ট্যাক্স জটিলতা কারণে সীতাকুন্ড শিপইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

ট্যাক্স জটিলতা কারণে সীতাকুন্ড শিপইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত
শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজ। ফাইল ছবি

অবশেষে সীতাকুন্ড শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে ব্যাবসায়ীরা বন্ধ করে দিচ্ছে  লোহা বিক্রি । সরকারের ট্যাক্স আদায়কে কেন্দ্র করে শিপ ব্রেকিং সেক্টরের ব্যবসায়ীরা জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন।
সীতাকুণ্ডে  গড়ে ওঠা সবগুলো শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি একযোগে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের লোহার খনি হিসেবে খ্যাত শিপ ব্রেকিং সেক্টর সংকটে পড়েছে। তার মধ্যে ঋণখেলাপি হয়ে দেশ ছেড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অবস্থা নাজুক হওয়ায় অন্তত শ’ দুয়েক ইয়ার্ড তৈরি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে চালু শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সংখ্যা ৫৯টি। আর এসবের মালিক ২৫ জন।
আগে প্রতি মাসে গড়ে ৩০টি জাহাজ আসলেও এখন ১ টি জাহাজও আসছেনা । জাহাজ আনার মতো পরিস্থিতিও নেই । এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন , আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিপুল লোকসানের মুখে পড়েছেন। একেকটি জাহাজে প্রায় ১৫/২০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ লোহার দাম কমে যাওয়ায় কারণে দেশের স্টিল মিল মালিকেরা সরাসরি বিদেশ থেকে স্ক্র্যাপ আমদানি করছেন। শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে লোহা না কেনার কারণে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তারা বলেছেন, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে সরকার বিভিন্নভাবে ট্যাক্স আদায় করছে ,পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত সব ধরনের ট্যাক্স প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু এবার নতুন করে অ্যাডভান্সড ট্যাক্স (এটি) নামে ৫ শতাংশ ট্যাক্স আগাম নেওয়া হচ্ছে। আগাম ট্যাক্স কোনোভাবে সামাল দেওয়া গেলেও লোকাল ট্যাক্স নিয়ে সংকট তৈরি হচ্ছে।  ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতিটন লোহার ওপর এক হাজার টাকা করে লোকাল ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। ইয়ার্ড থেকে লোহা বিক্রি করা হলেই প্রতিটনে এক হাজার টাকা করে ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। জুনে বাজেট ঘোষণার সময় এই ট্যাক্স ঘোষণা করা হয়েছে । তারা বলেন,  আমাদের ইয়ার্ডগুলোতে ২/৩ বছর আগে আমদানি করা জাহাজের লোহাও রয়েছে। ওই লোহা এখন বিক্রি করার সময়ও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। অথচ এসব লোহা যখন আমদানি করা হয়েছিল তখন প্রচলিত সব ট্যাক্স পরিশোধ করা হয়েছিল । এখন নতুন করে ট্যাক্স আরোপে এ সংকট তীব্র হচ্ছে।
ট্যাক্সের ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের জানান, অ্যাডভান্সড ট্যাক্স এবং লোকাল ট্যাক্স মিলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সমাধান করা না হলে পরিস্থিতি খারাপ হবে। যদি ইয়ার্ডে থাকা আগের লোহা বিক্রির ওপর কোন লোকাল ট্যাক্স প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে কোনো ইয়ার্ড লোহা বিক্রি করবে না। বিষয়টি নিয়ে শিপ ব্রেকিং মালিকেরা ইতোমধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন।
তারা বলেন, এই ধরনের ট্যাক্স থাকলে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থাকবে না। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকার ট্যাক্স চায় নাকি শিপ ব্রেকিং সেক্টর।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আয়কর বিভাগের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্যাক্স আরোপ করেছে সরকার। আমরা ট্যাক্স আদায় করব। ট্যাক্স ছাড় দেওয়ার সাথে আমরা জড়িত নই। তাছাড়া আমাদের কিছু করারও নেই। আর অ্যাডভান্সড ট্যাক্সের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ট্যাক্স পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। কোনো ইয়ার্ড মালিক যদি সমন্বয়ের পর টাকা পাওনা থাকে তাহলে তা সরকার ফেরত দেবে।
এ প্রসঙ্গে একাধিক জাহাজ মালিক বলেছেন, অ্যাডভান্সড ট্যাক্স সমন্বয় করা হবে ঠিক। কিন্তু পরবর্তীতে যদি আমরা জাহাজ আমদানি করতে না পারি তাহলে কীভাবে সমন্বয় করা হবে? তাছাড়া সরকারের কোষাগারে টাকা চলে গেলে সেই টাকা ফেরত আনা কঠিন।
এ বিষয়ে আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা জানান , আবেদন করলেই ছয় মাসের মধ্যে এ টাকা ফেরৎ পাওয়া যাবে তবে এক্ষেত্রে যদি মামলা থাকে বা মামলার বাদী নিজে হউন সে ক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।

উদ্যোক্তারা বলছেন, এভাবে চললে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব প্রদানকারী শিল্পটি চলে যাবে ভারত ও পাকিস্তানের দখলে।