জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণায় দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণায় দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণায় দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

দেশের অনেক বরেণ্য চিকিৎসক ছাত্রজীবন এবং পেশাগত জীবনে বিভিন্ন সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে এসেছিলেন । বয়সের ভারে অনেক স্মৃতি মলিন হয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাটানো বিভিন্ন মুহূর্তের কথা ভোলেননি বয়োজ্যেষ্ঠ এই চিকিৎসকরা।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত এক স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে দেশের একাধিক প্রথিতযশা চিকিৎসক বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন। ছাত্রজীবনে ফিরে গিয়ে প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক এস আলী আশরাফ বলেন, ১৯৪৪ সালে আমি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হই। অর্থের অভাব ছিল, খাদ্যের সঙ্কট ছিল। ভর্তি হওয়ার পর একদিন এক যুবক আমাকে বলল, কোথা থেকে এসেছ? তোমাদের সবাই কেমন আছে? আরও কিছু কথা হলো। ওই যুবক চলে যাওয়ার পর এক বন্ধু আমাকে বললেন, শেখ সাহেব কী বলে গেলেন? আমি প্রশ্ন করলাম, কোন শেখ সাহেব? বন্ধু জানালো, এতক্ষণ যার সঙ্গে কথা বলছিলি তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। আমি তখন হতভম্ব হয়ে গেলাম। আর চিন্তা করতে থাকলাম আগে ওনাকে চিনতে পারলে তো আমাদের সমস্যার কথা ভালো করে বলতে পারতাম। এরপর আমাদের হোস্টেলের রেশন ফুরিয়ে গেলে একদিন রোববার আমরা তার কাছে গেলাম। তিনি তখন বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। আমরা যখন যাই, তখন শেখ সাহেব বাইরে যাচ্ছিলেন। আমাদের দেখে তিনি চিনলেন এবং প্রশ্ন করলেন কেন আসছ? রেশন ফুরিয়ে যাওয়ার কথা জানালে তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের বাসায় গেলেন। আমাদের বাইরে রেখে ভেতরে ঢুকলেন। প্রায় আধঘণ্টা পর তিনি ৩টা স্লিপ নিয়ে বেরিয়ে এলেন। একটাতে আমাদের চাল, আটা, তেল। আর একটাতে কাপড়। আর একটাতে কী যেন ছিল। স্লিপগুলো দিয়ে তিনি বললেন, রোববার দেখে তোমরা আর আসবে না।

৯৬ বছর বয়সী এস আলী আশরাফ তার শিক্ষাজীবনে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্মরণ করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার একটি স্মৃতিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার জ্বর, ইনফেকশন হয়েছিল। আমার ডাক পড়ল। গিয়ে দেখলাম তিনি খুবই বিমর্ষ। হিস্টোরি নেয়ার পর জানলাম, রক্তহীনতার কারণে ওনার কোমরে আয়রন ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইনজেকশনের পাশ দিয়ে বড় বড় ফোঁড়া হয়েছে। আমি তাকে বললাম- বেগম সাহেব, ফোঁড়াগুলো কেটে পুঁজ বের করে দিতে হবে। এ কথা শুনে উনি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন- বঙ্গবন্ধু না এলে আমি কোনো কিছুই করব না।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও স্মৃতিচারণ করেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক, অধ্যাপক এ এইচ এম টি এ চৌধুরী, অধ্যাপক এ কে আজাদ খান এবং অধ্যাপক মাহমুদ হাসান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

এসময় ডা. আব্দুল মালিক বলেন, একদিন আমি আর নূরুল ইসলাম (প্রখ্যাত চিকিৎসক) বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বঙ্গভবনে গেলাম। আমরা যখন যাই, তখন তিনি অনেক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। আমরা এসেছি শুনে তিনি সবাইকে চলে যেতে বললেন এবং আমাদের ডেকে নিলেন। আমি বললাম বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে তো পরেও ডাকতে পারতেন। উনি বললেন, না ডাক্তার সাহেব। আপনাদের সময় অনেক মূল্যবান। আপনাদের জন্য রোগী বসে থাকেন। সেখান থেকে বুঝলাম রোগীর প্রতি ওনার কতো দরদ, বলেন এই জাতীয় অধ্যাপক। তিনি আরও বলেন, কোনো জাতি ততক্ষণ উন্নতি করতে পারে না, যতক্ষণ না সে শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাবে। আমাদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করতে হলে মানবিক, সৎ, পরিশ্রমী, বিনয়ী, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ হল বারডেম হাসপাতাল। এটিও বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠিত। বারডেম হাসপাতালের প্রজেক্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে তিনি বললেন, আপনি পশ্চিম পাকিস্তানকে রাখেননি, আপনার প্রজেক্ট পাশ হবে কীভাবে। এরপর তিনি আমাকে বললেন, আপনার প্রজেক্ট রেডি রাখেন, আমি ভিক্ষা করে হলেও আপনার প্রজেক্ট করে দেব। এই হলেন বঙ্গবন্ধু।

এ কে আজাদ খান আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার অত্যন্ত সংবেদশীল ছিলেন। একবার আমি বঙ্গবন্ধুর চিকিৎসার জন্য ওনার বাসায় যাই। বঙ্গবন্ধুর জ্বর ছিল। আমি তার বাসায় থেকে যাই। বেগম সাহেব (ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) নিজ হাতে আমার বিছানা করে দিয়েছিলেন।

এসময় চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) বঙ্গবন্ধুর সময়েই প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি কার্ডিও ফিজিওলজি ল্যাব প্রতিষ্ঠার কথা বলে ছিলেন। থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা তিনিই নিয়েছিলেন।