করোনা পরীক্ষার চাপে চট্টগ্রামের একমাত্র হাসপাতাল বেসামাল , এখনই দরকার আরো ল্যাব 

করোনা পরীক্ষার চাপে চট্টগ্রামের একমাত্র হাসপাতাল বেসামাল , এখনই দরকার আরো ল্যাব 

আবু রায়হান তানিন।।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাটে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) পরীক্ষাগারে গত কয়েকদিন ধরে তাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি করোনা ভাইরাস শনাক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর পরও অভিযোগ আসছে অনেকেই সিনড্রোম নিয়ে যোগাযোগ করে সাড়া পাচ্ছেন না। এই অভিযোগ স্বীকার না করলেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন একটি ল্যাব দিয়ে যতটুকু করা যেতো তার সবটুকু চেষ্টাই তারা করছেন। টেস্টের পরিমাণ বাড়াতে নতুন ল্যাবের দাবি রেখেছেন তারা। অন্যদিকে নতুন আরও একটি ল্যাবে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু করার চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকার কথা জানাচ্ছেন দায়িত্বশীলরা। বলছেন ভাবনায় আছে আরও অন্তত তিনটি ল্যাব। তবে সব কিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর।

বুধবার (৮ এপ্রিল) করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য ১৩০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে এর মধ্যে ১০৪টি নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হয় বিআইটিআইডির পক্ষে। যা তাদের সক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। এদিকে ৯ এপ্রিলও শতাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এর সবগুলোর ফলাফল দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানিয়েছিলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বী। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে ৭৩টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানাতে পেরেছে বিআইটিআইডি। শনিবার (১১ এপ্রিল) অবশ্য একটু কমে মোট ৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রথম দিকে কম হলেও গত এক সপ্তাহে প্রতিদিন তাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা করেছে বিআইটিআইডি।

এর আগে এক আলাপে বিআইটিআইডির ল্যাব প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ  জানিয়েছিলেন, ‘দিনে ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে তার টিমের। সক্ষমতার চেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করেও সন্তুষ্ট নয় বিআইটিআইডি। তারা বলছে এই পর্যায়ে এসে করোনা ভাইরাস টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত। এজন্য আরও কিছু ল্যাবে টেস্টের কাজ শুরু করা উচিত কর্তৃপক্ষের।’

এদিকে স্থানীয় পর্যায় থেকে অনেকেই বলছেন বিআইটিআইডি হটলাইনে নমুনা পরীক্ষার জন্য যোগাযোগ করেও সাড়া মিলছে না। এই বিষয়ে জানতে চাইলে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা বিআইটিআইডির মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা কিছু ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করে নমুনা সংগ্রহ করছি। কিছু সীমাবদ্ধতা তো আছেই। তবে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছি। আমাদের সক্ষমতার চেয়ে বেশি নমুনা পরীক্ষা করছি। কিন্তু এই টেস্ট যথেষ্ট এটা বলা যাবে না। টেস্টের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। আর এজন্য আমাদের আরও বিকল্প ল্যাবের কথা ভাবা উচিত।’

করোনার টেস্ট বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত মন্তব্য করে ডা. মামুন বলেন, ‘এই রোগের তো কোন চিকিৎসা নেই। আমাদের এই রোগ ছড়ানো প্রতিরোধ করার দিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। সেক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস সংক্রমিতদের শনাক্ত করে তাদের আইসোলেটেড করে রাখাটাই সবচেয়ে বড় সমাধান। এক্ষেত্রে আমরা যত বেশি টেস্ট করতে পারবো তত বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবো।’

বিআইটিআইডির পাশাপাশি চট্টগ্রামের আরও বেশ কিছু ল্যাবের সক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চমেকের (চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) ল্যাবে পরীক্ষা শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। আরও কিছু ল্যাব আছে যেমন সিভাসুর ল্যাব আছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব আছে এগুলোও ব্যবহার করা যায়।’

করোনা টেস্টের ল্যাব বাড়ানোর বিষয়ে কী ভাবছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবিরের সাথে। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষা শুরু করার জন্য কাজ করছি আমরা। খুব শীঘ্রই এটি শুরু হবে। তবে এটি চমেক কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবে। এছাড়া আরও ২-৩ টি ল্যাবেও টেস্ট শুরু করার বিষয়ে আলোচনা আছে। তবে এসব বিষয়ে আমরা কথা বলবো চমেকে টেস্ট শুরুর পর।’

জানা গেছে, কাল-পরশুর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর মেশিন এসে পৌঁছাবে। এর পরই টেকনোলোজিস্টদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষার ট্রেনিং দেওয়া হবে। এই ট্রেনিং কোথাও দেয়া হবে— এই প্রশ্নের জবাবে ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, পিসিআর আসার পর সেটা সিদ্ধান্ত হবে। উনারা চাইলে চট্টগ্রামেই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যাবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘মেশিন এখনও আসেনি। মেশিন আসার দুই দিনের মধ্যেই আমরা টেস্ট শুরু করতে পারবো।’

চমেকের ল্যাবের সক্ষমতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেশিন তো এখনো আসেনি। আসার পর এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যাবে।’