আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে: মুজিব জন্মশতবর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি

আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে: মুজিব জন্মশতবর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি
আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে, মুজিব জন্মশতবর্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

যারা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার চেষ্টা করেছেন, তারা ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে, বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এই দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছেন, তারা ব্যর্থ হয়েছেন। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গতকাল সোমবার সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকারের ডান পাশে লাল গদি মোড়া চেয়ারে বসেন রাষ্ট্রপতি। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৯০ জনের মত সংসদ সদস্য এ সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল অফহোয়াইট জামদনি শাড়ি। আর রাষ্ট্রপতি সাদা পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর মুজিব কোট পরেছিলেন। 

দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না। তবে বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের ছিলেন। বিএনপির সাংসদদের মধ্যে ছিলেন হারুনুর রশীদ।

রাষ্ট্রপতি আসন নেওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেওয়া ভাষণের ভিডিও সংসদ কক্ষে দেখান হয়। এ সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা, কয়েকবার তাকে চোখ মুছতেও দেখা যায়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মাঝে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ান। ভাষণ শেষ হলে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ। অন্য সংসদ সদস্যরাও স্লেগানের জবাব দেন।

ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারে, সেজন্য সকলকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এদেশের জনগণ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধু সকলের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের ‘মুক্তির আলোকবর্তিকা’ হয়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্বকে করেছেন ‘আলোকময়’। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সে লক্ষ্যে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। দেশের সাধারণ মানষকে যারা ‘বিভ্রান্ত করে’, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদেরকে এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সামপ্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনী ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। ‘মুজিববর্ষ’ পালনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে এবং বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের জন্য স্পিকার ও জাতীয় সংসদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির স্মারক বক্তৃতা শেষে তাকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীমূলক বই উপহার দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।