নারী নিরাপদে রাখতে - শুদ্ধতা চাই তাড়াতাড়ি

নারী নিরাপদে রাখতে - শুদ্ধতা চাই তাড়াতাড়ি
নারী নিরাপদে রাখতে - তাড়াতাড়ি শুদ্ধতা চাই

মোমিন মেহেদী ।।  

রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতি বছর পালিত হয় নারী দিবন, কন্যা দিবসসহ নারী কেন্দ্রিক বিভিন্ন দিন-সপ্তাহ। তবু বারবার ধর্ষণ-নির্যাতন-খুন-গুমের সংবাদ পড়তে হয় পত্রিকার পাতায়। মসজিদের ইমামের কাছেও নিরাপদ নয়; আমার মা আমার বোন। উত্তরণের পথ যখন খুঁজছি, তখন নির্মমতায় ছেয়ে আছে বাংলাদেশ।

শুনতে হচ্ছে- ‘‘আমি আমার বোনকে বোরকা পড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, পথিমধ্যে চোখে পড়লো- আসরের নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বেড়িয়েই আমার বোনের বোরকা পরিহিত নিতম্বর দিকে পলকহীন তাকিয়েছিলেন দাড়ি-টুপি-আলখাল্লাওয়ালা এক লোক।

প্রতিবাদ করতেই তেড়ে এসে বললেন- ‘ঘরে রাখতে পারেন না, বাইরে নিয়ে বাইরাইসেন ক্যান!’ যেখানে ইসলাম বলেছে ‘নিজের চোখকে সংবরণ করা ঈমানদারের কাজ।’ সেখানে উল্টো ধমক! কী শুরু হয়েছে দেশে! মসজিদেও ধর্ষণ করছে ইমাম-মুয়জ্জ্বিনরা! এর থেকে পরিত্রাণ কিভাবে পাবে?

এভাবেই প্রশ্ন করেছিলেন হাফেজ মাওলানা নূরুল আমিন মৃধা। এটাতো একজন ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের কথা; তার উপর আবার পল্টন থানার ওসি সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন ধর্ষণের অভিযোগে।

এরও অনেক আগে চরমোনাই’র বর্তমান পীর যখন চরমোনাই ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন, তার বিরুদ্ধেও উঠেছিলো এমন অভিযোগ। এছাড়া সায়েদাবাদী, কাঁচপুরী, নয়রশি, ভান্ডারিসহ বিভিন্ন তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও এমন অসংখ্য অভিযোগ গড়ে উঠেছিলো।

রাজনীতিকদের মধ্যে দিনে দুপুরে অভিযোগ উঠেছিলো সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানসহ অগণিত নেতার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি শিক্ষক নামক কলঙ্ক পরিমল, সাঈদ; আমলাদের মধ্যে রাজ্জাক, অনিমেষ; ব্যবসায়ীদের মধ্যে টিটন, হাসান, সংস্কৃতি অঙ্গনে সাকিব খানসহ বেশুমার মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে আবার নেমেও যায়; কিন্তু কেন?

কারণ ধর্ম-সমাজ-সভ্যতা নিয়ে কোনো আদর্শিক শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। আছে শুধু সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক পড়ালেখা। যে কারণে সাধারণ বিদ্যালয়ের চেয়ে অসাধারণ তথাকথিত ধর্মীয় শিক্ষালয়গুলোতে যারা পড়ালেখা করে; এরা বেশি চরিত্র বিধ্বংসি হয়।

কারণ ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি সমাজ-সভ্যতার ছিটেফোঁটাও দেয়া হয়না। সাধারণ বিদ্যালয়গুলোতে তো নয়-ই; ধর্মীয়গুলোতেও না থাকায় আজ যেখানে সেখানে, এমনকি মসজিদেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শিশু, কিশোর, কিশোরী, তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষের যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণের পর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আমার মতামত বরাবরের মত একই অপরাধ করা একটি মানসিক বিষয়। অনেক অপরাধ পরিবেশ পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ঘটে বা করে থাকে।

কিন্তু ধর্ষণ, নারীদের উত্ত্যক্ত করার মতো অপরাধ পুরোটাই মানসিক বিষয়। সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া সমাজে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা কঠিন কাজ। মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। নিজের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সচেতন ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

ধর্ষণ করা বা ধর্ষণের পর তার ভিডিও ধারণ করে তার সুযোগ নিয়ে বার বার সুবিধা নেয়ার বিষয়টিও নিছক এক ধরনের বিকৃত মানসিকতা। ধর্ষণের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে প্রয়োজনে মসজিদ-মন্দির প্যাগোডা-গীর্জার মাদ্রাসা-স্কুল কলেজগুলোর পাশাপাশি পাড়া মহল্লায় সভা সমাবেশ করে মানুষকে বোঝানো প্রয়োজন।

বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও পাঠদানের মাধ্যমে এসব বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সমাজের মানুষদের সচেতনতা করা দরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের রীতিমতো এসব বিষয়ে সতর্কতামূলক শিক্ষা দেয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

