এখন চলছে কার ভাগে কম পড়ল যে এই নিয়ে আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রী

এখন চলছে কার ভাগে কম পড়ল যে এই নিয়ে আন্দোলন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে যারা আন্দোলন করে তাদের আন্দোলনের কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । তাদের সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘হয়তো প্রজেক্ট পাস হয়ে গেছে কিন্তু টাকাও ছাড় হয়নি। তার আগেই দুর্নীতির অভিযোগ এনে আন্দোলন কী কারণে? কার ভাগে কম পড়ল যে এই আন্দোলন? আর এভাবে অন্য ছেলেদের জীবন নষ্ট করার কি অধিকার আছে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে ঠিক আছে, যদি অভিযোগ থাকে বলুক, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু যেখানেই আমরা একজন ভিসি করলাম, তার বিরুদ্ধে আন্দোলন। এর সঙ্গে শিক্ষকরাও জড়িত, শিক্ষকরা ছাত্রদের ব্যবহার করছে। এটা কোন ধরনের কথা? এখানে কি কোন ডিসিপ্লিন থাকবে না। আইন প্রয়োগ হবে না। আর আমাদের কিছু কিছু আছে এটাকে উসকানো হয়। বিষয়গুলোও আপনাদের দেখা দরকার। আগে সেশনজট ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তো নেই। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কমে গেছে। শিক্ষার সে পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করেছিলাম। মনে হচ্ছে সেটাকে ধ্বংস করার একট চক্রান্ত। রহস্যটা কী?’

আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে অসুস্থ, অসচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি তো জানি না এ ধরনের কাজ যারা করবে, সঙ্গে সঙ্গে এক্সপেলড করে দেয়া উচিত ইউনিভার্সিটি থেকে। তারা কীসের জন্য এগুলো করবে? এভাবে দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এটা আমি বরদাস্ত করতে পারবো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারবে না। দুর্নীতি দুর্নীতি করে ক্লাসের সময় নষ্ট করবে, ক্লাস চলতে দেবে না, ইউনিভার্সিটি চলতে দেবে না। আন্দোলনের নামে ভিসির বাড়িতে আক্রমণ, অফিসে আক্রমণ, ভাঙচুর, নানা ধরনের.. এই যে এটাতো এক ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। ছাত্র-শিক্ষকরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেন ঘটাবে? তারা ক্লাস কেন বন্ধ করবে?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কত টাকা তারা খরচ করে তাদের পড়ার জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়। স্বায়ত্তশাসন তাদের আছে। স্বায়ত্তশাসন হলে তো তাদের নিজেদের অর্থের যোগান দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠান চালানোর কথা কিন্তু প্রতি বছর বাজেটে আমরা টাকা দেই। বাজেটে আমরা টাকা দেবো কিন্তু সেখানে সরকার কিছুই করতে পারবে না। দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ করে থাকবে। এটাতো হয় না।’

বুয়েটে আবরার হত্যার খুনিদের গ্রেফতারসহ সরকার পদক্ষেপ নেয়ার পরও সেই প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন অযৌক্তিক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বুয়েটে যে ঘটনা ঘটলো আবরার হত্যা, আমরা সঙ্গে সঙ্গে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছাত্ররা আন্দোলনের আগে, যখনই খবর এসেছে তখনই আমরা অ্যাকশন নিয়েছি। তারপরও তারা আন্দোলন নেমেছে। এখন তাহলে আন্দোলন কীসের জন্য? আমার সেখানে প্রশ্ন, দিনের পর দিন ক্লাস করতে দেবে না, নিজেরা ক্লাস করবে না। তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে কেন?’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খরচ আমরা করি। যখনই উন্নয়নের কোনো কাজ দেয়া হয়, যখনই প্রজেক্ট দেয়া হয় তখনই যেন এই আন্দোলন ঘণীভূত হয়ে ওঠে। কেন? যারা আন্দোলন করেন তাদের কি ভাগ-বাটোয়ারার ব্যাপার আছে নাকি? নাকি ভাগে কম পড়ছে? আমার প্রশ্ন সেখানেও আছে। আমি জানি খুব রূঢ় হচ্ছি। বাস্তবে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে এটা কেমন কথা।’

‘দেশটা কি চলছে না। দেশটা কি এগোচ্ছে না, দারিদ্র্য কি হ্রাস পায়নি? দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে, মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, এখন তো কারো বসে থাকার সুযোগ নেই,’ যোগ করেন তিনি।

গত ১ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর সাময়িকী কিশোর আলোর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যারা অনুষ্ঠান আয়োজন করে, তাদের একটা দায়িত্ব থাকে। রেসিডেন্সিয়ালে একটা ঘটনা ঘটলো। আয়োজকরা এটাকে এতটা নেগলেক্ট করেছে! বাচ্চাটা মারা গেছে, এরপরও ঘটনাটা চাপা দিয়ে অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছে।’

দুর্ঘটনার পর নিহত নাঈমুল আবরারকে কাছাকাছি কোনো হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালীতে নেয়ার ঘটনার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধানমন্ডিতে এত হাসপাতাল, তবুও মহাখালীতে নিয়ে গেল। প্রথম আলো এ ধরনের একটা ঘটনা কীভাবে ঘটায়? তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই? ছোট ছোট বাচ্চারা এখানে পড়াশোনা করছে। তাদের নিরাপত্তা না দেখা, এটাও তো গর্হিত অপরাধ। এটা তো বরদাস্ত করা যায় না।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

তথ্য সচিব আব্দুল মালেক এর সঞ্চালনায় আরও ছিলেন বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি (বিএফইউজে) মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও মহাসচিব সোহেল হায়দার চৌধুরী, বিটিভির মহাপরিচালক এসএম হারুনুর রশীদ, পিআইবির মহাপরিচালক জাফর আহমেদ প্রমুখ।