কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযােগ সীতাকুণ্ডের আল-আমানত সমিতির বিরুদ্ধে

কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযােগ সীতাকুণ্ডের আল-আমানত সমিতির বিরুদ্ধে
কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযােগ সীতাকুণ্ডের আল-আমানত সমিতির বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযােগ উঠেছে সীতাকুণ্ডের আল-আমানত সমবায় সমিতি নামে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে । সমিতির গ্রাহকরা আমানতের টাকা উদ্ধারে উপজেলা সমবায় অফিস, থানা পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযােগ দিয়েছেন। এতে মাসের পর মাস চলতে থাকলেও পাওনা টাকা উদ্ধার হচ্ছে না। অনেক গ্রাহক তাদের শেষ সম্বল সমিতিতে রেখে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

রত্না রানী দেবি নিজের স্বল্প আয় থেকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দুই মেয়ের বিয়ের জন্য জমিয়েছেন সীতাকুণ্ডের  আল আমানত বহুমুখী সমবায় সমিতিতে। গত দশ বছরে এভাবে নিজের কষ্টার্জিত টাকা জমিয়ে এখন ঘুরছেন উপজেলার দপ্তরে দপ্তরে। রত্নার মতাে এমন অসংখ্য নারী-পুরুষ এই সমিতির প্রতারনার স্বীকার।

জানা যায়, প্রায় এক হাজার ৭শত গ্রাহক তাদের এককালীন, মাসিক ও বাৎসরিকসহ বিভিন্ন মেয়াদে টাকা আমানত রাখেন। কেউ কেউ এককালীন টাকা জমা রাখেন ৫ থেকে ১০ বছর পর দ্বিগুণ অঙ্কের টাকার লােভে। আবার কেউ ঋণ নিয়েছেন চওড়া সুদে। এভাবেই চলছিলাে রমরমা সুদের ব্যবসা। এক শ্রেণির মানুষ থেকে অল্প সুদে ঋণ নিয়ে চওড়া সুদে অর্থ লগিয়ত করেছেন এই সংগঠনটি।

সানারা বেগম নামের এক ভূক্তভােগীর অঙ্গীকার নামায় দেখা যায় ৫বছর মেয়াদী শর্তসাপেক্ষ এক লক্ষ টাকা জমা রাখার বিপরীতে ৫ বছর পর দিগুণ টাকা প্রদানের বাধ্য থাকিবে সংগঠন এই মর্মে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরিত হয় । কিন্তু ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ হলেও এখন মুনাফা তাে দূরের কথা তার আসল টাকাও পায়নি। এখন কোথায় যাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। প্রতিদিন নতুন নতুন ভুক্তভােগী দেখা যায় উপজেলা সমবায় দপ্তরে। অনেকে নিজের কষ্টে অর্জিত টাকা জন্য কাঁদতেও দেখা যায়। এসময় একে একে অভিযােগের উঠে সেই সংগঠনের বিরুদ্ধে।

একেক জনের টাকার অঙ্ক শুনে চোখ ছানাবড়া মতো অবস্থা। মামুনুর রশিদের এককালীন প্রদান ৩ লক্ষ টাকা, সকিনা বেগম তার দুই মেয়ের নামে রেখেছেন ৫০ হাজার করে ১ লক্ষ টাকা, সালমা দুই একাউন্টে ১ লক্ষ করে মােট ২ লক্ষ টাকাসহ প্রায় ৭ কোটি টাকা।

মূলতঃ মাে. মূসা মিয়া নামের এক ব্যক্তি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন সীতাকুণ্ড আল-আমানত বহুমুখী সমবায় সমিতি । পরে ২০০৫ সালে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তর থেকে এটি নিবন্ধন নেন। যার নিবন্ধন নম্বর ৮৩০৯। মাে, মুসা মিয়া ২০১৭ সালে হঠাৎ মারা যাওয়া পর তার স্ত্রী রুবি ইয়াসমিন এটা দায়িত্ব নেন। ২০২০ সালে আত্মহত্যা চেষ্টার পর হাসপাতালের ১৫ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার নাবালক দুই পুত্র সন্তান আরাফাত ও পিনাস কে নমিনি করে নিজের নামে একাউন্ট করে রেখেছেন সংগঠনের টাকা। যা তিনি গঠনতন্ত্র অনুসারে করতে পারেন না। যার ফলে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে বেধেছে আইনি জটিলতা।

উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরে সূত্র মতে গ্রাহকের মােট ৬ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা পাওনা হলেও পূবালী ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক ও এবি ব্যাংকে হিসাবে আছে মাত্র ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।

এমতাবস্থায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়। সংগঠনটির অস্থায়ী অফিস সীতাকুণ্ড পৌরসভার সামনে জে আর টাওয়ারে দুতলায় ২ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজায় ঝুলছে তালা। পাশ্ববর্তী ভাড়াটিয়ার ভাষ্য মতে মাঝে মাঝে সকাল সন্ধ্যায় এসে দরজা বন্ধ করে অফিস করলেও এখন একেবারেই বন্ধ। এদিকে বর্তমানে সংগঠনের দায়িত্বে থাকা আরাফাত ও মাঠ কর্মীরা দিয়েছে গাঁ ঢাকা।

এবিষয়ে সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি মােহাম্মদ আরাফাত (১৬) বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই পাওনা টাকা পরিশােধের ব্যবস্থা করছি। ব্যাংক হতে প্রাপ্ত অর্থ পেলে পরিশােধ করবাে। তৰে ঘাটতি টাকা কিভাবে পরিশােধ করা হবে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতি পারেননি। তিনি অভিযােগ করে বলেন আমার মা বাবা মৃত্যুর পর দায়িত্বে থাকা মাঠ কর্মীরা ফারভীন ও রােকেয়া প্রতিষ্ঠানের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তারা কোন হিসাব দিতে পারছে না। হিসাব চাইলে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকে। পরে আমি গ্রাহকের চাপে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের সহায়তা নিতে বাধ্য হই এবং তিনি বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছেন।

এবিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ইতিমধ্যে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি তাদের ব্যাংক একাউন্টে যে টাকা পাওয়া যাবে তা দিয়ে কিছু গ্রাহককে বুঝিয়ে দিবাে বাকি গুলাে তার ব্যাক্তিগত ভাবে পরিশােধ করবে জানিয়েছে। গ্রাহকের টাকা পরিশােধে একটি কমিটি করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে পাওয়া মাত্র তা গ্রাহকদের বন্টন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হােসেন এবিষয়ে বলেন, সমিতির দেনা পাওনা হিসাব করা হচ্ছে। মৃত মুছা মিয়া গ্রাহকের টাকা সমিতির নামে ব্যাংকে না রেখে ত্যর মৃত স্ত্রীর নামের অ্যাকিাউন্টে রাখেন। তার স্ত্রীও মারা যাওয়াতে টাকাগুলো পেতে আদালতের আদেশ প্রয়ােজন। এ নিয়ে প্রসেসিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। এদিক থেকে যা টাকা পাওয়া যাবে আনুপাতিক হারে পাওনাদারদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে। এছাড়া মাঠকর্মীসহ যাদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে তা আদায়ের জন্য ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;