নবীজির এক জান্নাতি সাহাবির গল্প

নবীজির এক জান্নাতি সাহাবির গল্প
নবীজির এক জান্নাতি সাহাবির গল্প

হাম্মাদ রিফাত ।।

রাসুলুল্লাহ (সা.) একজন সাহাবি হজরত নুয়াইম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উসাইদ (রা.) । সাহাবায়ে কেরামের মাঝে তিনি ‘নুয়াইম নাহহাম’ নামে প্রসিদ্ধ ছিলেন। আরবি শব্দ ‘নাহম’ অর্থ কাশি আর ‘নাহহাম’ অর্থ কাশিদাতা। নবীজি (সা.) স্বপ্নে জান্নাত পরিভ্রমণের সময় তার কাশির শব্দ শুনেছিলেন। তাই তিনি এ ‘নুয়াইম নাহহাম’ অর্থাৎ ‘কাশিদাতা নুয়াইম’ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে যান। হজরত আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, জান্নাতে প্রবেশ করছি; তখন সেখানে নুয়াইমের কাশির শব্দ (নাহমা) শুনতে পেলাম।’ (জামেউল মাসানিদ : ৯৫৭৫; তাবকাতে ইবনে সাদ : ৪/১০২; মারিফাতুস সাহাবা : ৫/২৬৬)। তিনি মক্কার কুরাইশ বংশের বিখ্যাত ‘বনু আদি’ গোত্রের একজন বিশিষ্ট সাহাবী এবং গোত্রের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন।
নবীজি (সা.) নবুওয়াত লাভের পরপরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। হজরত মুসআব যুবায়রি (রহ.) বলেন, হজরত নুয়াইম (রা.) ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন। হজরত ওমর (রা.)-এর আগে এবং প্রথম দশ জনের পরই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের কথা কারও নিকট প্রকাশ করেননি। তিনি তার সম্প্রদায়ের নিকট একজন মহৎ দানশীল ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন। অন্য সাহাবিদের মতো তিনিও যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে প্রস্তুত হলেন, তখন তার গোত্র বনু আদির লোকরা তাকে হিজরত না করার অনুরোধ করল এবং বলল, যে ধর্ম আপনার ইচ্ছা আপনি অনুসরণ করুন, তবে আমাদের ছেড়ে যাবেন না। আল্লাহর শপথ! কেউ আপনার পিছু নেবে না।
তার প্রতি গোত্রের মানুষের এমন ভক্তি ও শ্রদ্ধার কারণ হচ্ছে, বনু আদি গোত্রের বিধবা নারী ও এতিমদের তিনি দুই হাত ভরে উদারচিত্তে আর্থিক সাহায্য করতেন। দীর্ঘ ছয় বছর পরে ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সময় তার গোত্রের চল্লিশ জন ব্যক্তিকে নিয়ে মদিনায় হিজরত করেন তিনি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন এবং বললেন, নুয়াইম! তোমার ব্যাপারে তোমার সম্প্রদায় আমার সম্প্রদায়ের চেয়ে উত্তম। কারণ তারা তোমাকে সমর্থন করে রেখে দিয়েছে। আর আমার সম্প্রদায় আমাকে বের করে দিয়েছে। তখন হজরত নুয়াইম (রা.) বললেন, বরং আপনার সম্প্রদায় আমার সম্প্রদায়ের চেয়ে উত্তম। কারণ তারা আপনাকে হিজরত করার জন্য বের করে দিয়েছে। আর আমার সম্প্রদায় আমাকে বাধা দিয়েছে। (জামিউল মাসানিদ : ৯৫৭৬; উসদুল গাবা : ৪/২৪৬; আল-ইসাবা : ৩/২০০৯)
নবীজি (সা.)-এর এত ঘনিষ্ঠতা-অন্তরঙ্গতা ও স্বপ্নে জান্নাতের সহচর হওয়ার মতো সৌভাগ্য অর্জনের অন্যতম কারণ হচ্ছে এতিম-বিধবা ও অভাবী মানুষদের অকাতরে দান করা। এতিম-বিধবা ও অসহায় মানুষকে দান করার বিনিময়ে জান্নাত লাভের সুসংবাদ অনেক হাদিস থেকে জানা যায়। হজরত সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি এবং এতিমের ভরণপোষণকারী জান্নাতে এভাবেই থাকব’; এ কথা বলে নবীজি তর্জনী ও মধ্যমা অঙ্গুলি একত্র করে দেখালেন। (বুখারি : ৬০০৫; মুসলিম : ২৯৮৩)
হজরত নুয়াইম নাহহাম (রা.) নিজের জীবনের সুন্দর একটি ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন ‘এক শীতের রাতে আমি আমার লেপের মধ্যে ছিলাম, তখন নবীজির মুয়াজ্জিনকে ফজর নামাজের আজান দিতে শুনলাম। (প্রচন্ড শীতের কারণে) আমি মনে মনে কামনা করলাম আহ! যদি বলা হতো, ‘তোমরা ঘরে নামাজ পড়লেও কোনো সমস্যা হবে না’। এ কথা ভাবতেই শুনি মুয়াজ্জিন আজানের শেষদিকে বলছেন, তোমরা তোমাদের ঘরে নামাজ পড়তে পার’। পরে একসময় আমি মুয়াজ্জিনকে তার এই উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, নবীজি (সা.) তাকে এ কথা বলার আদেশ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ১৭৯৩৩; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ১৯২৬)