জানাজার নামাজের পূর্ণ নিয়ম-কানুন

জানাজার নামাজের পূর্ণ নিয়ম-কানুন

আমিন ইকবাল ।।

কোনো মুসলিম ব্যক্তি মারা গেলে ওই এলাকার অন্যান্য মুসলিম পুরুষদের কর্তব্য হলো মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ আদায় করা। জানাজার নামাজ পড়ার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। তার পরকালীন মুক্তি কামনা করা। অন্যের জানাজায় উপস্থিত হলে নিজের মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়। স্মরণ হয় পরকালের কথা। এতে করে পরবর্তী সময়ে অন্যায় ও অপরাধের মাত্রা কমে আসে। বেশি বেশি ভালো কাজ করার ইচ্ছা জাগে। তাই আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী কিংবা অপরিচিতও যদি কেউ মারা যায় সুযোগ থাকলে তার জানাজায় স্বতঃস্ফ‚র্ত মনে উপস্থিত হওয়া চাই। নিচে জানাজার নামাজের পূর্ণ নিয়ম-কানুন তুলে ধরা হলো।

পবিত্রতা অর্জন
পবিত্র অবস্থায় জানাজা পড়তে হবে। অপবিত্র অবস্থায় জানাজা পড়লে শুদ্ধ হবে না। তাই শুরুতে অজু ও গোসল (যদি প্রয়োজন হয়) করে নেবেন। কোথাও পানির ব্যবস্থা না থাকলে এবং পানি যদি এত দূর হয় যে ওজু করে আসতে আসতে নামাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে হয় তাহলে তায়াম্মুম করেও জানাজা পড়া যাবে।
জানাজার নিয়ত
জানাজার নামাজ শুরুর আগে নিয়ত করতে হবে। যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন, তারা আরবিতে করাই ভালো। আরবি নিয়তটি হলোÑ ‘নাওয়াইতু আন, উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তায়ালা, আরবাআ তাকবিরাতি সালাতিল জানাযাতি ফারযুল কিফায়াতি, আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবিয়্যি, ওয়া উয়াদ্দিউ লিহাযাল মাইয়্যিতি ইকতিদাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।’ তবে ইমাম সাহেব ‘ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম’ এর বদলে ‘আনা ইমামু লিমান হাজারা ওয়া মাইয়্যাহজুরু’ বলবেন। আর ‘লিহাযাল মাইয়্যিতি’ শব্দটি শুধু পুরুষ লাশের ক্ষেত্রে বলতে হবে। মহিলা লাশ হলে এই শব্দের স্থলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যিত’ বলবেন।
আর যারা আরবিতে নিয়ত করতে পারেন না, তারা মনে মনে বা উচ্চস্বরে বাংলায় বলবেনÑ ‘আমি অতিরিক্ত চার তাকবিরে ফরজে কেফায়া জানাজা নামাজ ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম।’ তারপর আল্লাহু আকবার বলে ইমামের সঙ্গে হাত বাঁধবেন।

প্রথম তাকবিরের পর
জানাজার নামাজ তার তাকবিরে আদায় করতে হয়। প্রথম তাকবির বলে হাত বেঁধে ইমাম সাহেব ও মুক্তাদি সবাই ছানা পড়বেন। আরবিতে ছানা হলোÑ ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।’

দ্বিতীয় তাকবিরের পর
ছানা পড়া শেষে দ্বিতীয় তাকবির দেবেন। তারপর দরুদ শরিফ পড়বেন। আরবিতে দরুদ শরিফ হলোÑ ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’

তৃতীয় তাকবিরের পর
দরুদ শরিফ শেষে তৃতীয় তাকবির দেবেন। তারপর জানাজার দোয়া পড়বেন। প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য এই দোয়া পড়বেন ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছা-না। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।’ তবে মৃত ব্যক্তি যদি নাবালক ছেলে হয় তাহলে এই দোয়া পড়বেন ‘আল্লাহুম্মাজ আলহুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।’ আর যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে এই দোয়া পড়বেনÑ ‘আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাঁও ওয়াজ আলহা লানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।’

চতুর্থ তাকবিরের পর
দোয়া শেষে চতুর্থ তাকবির দেবেন। তারপর ইমাম সাহেব ডান ও বাম পাশে সালাম ফেরাবেন। সঙ্গে মুক্তাদিগণও সালাম ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর মধ্যে দিয়ে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হবে। উল্লেখ, জানাজার নামাজের চারটি তাকবির ও প্রতি তাকবির শেষে যে যে দরুদ ও দোয়ার কথ উল্লেখ করা হলোÑ তা ইমাম ও মুক্তাদি সবাই পড়বেন। তবে নামাজ শেষ করেই সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে দোয়া করা মাকরূহ। কারণ জানাজার নামাজই মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য বিশেষ দোয়া। তবে দাফন সম্পন্ন করার পর দোয়া করতে পারবেন। নবীজি (সা.) ও সাহাবাগণ এমনটা করতেন।
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক ।