২৫০ দোকানের দু’মাসের ভাড়া মওকুফ সীতাকুণ্ডে!

২৫০ দোকানের দু’মাসের ভাড়া মওকুফ সীতাকুণ্ডে!

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি।।  

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বড়দারোগারহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা নিজ এলাকাকে করোনাভাইরাস মুক্ত রাখতে গিয়ে প্রায় দুই মাস নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছিলেন । আর সে কারণে এ সময় বন্ধ হয়ে যায় তাদের আয়-রোজগার। এতে সকলেই আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। অনেকেই আবার ভাড়া দেবার মতো সামর্থও হারিয়েছেন। আর তাই তাদের এ অবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে এই দুই মাসের দোকান ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন দোকান মালিকরা। শনিবার স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাজার কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

জানা যায়, সীতাকুণ্ডের উপজেলার অন্যতম একটি পুরোনো বাজার বড়দারোগারহাট। এখানে ছোট-বড় প্রায় ছয়শটি দোকান আছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত লকডাউন ঘোষণার পর অন্যান্য অঞ্চলের মতো এই বাজারও বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। তাতে অনেক ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী প্রবল আর্থিক সঙ্কটে পড়ে যান। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বড়দারোগার বাজারের ব্যবসায়ী ও বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম দোকান মালিকদের প্রস্তাব দেন সম্ভব হলে এই দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেবার জন্য।

শনিবার বিকাল ৪টায় এ নিয়ে সাইদুল ইসলামের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ, দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাজার কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী ফিরোজ, সাধারণ সম্পাদক রফিউজ্জামান রফিক, অর্থ সম্পাদক বুলবুল ধর, সঞ্জিত ধর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি সদস্য শাহাজাহান ও কামরুল সিরাজী।

বৈঠকে সাইদুল ইসলাম দোকান ভাড়া মওকুফের এই প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করলে তা বিশ্লেষণ করে সন্মত হন বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ ও দোকান মালিকরা। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

এ সংবাদ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে এ উদ্দ্যোগ প্রশংসার জোয়ারে ভাসতে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। বাজারের এক ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমি একটি ছোট্ট দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছি। ভাড়া ৩ হাজার টাকা। দোকান বন্ধ রেখে ভাড়া দেবার মতো অবস্থা নেই। আমার মতো সকল দোকানির একই অবস্থা। অনেকের ভাড়া ৫ হাজারেরও বেশি। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা সাইদুল ইসলাম ভাড়া মওকুফের জন্য যে উদ্দ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমরা কয়েকশ ব্যবসায়ী তার কাছে কৃতজ্ঞ।

এই ধরনের সিদ্ধান্ত একটি নজিরবিহীন মানবিক উদ্দ্যোগের উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, এ বাজারটিতে প্রায় ছয়শ দোকান আছে। এর মধ্যে মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে চালান এমন দোকানের সংখ্যাও আড়াইশ এর উপরে। লকডাউনে সবার ব্যবসা বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়া দোকানিদের প্রতি দোকান মালিকরা ভাড়া মওকুফে করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন বলে আমি মনে করেছি। সেজন্য ব্যবসায়ী নেতা বাজার কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী ফিরোজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং দোকান মালিকদের প্রতি এ বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছি আমি। একেবারে সুন্দর সোহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দোকান মালিকরাও এতে সন্মত হন। ফলে ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীরাও খুব খুশি। এ জন্য তিনিও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ দেন।

বড়দারোগারহাট বাজার কমিটির সভাপতি ফজলুল হক চৌধুরী ফিরোজ বলেন, আমরা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মালিকদের সাথে ভাড়া মওকুফের বিষয় নিয়ে বৈঠক করেছি। এই বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপনের পরই মালিকরা একেবারে হাসি মুখে এপ্রিল-মে দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করেছেন। ফলে ভাড়াটিয়া দোকানিরা ভীষণ খুশি হয়েছেন।