ধরা পড়ছে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ, উদ্বিগ্ন মৎস্য প্রশাসন

ধরা পড়ছে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ, উদ্বিগ্ন মৎস্য প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। 

আবারো ইলিশ শিকার বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে। ডিমসহ প্রচুর মা ইলিশ ধরা পড়ার প্রেক্ষিতে ইলিশ শিকারের সময়কাল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য ২২ দিনের জন্য শিকার বন্ধ রাখা হয়। তবে এই বন্ধের দিনক্ষণ কখন থেকে শুরু হবে তা নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। প্রচুর বড় ইলিশ ধরা পড়লেও পেট ভর্তি ডিম থাকায় কিছুটা উদ্বিগ্ন মৎস্য প্রশাসন। এভাবে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়লে ভবিষ্যতের ইলিশ উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা করা হচ্ছে। দুই কেজি সাইজের ইলিশ ধরা পড়ায় এবার ইলিশ উৎপাদন পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ইলিশ শিকারের ভর মৌসুম শুরু হয়েছে। পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার জো মিলে আগামী এক মাসেরও বেশি সময় ইলিশ শিকারের এ মৌসুম থাকার কথা। কিন্তু ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় এই সময়টা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। সরকার ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কয়েক বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করছে। যার সুফলও ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। ইলিশের উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই কেজি ওজনের ইলিশও ধরা পড়ছে জেলের জালে। সংখ্যায় কম হলেও বড় বড় সাইজের ইলিশের ধরা পড়ার বিষয়টি জেলেদের যেমন আনন্দিত করছে, তেমনি মৎস্য অধিদপ্তরও সন্তুষ্ট। কিন্তু বড় মাছের সাথে প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছও ধরা পড়ছে। ধরা পড়ছে ডিমওয়ালা মা মাছ।তবে আরো কিছুদিন সময় পেলে ডিমওয়ালা মাছ ডিম ছেড়ে দিত, ছোট মাছগুলো আকারে আরো বড় হতো। এ অবস্থায় ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার সময়কাল পরিবর্তনের বিষয়টিও সামনে চলে আসে।

মৎস্য অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন অর্থাৎ ৮ মাস জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধনে নিষেধাজ্ঞা চলে আসছে। মাছ বড় করার জন্য এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে ২০ মে থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ রাখা হয়। সাগরে যেতে না পারা জেলের নানাভাবে সরকারের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। বিগত বছরগুলোতে পুরো বছরে দুই আড়াই লাখ টন ইলিশ ধরা পড়লেও ক্রমান্বয়ে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। চলতি বছর ইলিশের উৎপাদন অন্তত ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

সূত্র বলেছে, গত ২৪ জুলাই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। পরিস্থিতি অনুকুল থাকায় প্রতিদিন নদী-সাগরে উৎসবের আমেজে ইলিশ শিকার চলছে। বাজারে আটশ’ গ্রামের কাছাকাছি থেকে উপরের দিকে যত মাছ ধরা পড়ছে সেগুলোর প্রায় নব্বই ভাগ মাছের পেট ডিমে ভর্তি।

অপরদিকে মা মাছের চেয়ে জাটকার পরিমাণ বেশি বলে বেশ কয়েকজন বোট মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে। জাটকা শিকার নিষিদ্ধ হলেও প্রচুর পরিমাণ জাটকা শিকার করা হচ্ছে। জালে ধরা পড়া জাটকাগুলো সাগরে পুনরায় ফেলে দিলেও এগুলো বেঁচে থাকছে না। এসব মাছ মরে যাচ্ছে। ডিমওয়ালা মাছ ও জাটকা শিকার দুটোই মৎস্য অধিদপ্তরের লক্ষ্য অর্জনের পথে বড় অন্তরায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের একজন বোট মালিক জানান, ইলিশ বড় হওয়ার জন্য জাটকা শিকার বন্ধ রাখা হয় আট মাস। আবার অন্যান্য মাছের প্রজনন মৌসুমের জন্যও মাছ শিকার বন্ধ থাকে ৬৫ দিন। ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য বন্ধ রাখা হয় ২২দিন। এত কিছুর পরও ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা ধরার পড়ার বিষয়টি বেশ উদ্বেগের।

চট্টগ্রাম মৎস্য অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ডিমওয়ালা প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আসলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ডিম ছাড়া নির্বিঘ্ন করতে গত বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ২২দিন ইলিশ শিকার বন্ধ ছিল। তবে এবার তা এগিয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ২২দিন করা হতে পারে বলেও তিনি আভাস দেন। তবে এটি প্রাকৃতিক ব্যাপার। তাই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। ইলিশ মাছ পুরো বছরই কমবেশি ডিম ছাড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে সবচেয়ে বেশি ডিম ছাড়ার সময়টিকেই বিবেচনায় রেখে মাছ শিকার বন্ধ রাখতে হবে।