জাতীয় উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের গুরুত্ব - মিল্টন রায়

জাতীয় উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের গুরুত্ব - মিল্টন রায়
জাতীয় উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের গুরুত্ব - মিল্টন রায়

মিল্টন রায় ।।

সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা । সময়ের বিবর্তনে অনেক পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার মান উন্নয়নে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে নতুন নতুন পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে স্থানীয় চাহিদা ও বৈশ্বিক চাহিদা। উন্নত বিশ্বে প্রতিটি নাগরিক তাদের সন্তানদের জ্ঞানার্জনের মাত্রা, প্রায়োগিক দিক ও ভবিষ্যতের চিন্তাধারাকে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে কিনা তা বিচার বিশ্লেষণ করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রশাসন, শিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট এবং শিক্ষকদেরই দায়িত্ব হয়ে যায় অভিভাবকদের সচেতন করার। তাই উন্নত বিশ্বের শিক্ষকবৃন্দের তুলনায় আমাদের দেশের শিক্ষা বিভাগ এবং শিক্ষকবৃন্দের রয়েছে অনেক অতিরিক্ত দায়িত্ব। এই অতিরিক্ত দায়িত্বগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- হোম ভিজিট, মা-সমাবেশ, শিক্ষক-অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক, শিশু জরিপ, উপবৃত্তি কার্যক্রম, মিড ডে মিল চালুকরণ, খেলাধুলা ও বিনোদন ব্যবস্থা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকের রয়েছে বহুবিধ কাজ। প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দের জন্য কষ্টকর হলেও এই যাবতীয় কার্যক্রম তাঁরা যথাসাধ্যভাবে সম্পাদন করে যাচ্ছেন। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ এবং ঝরে পড়ার হারও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মুখী করা এবং ঝরে পড়া রোধে অনেক সফলতা অর্জন করেছি। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংস্কার কর্মসূচির জন্য সরকারি অনুদান স্লিপ এবং অন্যান্য বরাদ্দের মাধ্যমে বিদ্যালয় ভবনের সংস্কার, শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণ, বাগান করা, খেলনা সামগ্রী ক্রয় এবং নানাবিধ উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, চলছে শিক্ষকগণের জ্ঞান ও পেশাগত উন্নয়নে নানাবিধ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।
শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকবৃন্দের প্রশিক্ষণ লাভের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এখন সময় এসেছে এতগুলো আয়োজন শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন কতটুকু হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার। শিক্ষকগণতো নিরলস পরিশ্রম করছেন, পরিশ্রম করছেন শিক্ষা ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সকলেই। তবে এক্ষেত্রে মূল কাজটি শিক্ষকের। গৃহীত নীতিমালার মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করানো এবং তা পরিমাপ তথা মূল্যায়ন করার কাজটি তাদেরই। এজন্য শিক্ষকের যেমনি প্রয়োজন বিষয়জ্ঞান, প্রশিক্ষণ, তেমনি প্রয়োজন প্রস্তুতির সময় ও গবেষণার। কারণ প্রাথমিক শিক্ষকদের কাজ শিশুদের নিয়ে। শিশুর সুকুমার বৃত্তির বিকাশের জন্য শিক্ষককে শিশু মনোবিজ্ঞান থেকে শুরু করে অনেক কিছুই মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪.৩০ পর্যন্ত পাঠদান, পাশাপাশি উপবৃত্তির তালিকা তৈরি, রেজিস্টার তৈরি, জরিপ, ভোটার তালিকা তৈরি, হালানাগাদ এসব কাজ ও শিক্ষককে সম্পাদন করতে হয়। তাই শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে শিক্ষকের গুণগত মানোন্নয়ন, সুযোগ, সময় ও পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবিদার। শিক্ষকগণের প্রতি আবেদন হলো আন্তরিকভাবে কাজ করুন এবং পেশাগত উন্নয়নে সচেষ্ট হোন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান একটি টিম হিসেবে কাজ করুন। সহকর্মীদের মধ্যে একে অন্যের প্রতি সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে আত্মোন্নয়নে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন, তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি খেয়াল রেখে তার সর্বোত্তম বিকাশে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়াই শিক্ষকের মূল দায়িত্ব। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলে আন্তরিক হলে আমাদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত গুণগতমান অর্জিত হবে বলে বিশ্বাস করি।

লেখক
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম