নামাজের কেরাত ও জুমার খুতবা সংক্ষেপ করুন : মুফতি তাকি উসমানি

নামাজের কেরাত ও জুমার খুতবা সংক্ষেপ করুন : মুফতি তাকি উসমানি
জুমার খুতবা ও নামাজের কেরাত সংক্ষেপ করুন : মুফতি তাকি উসমানি

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

বিশ্ব জুড়ে মহামারী আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস । প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। চীনের পর ইউরোপে করোনার বিস্তার ভয়াবহ হলেও সৌদি আরব, কাতার, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ অনেক মুসলিম দেশও এ মহামারী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। বিভিন্ন দেশে মসজিদ পর্যন্ত বন্ধ করার আলোচনা আসছে।

এ পরিস্থিতিতে মসজিদে নামাজ আদায় ও ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানি। সামা টিভির সাংবাদিক নাদিম মালিকের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন আবদুল্লাহ তালহা ।

নাদিম মালিক : করোনাভাইরাসের মহামারী সময়ে মসজিদে নামাজের জন্য একত্রিত হওয়ার হওয়ার ব্যাপারে কী বলবেন?
মুফতি তাকি উসমানি : সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যেই নির্দেশনা দেওয়া হয় তার সঙ্গে সঙ্গে শরয়ি বিধান পালনে অবশ্যই তৎপর থাকতে হবে। জনসমাবেশে যেহেতু এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি তাই যথাসম্ভব তা এড়িয়ে চলা। মসজিদে নামাজের জন্য গেলে খেয়াল রাখা- যেন প্রয়োজন পরিমাণ সময় মসজিদে অবস্থান করা হয়। যত কম সময়ে নামাজ আদায় করা যায়, ততই ভালো। এর পদ্ধতি হচ্ছে-  ফরজের পূর্বের সুন্নাতগুলো ঘরে পড়ে নেওয়া এবং ফরজ জামাত শেষের সুন্নাতগুলো ঘরে ফিরে আদায় করা। আর ইমাম সাহেব যেন এই দুর্যোগকালে নামাজের কেরাত সংক্ষিপ্ত করেন। এতে জমায়েতের সময়টা কমে যাবে। আর যে লোকের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সে এই মহামারীতে আক্রান্ত, তার জন্য মসজিদে গমন করা জায়েজ নেই। সে একাকী ঘরে নামাজ আদায় করবে।

নাদিম মালিক : জুমার খুতবা সংক্ষেপ করার কোনো সুযোগ আছে কি?
মুফতি তাকি উসমানি : জী, খুতবা যথাসম্ভব সংক্ষেপ করা। যেন একেক খুতবা এক দেড় মিনিটের মধ্যেই শেষ করে দেওয়া যায়। কারণ, শরিয়ত জুমার খুতবার ক্ষেত্রে সহজতার বিধান রেখেছে। তা অতি দীর্ঘ হওয়া জরুরি নয়। ইমাম সাহেবরা নিশ্চয় জানেন, প্রথম ও দ্বিতীয় খুতবায় কতটুকু বললে যথেষ্ট হয়। কারণ, প্রথম খুতবায় জরুরি হলোÑ হামদ-সালাত-তাকওয়ার নসিহত ও দোয়া। দ্বিতীয় খুতবাও এমনই। তাই জুমার খুতবা অতি সংক্ষেপে শেষ করা যায়। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

নাদিম মালিক : মসজিদের কাতারগুলো তো কাছাকাছি। একটি আরেকটির সঙ্গে লাগোয়া। তো এই দুর্যোগের সময় কি কাতারের মাঝে কিছুটা ফাঁক বা দূরত্ব অবলম্বন করার সুযোগ আছে?
মুফতি তাকি উসমানি : জী, জী! এতে কোনো সমস্যা নেই। শরিয়ত এ ক্ষেত্রে সহজ করেছে। দুই কাতারের মাঝখানে যদি কিছুটা ফাঁক রাখা যায়, তবে তা উত্তম। আমি ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা বলেছেন, যদি মসজিদগুলো থেকে কার্পেট-জায়নামাজ ইত্যাদি উঠিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয়। কারণ, ওসবে জার্ম ও জীবাণু লেগে থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

নাদিম মালিক : একটি ইসলামী সামাজিকতা হলো মুসফাহা ও মুআনাকা। এই ব্যাপারে তো ডাক্তাররা নিষেধ করছেন। আপনি কী বলেন?
মুফতি তাকি উসমানি : দেখুন, মুসফাহা করা একটি মুস্তাহাব আমল। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। আর সালাম প্রদান হলো জরুরি। সুতরাং যেখানে মুসাফাহা করলে কারও অপকার বা ক্ষতির আশঙ্কা আছে, সেখানে মুসাফাহা করা ঠিক নয়। নিষেধ। পূর্বসূরি ফকিহগণ এমন অনেক জায়গা চিহ্নিত করে দিয়েছেন, যেখানে মুসাফাহা করা নিষেধ। সুতরাং অভিজ্ঞ ডাক্তাররা যেহেতু নিষেধ করছেন, তাই এখন মুসাফাহা থেকে বিরত
থাকলে বিশেষ অসুবিধা নেই।

নাদিম মালিক : ‘তাউন’ (মহামারী) সম্পর্কে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে- ‘তোমরা তাউন আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হয়ো না, আবার বাইরে থাকলে সেই এলাকায় প্রবেশ কর না’ এই হাদিস কি বর্তমান ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে?
মুফতি তাকি উসমানি : জী, সেই হাদিস এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। এটাই এখন হাদিসের নির্দেশনা। সুতরাং যে এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী অধিক, সেই এলাকা থেকে লোকজন বের হবে না। অন্য এলাকার লোকজনও সেখানে যাবে না।

নাদিম মালিক : করোনাভাইরাস রোধ করার জন্য বারবার হাত ধোয়া, কুলি করা, মুখ ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অজু করাই মনে হয় সবচেয়ে উপকারী আমল?
মুফতি তাকি উসমানি : কোনো সন্দেহ নেই। অজু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। শারীরিক দিক থেকেও। মানসিকতার দিক থেকেও। অজু মানুষের শরীরের রোগ-ব্যাধি থেকে হেফাজতের শক্তিশালী একটি উপায়। আসলে আল্লাহ আমাদের যেসব বিধান দিয়েছেন, তার প্রতিটিতেই রয়েছে শারীরিক ও মানসিক অনেক উপকার। এ জন্য এ সময় বেশি বেশি অজু অবস্থায় থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
আসলে এই যেসব বিপদাপদ আসছে, এসব ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো- মানুষ যেন আল্লাহর হুকুম পালনকারী হয়ে যায়, যেভাবে নামাজের কথা বলা হয়েছে, সেভাবে নামাজের প্রতি মনোযোগী হয়, আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে, তার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে; যেকোনো বিপদাপদে এসব আমলই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আরেকটা বিষয় লক্ষ রাখতে হবে- শরিয়ত আমাদেরকে বলেছে, উপায় ও মাধ্যম অবলম্বন ছেড়ে দেওয়ার তাওয়াক্কুল নয়। বরং আসবাব বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে তারপর আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে। সুতরাং এই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকার জন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা যেসব দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন, তা মেনে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইবাদত করতে থাকতে হবে। তাহলে ইনশাল্লাহ, আল্লাহ কল্যাণের ফয়সালা করবেন।