পাশাপাশি পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদের শিশু, নারী বা অন্য যারা পরিবারের সদস্য তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, তার সন্তানের ওপর আশপাশের কারও কোনো কুনজর আছে কি না তা খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সন্তানকে কে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। সন্তান কোন কোন জিনিস বা বিষয়ের প্রতি দুর্বল তা জানতে হবে। প্রয়োজনে পরিবারকে সন্তানের যেসব চাহিদা সাধ্য মোতাবেক পূরণ করতে হবে।

সন্তানদের নানা বিষয়ে সতর্কতামূলক বিষয়াদি শেখাতে হবে। তাহলেই এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। তা না হলে যে হারে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ ভয়াবহ দিনে দিনে সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে; সে হারে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

এমনিতেই কোনো কিছুতেই এই ব্যাধি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু ধর্ষণে এই অপরাধ সীমাবদ্ধ নেই। ধর্ষণের মতো অপরাধ আড়াল করতে ধর্ষিতাকে অধিকাংশ সময়ই নির্মম নির্যাতনের পর হত্যার ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিন গড়ে সারাদেশে অন্তত চার থেকে পাঁচটি ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে।

যদিও সারাদেশে প্রতিদিন নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের হচ্ছে শতাধিক। হালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। আলোচিত ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গ্রেপ্তারও হচ্ছে। কোনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার অভিযানকালে মারাও যাচ্ছে।

তারপরও থেমে নেই ধর্ষণের মতো অপরাধ। ভাইরাসের মতো সমাজের সকল স্তরে এই ব্যাধি বাসা বাঁধছে। আমার মতে- একমাত্র সচেতনতাই পারে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনতে। সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হলে এ ধরনের অপরাধ সমাজ থেকে দূর করা কঠিন হবে।

ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত খুনের মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এতে ভয়ে হলেও সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কিছুটা কমে আসবে। এ ধরনের অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তি বা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দোষীদের নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।

এতে করে কেউ এ ধরনের অপরাধের শিকার হলে মুখ খুলবে। আইনের আশ্রয় নেবে। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যানের একটি কপি আমার কাছে পৌছেছে, সেই আলোকে বললেও- চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে আয়েশা নামের এক শিশুকে বাড়ির তিন তলা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা, ৭ জানুয়ারি ডেমরার কোনাপাড়ার একটি বাসায় লিপস্টিক দেয়ার লোভ দেখিয়ে ফারিয়া আক্তার দোলা (৫) ও নুসরাত জাহান (৪) নামে দুই শিশুকে ডেকে বাসায় নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক গোলাম মোস্তফা (২৮) ও তারই মামাত ভাই আজিজুল বাওয়ানী (৩০) কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যা, ৫ জুলাই ঢাকার ওয়ারীতে সিলভারডেল স্কুলের নার্সারির ছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

এছাড়া ২৭ জানুয়ারি আশুলিয়ায় নয় বছর বয়সী এক ছাত্রীকে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষণের পর তার ভিডিও ধারণ করে বার বার ধর্ষণ করার ঘটনা, গাজীপুরে পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা, ওয়ারীতে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বার বার এক তরুণীকে ধর্ষণ করার ঘটনাও তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

এসব ঘটনাই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিলেও সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে গ্রেপ্তার হয় মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যক্ষের নির্দেশে রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়, (বর্তমানে এ মামলার রায় হয়েছে)। যদিও বলা হয়ে থাকে যে, সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এই প্রযুক্তির কারণে অনেক খারাপ জিনিস হাতের নাগালে চলে এসেছে। যার কারণে বিশ্বের অন্য দেশের মতো পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে।

প্রযুক্তির কারণে মানুষ যেন নীতি, নৈতিকতা, ধর্মীয় অনুশাসন, সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা ভুলে না যায়, তা শেখাতে হবে। ছেলে মেয়েরা যাতে পরিবারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা প্রয়োজন প্রতিটি পরিবারে।

এতে করে ছেলে মেয়েদের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যখন কোনো সন্তান তার পরিবারের কাছে তার অভাব বা ব্যক্তিগত বিষয়াদির কথা প্রকাশ করতে না পারে, তখন স্বাভাবিক কারণেই সে বন্ধু বা বান্ধবী বা পরিচিতদের কাছে যায়। আর তখনই তার বিপথগামী বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ধর্ষণের মতো অপরাধগুলোও সংঘটিত হয় এভাবেই। সমপ্রতি আদালত এ ধরনের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকা উচিত।

তাহলে ভবিষ্যতে ধর্ষণ বা নিপীড়নের মতো অপরাধ দিন দিন কমে যাবে। পুলিশ বা অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে তারা যখন বিভিন্ন সভা সমাবেশে যান, তারা এসব বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে এবং পাশাপাশি আইনে কঠোর শাস্তির কথা জানালে এ ধরনের অপরাধ কমে আসার ক্ষেত্রে আরও সুফল আসবে।

পাশাপাশি মামলা দায়েরকারী বা ভিকটিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দোষীদের নিয়মিত মনিটরিং করা জরুরি। এটি ধর্ষণের মতো অপরাধ সমাজ থেকে কমিয়ে আনতে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, বিচারহীনতার সংস্কৃতিও ধর্ষণ বৃদ্ধির একটি বিশেষ কারণ। ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা যখনই ঘটছে, তখনই খুবই তোলপাড় হচ্ছে। মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার হচ্ছে।

