কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ' চিনাল' এর নতুন জাত উদ্ভাবন, পাওয়া যাবে বারোমাস

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ' চিনাল' এর নতুন জাত উদ্ভাবন, পাওয়া যাবে বারোমাস

দেখতে অনেকেটাই বাঙ্গির মতো কিন্তু ফলটির ইংরেজি নাম হানিডিউ। যদিও দেশে এটিকে আমরা ‘চিনাল’ নামে চিনি। কাঁচা থাকলে এটি সবজি হিসেবে শসার মতো রান্না করে খাওয়া যায়। আর পাকলে খাওয়া যায় সরাসরি। দু’ভাবেই খাওয়া যায় বলে বারোমাসি ‘হানিডিউ’-কে কেউ বলেন ফল আবার কেউ বলেন সবজি।

দেশের তিন পার্বত্য জেলাসহ বিশ্বের বহুদেশে সুস্বাদু এই ফলের কদর রয়েছে। আগে এই সবজির আবাদ শুধুমাত্র পাহাড়ের ঢালুতে হত। এই প্রথমবারের মত সমতল ভূমিতেও বৈজ্ঞানিক উপায়ে সবজিটির চাষ করে সফল হয়েছে চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।

কেন্দ্রটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনুর রশিদ এ জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। যার নাম দেওয়া হয়েছে বারি চিনাল-১। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উৎসাহ যুগিয়েছেন তিনি।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক থেকে দেড় হাতের ছোট ছোট মাচা বানিয়ে চিনাল ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছেই ৫ থেকে ৬টি করে চিনাল ঝুলে আছে। ফলটি দেখতে বড় আকারের গোলাকার ও আকর্ষণীয়।

এ কৃষি কর্মকর্তারা জানান, কাঁচা অবস্থায় খেতে এটি অনেকটা শসার মতো। তবে স্বাদ আলাদা। আর পাকা চিনাল লাল, সবুজ, কমলা ও হলুদ- এ চার রঙের হয়ে থাকে। পাকা ফল বেশ সুগন্ধ এবং খেতে হালকা মিষ্টি। সবজি ও সালাদ হিসেবে খাওয়া যাবে আঁশবিহীন এই ফল। চিনালে চিনির পরিমাণ সহনীয় থাকায় ডায়াবেটিস রোগীরা নির্দ্বিধায় এটি খেতে পারেন। এতে ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুনুরু রশিদ বলেন, ‘মূলত পাহাড়ি ফল হিসেবেই লোকে এটাকে চিনে থাকেন। জুম চাষীরাই এটি চাষ করেন। তবে এই প্রথম সমতল ভূমিতে চাষ করে সফল হয়েছি। চাইলে যে কেউই পতিত কিংবা খালি জায়গায় এ বীজ রোপণ করতে পারেন। স্বল্প খরচের মধ্যে চাষীরা এটি চাষ করে লাভবান হতে পারেন। এছাড়া এটি পাকা অবস্থায় তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব। বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করে আমাদের দেশে চিনাল ফলটি কেজিপ্রতি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারলে ভবিষ্যতে এ ফলটি রপ্তানিও করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ‘হানিডিউ’ বাংলাদেশে বহুল চাষাবাদকৃত বাঙ্গির একটি বিশেষায়িত প্রজাতি। বাঙ্গির সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে- এটি পাকা অবস্থায় ফেটে যায় না। তাছাড়া এই ফসল চারা গজানোর দেড় মাসের মধ্যেই কাঁচা সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। দুই থেকে আড়াইমাসের মধ্যে পাকা ফল হিসেবে খাওয়ার উপযোগী হয়। এই ফসল আলোক নিরপেক্ষ হওয়ায় সারাবছর চাষ করা যায়। এটা লতানো থাকায় বেয়ে উঠার জন্য অবলম্বনের প্রয়োজন হয়। তবে বিজ থেকে চারা গজানোর পরপরই শাখা প্রশাখা বিস্তার করায় খাটো মাচায় ভাল হয়।