ড. প্রিন্স মূসা বিন শমশেরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

ড. প্রিন্স মূসা বিন শমশেরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
ড. প্রিন্স মূসা বিন শমশেরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ড. প্রিন্স মূসা বিন শমশেরসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) মামলা দায়ের করেছ দুদক। আসামিরা হলেন- মো. আইয়ুব আনছারী ,সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি)(অঃদাঃ), জেলা সার্কেল ভোলা, বর্তমানে-সহকারী পরিচালক(ইঞ্জিঃ),বিআরটিএ,ডিসি ভবন,ঝালকাঠি, প্রিন্স ড. মূসা বিন শমশের, চেয়ারম্যান- (DATCO (Defense Advancement and Trading Company), মোঃ ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী , পেশা-ব্যবসা, দিলালপুর,কোড নং ৬৬০০, থানা- পাবনা সদর, পাবনা, মীর ফরিদ নবীর ও মো: ওয়াহিদুর রহমান।

আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে ভুয়া রেকর্ডপত্র সৃষ্টি করে তা বিআরটিএ ভোলায় দাখিলপূর্বক কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আনীত বিক্রি নিষিদ্ধ রেজিস্ট্রেশন নং ভোলা-ঘ-১১-০০৩৫ প্রদান তথা রেজিস্ট্রেশনপূর্বক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।

 

অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর স্মারক নং ১৫৬, তারিখ: ২০-০৬-২০১৭ মূলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক আটককৃত কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আনীত বিক্রি নিষিদ্ধ Range Rover jeep, যার রেজিস্ট্রেশন নং ভোলা-ঘ-১১-০০৩৫ সংক্রান্তে দুদক আইন অনুযায়ী আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন, ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়। প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরো দেখা যায় কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী ফরিদ নাবির গাড়িটি বাংলাদেশে আনয়নকারী এবং বিআরটিএ-এর গাড়ি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী গাড়ির মালিক মোঃ ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী। গাড়ীটি ১২-৩-২০১০খ্রিঃ তারিখে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ২১-৩-২০১৭খ্রিঃ তারিখে আটক করে। শুল্ক আইন,১৯৬৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২ অনুযায়ী ২,১৫,৬৫,৮৩৩.৪৭ টাকা প্রযোজ্য শুল্ক কর ফাঁকির অভিযোগে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর,ঢাকার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, মোহাম্মদ জাকির হোসেন বাদী হয়ে গুলশান(ডিএমপি) থানা, ঢাকায় একটি মামলা রুজু করেছেন, যার নং ২৮, তারিখ: ৩১-৭-২০১৭খ্রি:। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর কর্তৃক ২,১৫,৬৫,৮৩৩.৪৭ টাকা প্রযোজ্য শুল্ক কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা রুজু করা হলেও ভুয়া দলিলাদির ভিত্তিতে বিআরটিএ-এর কর্মকর্তা কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করত: দুর্নীতির দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন,২০০৪ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগটি দুদকে প্রেরণ করা হয়েছে।
দুদক কর্তৃক অভিযোগটি প্রাপ্তির পর অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী Mr Fareed Nabir কর্তৃক কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় বিনা শুল্কে আনয়নকৃত বিক্রি নিষিদ্ধ গাড়ীটি প্রিন্স মুসা বিন শমসের এর দখল থেকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর আটক করেছে। ভুয়া রেকর্ডপত্রের মাধ্যমে ড. মুসা বিন শমসের তার শ্যালক জনাব ফারুক উজ জামান চৌধুরীর নামে গাড়ীটি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করিয়েছেন।

ফারুক উজ জামান চৌধুরী বলেছেন তিনি শুধু রেজিস্ট্রেশনের সময় ভোলায় গিয়েছিলেন মাত্র। ড. মূসা বিন শমসের শ্যালকের সাথে ভাড়ার চুক্তিপত্র প্রদর্শন করলেও ফারুক উজ জামান চৌধুরী ভাড়ার চুক্তির বিষয়ে কিছু জানেন না মর্মে জানিয়েছেন। ফরিদ নাবির কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় বিনা শুল্কে আনয়নকৃত গাড়িটি ড. মূসা বিন শমসের মেসার্স অটো ডিফাইন হতে ফারুক উজ জামান চৌধুরীর নামে ক্রয় করত: ভোলা বিআরটিএ হতে গাড়িটি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করান।
অনুসন্ধানকালে আরো দেখা যায় যে “মেসার্স ম্যানহাটন মটরস” ১০৬/৩ কাকরাইল রোড, ঢাকার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:, ভিআইপি রোড শাখা,ঢাকার মাধ্যমে M.J. Auto Japan Ltd. জাপান থেকে Toyota Axio Model Year-2010, Color-Golden I Toyota Axio Model Year-2009 USD-7700 + 7300 + 15,000 H.S.Code-8703.22.11. LCAF No. 60802 Dt.12.11.2014 L/C no. 089214010529 Dt.12.11.2014 বিল অব এন্ট্রি নং Custom C-1045911 Dt.13.12.2014, USD যথাক্রমে ৭৩০০ ও ৭৭০০ ডকুমেন্ট ইনভয়েস নং MJ-MT-4 Dt. 4.12.2014 বিএল নং YCGP-077 Dt. 21.11.2014I B/L YCGP-075 Dt.21.11.2014 Proforma in no.MJ-MT-4 Dt.8.11.2014. এর আমদানিকৃত গাড়ি দুটির রেকর্ডপত্র টেম্পারিং করে Bhola Gha 11-0035 RANGE ROVER গাড়িটি BRTA এর নিকট রেজিষ্ট্রেশন করা হয়েছে। অর্থাৎ রেজিষ্ট্রেশনকালে যেসব এলসি সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র দাখিল করা হয়েছে তার সবগুলি Tempering করে করা হয়েছে। ম্যান হাটন মটরস এর মালিক জনাব তারিক হোসেন জানান তারা LCF no.60802 এর ডুপ্লিকেট কপি পণ্য খালাসের জন্য চিটাগাং কাষ্টমস অফিসে জমা দেন। কাষ্টমস হাউজ থেকে অথবা সিএন্ডএফ এজেন্ট থেকে কপি সংগ্রহ করে বিআরটিএ-এর নিকট রেজিষ্ট্রেশনকালে যেসব L/C সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে তার সবগুলোই টেম্পারিং করে করা হয়েছে, কারণ এগুলোর মূল কাগজপত্রের সাথে কোন মিল নাই।

অনুসন্ধানকালে আরো দেখা যায় যে, Mr Fareed Nabir কর্তৃক কার্নেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আনীত বিক্রি নিষিদ্ধ Range Rover jeep টি মেসার্স অটো ডিফাইন-এর মালিক মো: ওয়াহিদুর রহমান-এর নিকট হতে ক্রয়পূর্বক উক্ত গাড়ির ব্যবহারকারী প্রিন্স মুসা বিন শমসের তার শ্যালক মোঃ ফারুক-উজ-জামান চৌধুরীর মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ডপত্র সৃজনকরত: তা বিআরটিএ ভোলায় দাখিল করে ভোলা, বিআরটিএ-এর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিন) মো: আইয়ুব আনছারীর সহযোগিতায় রেজিস্ট্রেশন নং ভোলা-ঘ-১১-০০৩৫ গ্রহণ করে আসামীগণ ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ফৌজদারী অপরাধ করেছেন।
এমতাবস্থায়, আসামি মো: আইয়ুব আনছারী, প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের, মো. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী, ফরীদ নাবীর ও মো. ওয়াহিদুর রহমানগণ জ্ঞাতসারে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় ।