ইলিশ উৎসবে দাবি উঠুক 'লোকাল ইলিশ' চাই

রোটাঃ আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার পিএইচএফ

ইলিশ উৎসবে দাবি উঠুক 'লোকাল ইলিশ' চাই

চলতি একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইলিশের পোনা জাটকা রক্ষা কার্যক্রম (অভয়াশ্রম) শুরু হবার পর ৬-৭ বছরেও যখন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছিলো না, তখন সর্বমহলে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা ইলিশ তথা মা ইলিশ রক্ষা করতে না পারায় নদীতে জাটকার পর্যাপ্ততা যেমন কমতে থাকে, তেমনি জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সর্বাত্মক সফল না হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন কমে গিয়ে সৃষ্টি হয় মারাত্মক ইলিশ সঙ্কট। এই সঙ্কটে দিনের পর দিন ইলিশের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে এই সুস্বাদু মাছ সাধারণ ও গরিব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এমতাবস্থায় দেখা দেয় ইলিশের জন্যে হাহাকার। ইলিশ গবেষকরা এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রজনন মৌসুমে প্রথমে ১১ দিন এবং পরবর্তীতে বাড়াতে বাড়াতে ২২ দিন পর্যন্ত ইলিশসহ নদীতে অন্য সকল মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারিতে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সরকারকে পরামর্শ দেয়। সরকার সে পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। কিন্তু ব্যাপক জনসম্পৃক্ততার অভাবে এই ব্যবস্থাতেও আসছিল না কাঙ্ক্ষিত ফলাফল। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছিলো না।

এ বিষয়টি সুধী-সজ্জন মানুষকে যেমন পীড়া দিচ্ছিলো, ইলিশের জন্যে জগদ্বিখ্যাত চাঁদপুরের সংস্কৃতিসেবীদেরকেও উদ্বিগ্ন করছিলো। তাদেরই প্রতিনিধিত্বশীল একজন হচ্ছেন হারুন আল রশীদ। ব্যক্তি জীবনে একজন কণ্ঠশিল্পী ও নাট্যাভিনেতা এবং চাঁদপুরের বহুল পরিচিত সাংস্কৃতিক সংগঠন চতুরঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব। তিনি পর পর তিনটি সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের পর সমমনাদের নিয়ে ভাবলেন এই উৎসবটিকে ইলিশ উৎসব নাম দিয়ে ইলিশ রক্ষা বিষয়ে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আদলে আন্দোলন গড়ে তোলা যায় কি না। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ২০০৯ সালে সাহস করে তিনি শুরু করলেন ইলিশ উৎসব। মৎস্যজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তিনি এই উৎসবকে বছরের পর বছর আয়োজন করে ইলিশ রক্ষার আন্দোলনে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। আর সরকারও পর্যায়ক্রমে ইলিশ রক্ষার জন্যে বহুমাত্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ইলিশের উৎপাদন পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির এই সুফল যখন দেশবাসীকে আনন্দিত করছে, তখন চাঁদপুরবাসী তাদের মেঘনা ও পদ্মার সবচে' সুস্বাদু ইলিশ আর আগের মত পাচ্ছে না। যেটাকে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা সাধারণত 'লোকাল ইলিশ' বলে ডাকে। পরিযায়ী বৃত্তিতে অভ্যস্ত ইলিশ বঙ্গোপসাগর থেকে উজানের চাঁদপুরের মেঘনা ও পদ্মায় আসতে গিয়ে পথিমধ্যে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। ডুবোচরসহ নদীতে নাব্যতা সঙ্কট এবং পানিতে ক্রমবর্ধমান দূষণ হচ্ছে উক্ত প্রতিবন্ধকতা সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ইলিশ গবেষকসহ পর্যবেক্ষক ও অভিজ্ঞজনের নিকট আরো কিছু প্রতিবন্ধকতার বিষয়ও জানা থাকতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার থেকে এগার বারের মতো চতুরঙ্গের ইলিশ উৎসব শুরু হয়েছে চাঁদপুরে। এই উৎসবের প্রস্তুতি সভায় মৎস্যজীবী নেতাসহ অনেক বক্তাই 'লোকাল ইলিশে'র সঙ্কটকে চাঁদপুরের জন্যে অশুভ লক্ষণ হিসেবে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সেজন্যে ইলিশ গবেষক ও অভিজ্ঞজনদের পরামর্শ মোতাবেক সরকার যাতে চাঁদপুরে 'লোকাল ইলিশ' প্রপ্তিতে নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংসহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সে দাবিতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে ইলিশ উৎসবে কথা বলার জন্যে বক্তাদের উদ্দীপ্ত করতে উৎসব আয়োজকদের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাতে চাই।