একেবারে ভিন্ন এক পৃথিবীতে নভোচারীরা ফিরে এলেন

একেবারে ভিন্ন এক পৃথিবীতে নভোচারীরা ফিরে এলেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাওয়া তিনজন নভোচারী যে পৃথিবী ছেড়ে গিয়েছিলেন গত বছর , তারা ফিরে এসে দেখলেন, আমূল বদলে গেছে সেই পৃথিবী। রুশ নভোচারী ওলেগ স্ক্রাইপোচকা এবং মার্কিন নভোচারী জেসিকা মায়ার গত বছরের সেপ্টেম্বরে পৃথিবী ছেড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যান। তখনো পর্যন্ত কোভিড-নাইনটিন বলে কোন কিছুর অস্তিত্বই ছিল না। খবর বিবিসি বাংলার।

আরেক মার্কিন নভোচারী অ্যান্ড্রু মর্গান আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন তারও আগে জুলাই মাস থেকে। মহাকাশে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এরা তিনজন গতকাল পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। মিস্টার স্ক্রাইপোচকা এবং মিজ মায়ার সেখানে ছিলেন ২০৫ দিন। আর মিস্টার মর্গান মহাকাশে কাটান ২৭২ দিন। কিন্তু করোনাভাইরাস পৃথিবীতে ফিরে আসা এই মহাকাশচারীদের স্বাভাবিক রুটিনেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। মহাকাশে থাকা অবস্থায় এক ভিডিও কলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জেসিকা মায়ার। নীচের পৃথিবীতে এরকম কিছু একটা যে ঘটছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে সেটা একটা পরাবাস্তব ব্যাপার বলে মনে হয়। কারণ এখান থেকে পৃথিবীটা আগের মতোই অপূর্ব লাগে। কাজেই আমরা পৃথিবী ছেড়ে আসার পর সেখানে যে এত পরিবর্তন ঘটে গেছে সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের অফিশিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে অনেকগুলো টুইটে বর্ণনা করা হয়েছে কিভাবে শুক্রবার এই তিন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরে আসেন। যে সয়ুজ মহাকাশযানে তারা ফিরে আসছিলেন, সেটি তিনটি মডিউলে বিভক্ত হয়ে যায়। এরপর সেগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কাজাখাস্তানে তাদের ক্যাপসুলগুলো সফলভাবে অবতরণ করে।

মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এই অবতরণের একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। এতে দেখা যায় মাস্ক পরা রেসকিউ টিমের সদস্যরা এই নভোচারীদের কাছে যাচ্ছেন। ফিরে আসা নভোচারীরা যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার না হন, সেজন্যে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। যে সার্চ পার্টির সদস্যদের পাঠানো হয়েছিল নভোচারীদের সন্ধানে, তাদের করোনাভাইরাসের টেস্ট করা হয় তার আগে। কঠোর কোয়ারেনটিনেও রাখা হয় দীর্ঘ সময়।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সার্চ টিমের সদস্যরা নভোচারীদের উদ্ধার করে সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দরে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের বিমানে করে যার যার দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু কাজাখাস্তানে এখন করোনাভাইরাসের কারণে জরুরী অবস্থা জারি আছে। বেশিরভাগ বিমানবন্দর এখন বন্ধ। ফিরে আসা তিন নভোচারীর জায়গায় যে তিনজন নতুন নভোচারী পাঠানো হয়েছে তাদের বেলায়ও মাত্রাতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হয় যেন করোনাভাইরাস মহাকাশে ছড়িয়ে না পড়ে। এদের দুজন রুশ এবং একজন আমেরিকান। গত ৯ এপ্রিল এদের আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এর আগে তাদের দেড় মাস কঠোর কোয়ারেনটিনে রাখা হয়েছিল।

সাধারণত যখন মহাকাশ থেকে নভোচারীরা ফিরে আসেন, তখন তাদের কয়েক সপ্তাহ সময় ধরে একটি পুনর্বাসন কর্মসূচীর ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যেহেতু মহাকাশে তার ‘জিরো গ্রাভিটিতে’ অভ্যস্ত হয়ে যান, পৃথিবীতে ফিরে আবার গ্রাভিটি বা মহাকর্ষ বলে অভ্যস্ত হতে তাদের দেহের একটু সময় লাগে। কিন্তু এবার ফিরে আসা তিন নভোচারীর বেলায় ডাক্তারদের বাড়তি একটা দায়িত্ব পড়েছে। সেটি হলো, এদের করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করা। পৃথিবীতে ফিরে আসার আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র থেকে এক ভিডিও কলে জেসিকা মায়ার বলছিলেন, “সাত মাস পর পৃথিবীতে ফিরে এলেও পরিবার বা বন্ধুদের কাউকে যে আলিঙ্গন করতে পারবো না, সেটা খুব কঠিন হবে।”

জেসিকা মায়ার গত বছর মানুষের মহকাশ অভিযানে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেন আরেক নারী নভোচারী ক্রিস্টিনা কোচের সঙ্গে মিলে ‘স্পেস ওয়াক’ অর্থাৎ মহাকাশে হেঁটে। সেই প্রথম কেবল নারী নভোচারীদের দল এরকম ‘স্পেস ওয়াকে’ অংশ নিয়েছে।

জেসিকা মায়ার বলছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর পর পৃথিবীতে ফিরে এসেই হয়তো তারা এখন বেশি নিঃসঙ্গ বোধ করবেন। এখানে আমরা কত নতুন কিছুর অনুসন্ধান নিয়ে ব্যস্ত। কাজেই মহাকাশ কেন্দ্রেও আমরা অতটা নিঃসঙ্গ বোধ করি না। আমার তো মনে হয় এখানকার চেয়ে পৃথিবীতেই আমি বেশি নিঃসঙ্গ বোধ করবো।” আইএসএস বা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে ১৯৯৮ সাল হতে। এই মহাকাশ কেন্দ্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সী।