্রধান প্রতিষেধক সচেতনতা

আরও ৬ মাস করোনা আতঙ্ক , প্রধান প্রতিষেধক সচেতনতা
আরও ৬ মাস করোনা আতঙ্ক , প্রধান প্রতিষেধক সচেতনতা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

আরো ৬ মাস আতঙ্কের মধ্যেই পার করতে হবে। যদিও টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তবে সবার জন্য টিকার নিশ্চয়তা কতদিনে তৈরি হবে তা সুনিশ্চিত নয়। 

বিশ্বব্যাপী লাগামহীন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের আতঙ্ক নিয়েই দেশের মানুষকে নূন্যতম আরও ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে, জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। যদিও বছর শেষে করোনার টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) রাতে বেসরকারী সংস্থা হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন (হেলো) আয়োজিত 'বৈজ্ঞানিক ওয়েব সেমিনারে' বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। এতে অংশগ্রহণ করেছে হেলোর সদস্য, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যাংকার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবীরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান কার্ডিওলজিস্ট এবং বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, "আতঙ্কের মধ্যেই আরো ৬ মাস পার করতে হবে। যদিও টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তবে সবার জন্য টিকার নিশ্চয়তা কতদিনে তৈরি হবে তা সুনিশ্চিত নয়।" 

আলোচকরা দাবি করেন, ডায়েবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, এজমাসহ জটিল রোগীর তুলনায় স্বাভাবিক সুস্থ মানুষ করোনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর কারণ, অসুস্থ ব্যক্তিরা নিজে এবং পরিবার সচেতন। অন্যদিকে সুস্থ ব্যক্তিরা অবহেলা আর অসচেতনতার কারণেই করোনার কবলে পড়ছে এবং সুস্থ হলেও দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতা ভুগছেন। আবার দরিদ্র্য ব্যক্তির তুলনায় সচ্ছল ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।

সেমিনারে করোনাভাইরাসে দেশ বিদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডা. মো. মতিউর রহমান। হৃদরোগ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আরিফুর রহমান (সজল)।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান কার্ডিওলজিস্ট এবং বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ডাক্তারের সঙ্গে টেলিফোনে বা সরাসরি রোগী যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে, তাহলে রোগীরা মানসিক স্বস্তি পাবেন। সচেতন হবে।

তিনি বলেন, "করোনা মহমারির প্রথম থেকে কিছু শ্রেণী-পেশার মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। যেমন- ডাক্তার, নার্স, দিনমজুর এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আবার দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ায় এখন কেউই ঘরে থাকতে পারছে না। এ অবস্থায় একটাই কাজ, তা হলো সচেতনতা। নিজের স্বার্থে, সমাজ ও পরিবারের সার্থে বাধ্যতামুলক মাস্ক পরা।"

"দীর্ঘ এসময়ে ডাক্তারগণ অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তার ভিত্তিতেই বলছি, করোনা এখনও আতঙ্কের বিষয় বটে, তবে সচেতনতাই হতে পারে আপাতত প্রতিষেধক।"

তার এ বক্তব্যে একমত পোষণ করেন অন্যান্য প্যানেলিস্টরা। মতামতের পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তারা।

আলোচকরা বলেন, সরকার প্রথম থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে জনগনের পাশে দাঁড়াবার। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তির অর্থ লোভের কারণে ভুয়া চিকিৎসা সেবার বিনিময়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। এছাড়া প্রথম থেকে ব্যাপক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে না পারায় অনেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা করার আগ্রহ হারিয়ছেন। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তি সামাজিক মর্জাদা হানির ভয়ে জ্বর, স্বর্দি বা কাশি গোপন করছে।

আবার সাধারণ লক্ষণের কারণে অনেকে পাত্তা দিচ্ছেন না। যার ফলে করোনা গণহারে ছড়িয়ে পড়ছে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিত সভাপতি অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন খান বলেন, মার্চ মাসে হোম কোয়ারান্টিনের ব্যবস্থা বাধ্যতামুলক করতে না পারাটা করোনা প্রতিরোধের বড় ব্যর্থতা। এটি হয়ে ওঠেনি শুধুমাত্র ব্যক্তির খামখেয়ালীর কারণে। বর্তমানে আদালতের বিচার কক্ষেও মাস্ক ব্যবহারে অনিয়মের চিত্র দেখা যাচ্ছে। যদিও আমাদের ২০১৮ সালের সংক্রামক প্রতিরোধ আইন রয়েছে। কিন্তু তার প্রয়োগ হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এখন অন্তত মাস্ক পরার ক্ষেত্রে আইনটির কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। জেল-জরিমানার বিধান বাস্তবায়ন সময়ের দাবি।

হেলোর সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ড. মো. আসিফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা করেছেন অধ্যাপক ডা.আফজালুর রহমান, সাবেক পরিচালক (এনআইসিভিডি), চেয়ারম্যান (বিআইটি), গভর্নর (আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার); মো.মশিউর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (অব) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়; অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, ; অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন খান সভাপতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিত; মিসেস সালমা চৌধুরী, অধ্যাপক (সাবেক চেয়ারম্যান) ডিপার্টমেন্ট অফ ইনফরমেশন সাইন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ডা. কায়সার নসরুল্লাহ খান, সিনিয়র কনসালটেন্ট ইউনাইটেড হাসপাতাল ঢাকা এবং মো. রাশেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হেলোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বিশিষ্ট ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মহসীন আহমেদ।