চাঁদপুরের ঐতিহাসিক রূপসা জমিদারবাড়ি

চাঁদপুরের ঐতিহাসিক  রূপসা জমিদারবাড়ি
চাঁদপুরের ঐতিহাসিক রূপসা জমিদারবাড়ি

শরীফুল ইসলাম, চাঁদপুর।।

চাঁদপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরের পাশে রূপসা বাজারের পশ্চিম দক্ষিণ কোণে নজর দিলেই চোখে পড়বে জমিদারবাড়ি। পাশেই কারুকার্জ খচিত একটি মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণ পাশে একটি কবরস্থান। এর প্রতিটি ফলকে লেখা রয়েছে চিরনিদ্রায় শায়িত ব্যক্তিদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। পথ ধরে সামনে এগোলেই চোখে পড়বে ঘাট বাঁধানো দিঘি।

তবে আগের সে দিঘি এখন আর নেই। সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পথে রয়েছে জমিদারবাড়ির পুরো পরিবেশ। বাড়িটির সামনে তাকালে নজরে পড়বে জমিদারবাড়ির ঐতিহ্য সেই কাছারি ঘর। প্রায় দুই শতাব্দী আগের কথা। আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে রূপসার জমিদারদের গোড়াপত্তন। গ্রামের নাম রূপসা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুদীর্ঘ ঐতিহ্যই এ রূপের অহঙ্কার। যখন এ অঞ্চলের বেশিরভাগ জনপদগুলো উন্নত সভ্যতার আলো দেখেনি।

চাঁদপুর জেলার সুপ্রাচীন জনপদ ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রাম তখনও সমৃদ্ধ ছিল। সমৃদ্ধিশালী এ গ্রামটির গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত আছে এ গ্রামের ঐতিহাসিক জমিদারবাড়ি। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে মোহাম্মদ গাজী এ জমিদারবাড়ির পরিবারের মধ্যে পত্তন করেন। সাধারণভাবে জমিদার বলতে সাধারণ মানুষের মনে যে জমিদারের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে সে রকম জমিদার ছিলেন না আহমেদ গাজী। তিনি মানুষের পাশে সব সময় ন্যস্ত ছিলেন।

জনকল্যাণ কাজের জন্য তিনি কৃষকদের জমি ওয়াকফ করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি আমূল কাজ করেছেন। তার মধ্যে রূপসা আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রূপসা আহম্মদিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, রূপসা স্কুল উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মানুরাগী। ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে তিনি অকৃপণভাবে অনুদান দিতেন। রূপসার সুপ্রাচীন মসজিদ তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়াও তার জীবদ্দশায় তিনি আরও অনেক মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।

জমিদারবাড়ির ভেতরের অংশ ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির অভ্যন্তরে আজও বসবাস করছে ওই সময়ে জমিদারদের কর্মচারী হিসেবে থাকা পাইক-পেয়াদা, সৈনিকদের প্রায় ৪০টি পরিবার। আবার তাদের অনেকেই সেখানে জায়গা কিনে বসতবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। নানা কারণে জমিদারবাড়ির অনেক সম্পত্তির মালিকও এখন তাদের প্রজা ও কর্মচারীরা।

ঐতিহাসিক স্থান চাঁদপুরের রূপসা জমিদারবাড়িতে সে জমিদারদের খাজনা আদায়ে অত্যাচার নির্যাতনের কোনো ভয়ঙ্কর স্মৃতি চিহ্ন নেই। তাইতো আজও সাধারণ মানুষের কাছে অনেক স্মরণীয় আর ভালোবাসার স্থান হিসেবে রয়ে গেছে রূপসা জমিদারবাড়ি। জমিদারের জমিদারি না থাকলেও এতটুটু সম্মান আর শ্রদ্ধার কোনো ঘাটতি হয়নি প্রজাপ্রিয় জমিদারদের প্রতি সাধারণ মানুষের।

তাইতো এ এলাকার সাধারণ মানুষ আজও জমিদারদের পুণ্যময় কাজগুলোর প্রশংসা করতে ভোলেন না। জমিদারি প্রথা থাকাকালীন প্রজাদের খাজনার টাকায় ভোগ-বিলাস না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অনেক কিছুই স্থাপন করে গেছেন জমিদাররা।

স্থানীয় বাসিন্দা শামিম আহমদ বলেন, চাঁদপুরে প্রাচীন ঐতিহ্যের মধ্যে রূপসা জমিদারবাড়ি অন্যতম। এখানে প্রতিদিন শতশত পর্যটক বেড়াতে আসেন। শুধু তাই নয়, দেশের বাইরে থেকেও বিদেশি পর্যটকরা এখানে ঘুরতে আসেন।

ঘুরতে আসা সম্রাট ও আফসানা বলেন, আমরা ফরিদগঞ্জের রূপসা জমিদারবাড়ির কথা অনেক শুনেছি। তা ছাড়া ফেসবুক ও ইউটিউবে এটার ভিডিও দেখেছি। এখন সরাসরি এসে খুবই ভালো লাগছে। এখানকার পরিবেশ খুব সুন্দর।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান সময়ের আলোকে বলেন, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মানুষ ঘুরতে আসেন। পর্যটকদের সার্বিক সুযোগ-সুবিধার জন্য উপজেলা পরিষদ প্রস্তুত রয়েছে।