অথচ আসামিরা অনেক সময়ই প্রভাব খাটিয়ে উপযুক্ত প্রমাণাদির অভাবে জামিনও পেয়ে যাচ্ছে। তাদের বিষয়ে আর মনিটরিং করা হয় না। বা যাদের মনিটরিং করার কথা, তারা সে কাজটি ঠিকমতো পালন করেন না।

যদিও নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার তদন্তে গাফিলতি করলে ওইসব পুলিশ সদস্যের চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পাশাপাশি ভিকটিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

কিন্তু তার উল্টোটা ঘটে অধিকাংশ ক্ষেত্রে। আর এ কারণেও প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে ধর্ষণের নানা ঘটনার খবর। গ্রামে কিংবা শহরে, বাড়িতে কিংবা রাস্তায়, অফিসে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমনকি চলমান বাসে পর্যন্ত, একথায় বলা চলে প্রায় সর্বত্রই ঘটছে এমন ন্যাক্কাড়জনক ঘটনার।

ধর্ষণ এখন ডাল-ভাতের মত হয়ে উঠেছে। ধর্ষণ সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে আমাদের জানা দরকার ধর্ষণ বলতে আমরা কী বুঝি বা ধর্ষণ কী? ধর্ষণ বলতে আমরা যা বুঝি তাহলো ’কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা।’ বর্তমান সমাজে অহরহই ঘটছে এমন লজ্জাজনক ঘটনা।

নারীরা লাঞ্ছিত হচ্ছে যেখানে সেখানে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এমন ন্যাক্কাড়জনক কাজ। এ সকল কাজের নেপথ্যে কী কী কারণ রয়েছ কে বা কারা দায়ী তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি? নানামুখি কারণে ধর্ষণেরমত এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত।

ধর্ষণের পিছনে যেসকল কারণকে দায়ী করবো তাহলো নৈতিকতার অভাব বা অবক্ষয়, নারীদের সচেতনতার অভাব, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না দেয়া, পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধের অভাব, নারীর খোলামেলা ও আবেদনময়ী পোশাক পরিধান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ, সন্তানে প্রতি পিতা-মাতার উদাসহীনতা ইত্যাদি।

এরকম নানান কারণে ঘটছে ধর্ষণের ঘটনা লাঞ্ছিত হচ্ছে নারীরা। বর্তমানে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এটি কারো একার পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব না প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তলা। ধর্ষণ প্রতিরোধে সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন বলে মনে হয় তাহল সকলের মাঝে নৈতিকতাবোধ জাগরণ। ইসলামসহ কোনো ধর্মেই ধর্ষণের মতো কাজকে উৎসাহিত করা হয়নি।

সুতরাং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর প্রবল গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ধর্মীয় অনুশাষণ মেনে চলার মাধ্যমে নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি ও নৈতিক অবক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সৃষ্টিই পারে ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রধান ভূমিকা রাখতে।

এছাড়া নারীদের ধর্ষণ সম্পর্কে সচেতন করে তুলা এবং হঠাৎ করে ধর্ষণের শিকার হলে নিজেদের বাঁচাতে পারে এমন আত্মরক্ষামূলক কৌশল শিখানো উচিত। অন্য আরেকটি ব্যাপার যা ধর্ষণ প্রতিরোধে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে আর তা হলো পিতা-মাতা বা অভিভাবকের সতর্কতা। অনেক মেয়েই আছে যারা নিজ পরিবারেই ধর্ষণের মত পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এর জন্যে অনেক ক্ষেত্রেই পিতা-মাতা বা অভিভাবকের উদাসহীনতা দায়ী।

অনেকেই চাচা, মামা বা চাচাতো-মামাতো, খালাতো-ফুফাতো ভাই-বোনদের অবাধে মেলামেশা করতে দেন। যার ফলে এক সময় মেয়েটি শিকার হয় ধর্ষণের ও নির্যাতনের। অনেক পরিবারে কোনো পুরুষ আত্মীয় এলে মেয়েটিকে একাই দেয়া হয় আদর আপ্যায়নে। অনেক সময় এসব ক্ষেত্রেও ঘটে ধর্ষণ। তাই পিতা-মাতা বা অভিভাবকের এসব ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে, যাতে মেয়েটি কোনো পুরুষ আত্মীয়ের বাসায় যাবার সুযোগ না হয়।

অপরাধী শাস্তি না পেলে সে বার বার অপরাধমূলক কাজ করে তাতে অপরাধ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে অন্যরা অপরাধে জড়াতে উৎসাহিত হয়। তাই ধর্ষণকারীকে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন যাতে অন্যরা ভবিষ্যতে এমনটি করার সাহস না পায়।

সবশেষে বলবো যে- দেশে প্রচলিত আইন ১৯৭৬ সালের ধারা ৭৬ দণ্ডবিধি অনুসারে প্রত্যেক ধর্ষণকারীর শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নীতি-আদর্শ-চরিত্র শুদ্ধ রাখার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করলেই ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস…।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট