চট্টগ্রাম নগরীরর ৭৭টি গণকবর এখনো অরক্ষিত, সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

চট্টগ্রাম নগরীরর ৭৭টি গণকবর এখনো অরক্ষিত, সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই
চট্টগ্রাম নগরীরর ৭৭টি গণকবর এখনো অরক্ষিত!

নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ।।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীদের ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা চালায়। হত্যার পর পাকিস্তানীরা স্বজনদের কাছে মরদেহ ফেরত না দিয়ে মাটিতে পুতে প্রায় ১৫/ ২০ হাজার মানুষকে গণকবর দেয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে নগরীর বিভিন্ন এলাকার শহীদ পরিবারগুলোর স্বজনেরা এখনো আত্মীয় স্বজনের লাশের সন্ধানে প্রহর গুনছে।

নগরীতে প্রাথমিকভাবে ৭৭ টি বধ্যভূমি চিহ্নিত হলেও এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই। বধ্যভূমিগুলো চরম অবহেলায় ও অযত্নে বেদখল হয়ে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭৭টি বধ্যভূমির মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৬১টি বধ্যভূমির তালিকা করলেও নগরীতে প্রায় একশর মত বধ্যভূমি রয়েছে। এরমধ্যে স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে মাত্র দুটির ।

স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হলেও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষন না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দ্রুত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায় নগরীর ৬১টি বধ্যভূমির মধ্যে পাহাড়তলীতে ১৫টি, লালখান বাজারে ৬, হালিশহরে ৫, গোসাইলডাঙ্গায় ৫, আন্দরকিল্লা-৪, বাকলিয়ায় ৩, রহমতগঞ্জে ২, কাট্টলীতে ২, পতেঙ্গায় ২, বন্দর এলাকায় ২, কাটগড়ে ২, মুরাদপুরে ২, নাসিরাবাদে ২, মাদারবাড়িতে ২, পাঁচলাইশে ২টি এবং চন্দনপুরা, জয়পাহাড়, চান্দগাঁও, ষোলোশহর, রামপুরা, পূর্ব পাহাড়তলী ও হালিশহর মধ্যম নাথপাড়া এলাকায় বধ্যভূমি হিসেবে ৭৭টি গণকবরের স্থান বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে  মহামায়া ডালিম  হাটেল বধ্যভূমি, গুডসহিল বধ্যভূমি, পশ্চিম পাহাড়তলী বধ্যভূমি, দক্ষিণ বাকলিয়া মোজাহের উলুম মাদরাসা বধ্যভূমি, চাক্তাই খালপাড় বধ্যভূমি, চামড়ার গুদাম চাক্তাই খাল পাড় বধ্যভূমি, আন্দরকিল্লা তুলশি ধাম সেবায়েত মন্দির বধ্যভূমি, হাইওয়ে প্লাজা ভবন বধ্যভূমি, বাটালী পাহাড়ের রেলওয়ে বাংলো বধ্যভূমি, পাঁচলাইশ সড়কের আল বদর বাহিনী ক্যাম্প বধ্যভূমি, চট্টগ্রাম জেনারেল পোস্ট অফিস বধ্যভূমি, সিআরবি নির্যাতন কেন্দ্র বধ্যভূমি, চন্দনপুরা রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি, সার্কিট হাউজ বধ্যভূমি, বন্দর আর্মি ক্যাম্প বধ্যভূমি, রেলওয়ে ওয়ার্কশপ বধ্যভূমি, প্রবর্তক সংঘের পাহাড় বধ্যভূমি, সদরঘাট রাজাকার ক্যাম্প বধ্যভূমি ও ঝাউতলা বিহারী কলোনি বধ্যভূমি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতুত্বে গঠিত সরকারের মন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে শহীদ সাইফুদ্দিন খালেদ চৌধুরীকে লালখান বাজার বাসা থেকে তুলে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল রাউজান পাহাড়তলী নির্জন পাহাড়ে নির্মমভাবে খুন করেন, লালখান বাজার এলকার বধ্যভূমিগুলো এবং পাহাড়তলীর বধ্যভূমি সংরক্ষনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গেও চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন চৌধুরী।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মতিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকায় অসংখ্যা বধ্যভূমি রয়েছে। বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়ে আসলেও প্রশাসনের অবহেলায় তালিকাগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি, নগরীতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ২০ হাজার মানুষের গণকবর রয়েছে। এগুলো সংরক্ষন করা না হলে এক সময়ে হারিয়ে যাবে স্মৃতিচিহ্ন, দ্রুত সংরক্ষনের দাবি জানান।

এ বিষয়ে  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর আবিদা আজাদ জানান, পাহাড়তলীর বধ্যভূমিগুলো অধিকাংশ বেদখল হয়ে গেছে, আমরা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দখলমুক্ত করে ঘিরা বেড়া দিলেও একটি চক্র আবার দখলে নিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনের বধ্যভূমিতে স্মৃতিচিহ্ন নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এছাড়া নগরীর মুুক্তিযুদ্ধের সময় গণকবরের স্থান (বধ্যভূমি) গুলো সংরক্ষন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক আলহাজ্ব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম সুজন ।