নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ফুঁসছে গোটা ভারত, দশ রাজ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, নিহত ৩

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে ফুঁসছে গোটা ভারত, দশ রাজ্যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, নিহত ৩

পোস্টকার্ড ( আন্তর্জাতিক) ডেস্ক।।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে এখন ফুঁসছে গোটা ভারত। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানী নয়াদিল্লি, মুম্বাই, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটকসহ অন্তত ১০টি রাজ্যে রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে বিভিন্ন শহরে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুড়লে দুজন নিহত হন।

এ ছাড়া উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌতেও গুলিতে একজন নিহত হন। প্রতিবাদে শামিল হয়ে বেঙ্গালুরুতে আটক হন ভারতের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। অন্যদিকে দিল্লিতে আটক করা হয় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটা, ডি রাজা এবং স্বরাজ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্য থেকে আটক করা হয়েছে আরও অনেককে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিল্লি, ম্যাঙ্গালোর, লক্ষ্নৌসহ বিভিন্ন শহরে বন্ধ রাখা হয়েছে ভয়েস, ইন্টারনেট পরিসেবা। জরুরি বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভিসহ ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চন্ডিগড়, মুম্বাই, কর্নাটক, কলকাতাসহ বহু বড় শহর। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে রাজধানী দিল্লির লালকেল্লাসহ অনেক জায়গায় জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। আগে থেকেই সেখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল।

এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দিল্লির আরও এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ১৮টি মেট্রো স্টেশন। বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিসেবাও। বিহারেও এদিন সকাল থেকে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে বেশ কয়েক জায়গায় খ-যুদ্ধ হয় বিক্ষোভকারীদের।

এদিন সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয় কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোরে। সেখানে পুলিশের গুলিতে অন্তত দুজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। তবে পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা ফাঁকা গুলি চালিয়েছে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করেই পুলিশকে গুলি করতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের সময় বিক্ষোভকারীরা বেশ কিছু গাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ম্যাঙ্গালোরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিসেবা।

লক্ষ্ণৌতেও এদিন বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। শহরের হাসানগঞ্জ, মাদেগঞ্জ, ডালিগঞ্জে বিক্ষোভকারীরা সরকারি বাস, পুলিশ বক্স ও টিভি চ্যানেলের গাড়িতে আগুন দিলে পরিস্থিতির অবনতি হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। এ সময় গুলিতে এক বিক্ষোভকারী নিহত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় আটক করা হয়েছে ২০ জনকে। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হুশিয়ারি দিয়েছেন, যারা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে, বদলা নিতে তাদের সম্পত্তি নিলাম করে ক্ষতিপূরণ তোলা হবে।

এদিকে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে অশান্তি ক্রমশ বাড়তে থাকায় এই দুটি কার্যক্রম কার্যকর হবে কিনা তা জানতে জাতিসংঘের অধীনে ভারতে গণভোট আয়োজনের কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মমতার এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। এক টুইটে এই মন্তব্যের জন্য মমতাকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।