নৈরাজ্য চলছেই পরিবহন খাতে , ব্যবস্থা নিলে জিম্মি হচ্ছে যাত্রীরা

নৈরাজ্য চলছেই পরিবহন খাতে , ব্যবস্থা নিলে জিম্মি হচ্ছে যাত্রীরা
অবৈধ যানবাহনে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আয়ান মুহাম্মদ ।।
চট্টগ্রামে বাস মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। চট্টগ্রাম ট্রাফিক বিভাগ ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বাস চলাচল। কখনো ঘোষণা দিয়ে কখনো আবার অঘোষিতভাবেই বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তারা। এতে যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়; বিভিন্ন রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বন্ধের আগের দিন বিশেষ করে বৃহস্পতিবার এলে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে সংশ্লিষ্ট রুটের যাত্রীদের মধ্যে থাকে ‘বৃহস্পতিবার আতঙ্ক।’ এ ছাড়া অবৈধ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনে সরকার গত ১২ বছরে শত কোটি টাকার অধিক রাজস্ব হারিয়েছে।
সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর ফিটনেস বিহীন গাড়ি চালানোর অপরাধে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমান আদালত একটি গাড়ির মালিক ও চালক হেলপরকে সাজা বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়ার ঘটনায় আকষ্মিকভাবে নগরীর সিংহভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এই অঘোষিত ধর্মঘটের কারণে দিনভর হাজার হাজার যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক বলেন, ‘ বাস মালিকদের কাছে জিম্মি নগরবাসী। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরাতে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমরা অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলেই তারা বাস চলাচল করে দিচ্ছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযানের নির্দেশ দিলেই সব সমস্যা সমাধান হবে বলে মনে করি। এতে  দূর পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে ফিটনেসবিহীন প্রায় ১০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে।  ১০ বছর  থেকে ১২ বছর যাবৎ বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নবায়ন না করেই এসব গাড়ি চালানো হচ্ছে।  এতে  সরকার বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা করে ১২ বছরে একশ’ কোটি টাকার অধিক  রাজস্ব হারিয়েছে। । পরিবহন মালিকরা ইচ্ছে করেই এসব গাড়ি ফিটনেস নবায়ন করছেন না। গাড়ির গ্ল¬াস, লাইট, জানালা ভাঙা। তারপরও রাস্তায় ত্রুটিপূর্ণ  লক্কর-ঝক্কর এসব যানবাহন চলাচল করছে। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। শুধু মহানগরীতে নয়, জেলায়ও এ  ধরনের  প্রায় ১৩ হাজার যানবহন রয়েছে। ফিটনেসবিহীনভাবে বছরের পর বছর চলাচল করছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাক, বাস, মিনিবাস, টেম্পো, সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ইত্যাদি। অটোরিকশা সবচেয়ে বেশি। অনেক অটোরিকশা ১৬-১৭ বছর অতিক্রম করেছে, তারপরও জোড়াতালি দিয়ে চলছে। কিন্তু ফিটনেস সার্টিফিকেট নেয়া হচ্ছে না।  ট্রাক, মিনি ট্রাক, বাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পু রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। যেসব যানবাহন ফিটনেস সনদ নেয় না। আবার এসব  ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলছে লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে। এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেই বিভিন্ন সংগঠন ঘোষিত বা অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে বসে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন রয়েছে এক ডজনের বেশি। বাস মালিকদের মধ্যে বৈধ ও অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৮টি সংগঠন রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে গণপরিবহন মালিকদের সাতটি সংগঠন রয়েছে। এগুলো হল- সিটি বাস-মিনিবাস ও হিউম্যান হলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ, সিটি বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টলা পরিবহন, যাত্রীসেবা পরিবহন, মহানগর পরিবহন, কালুরঘাট মিনিবাস মালিক সমিতি ও লুসাই পরিবহন। এসব সংগঠনের আহ্বানে মালিক-শ্রমিকরা ঠুনকো বিষয়েও ধর্মঘট ডেকে বা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে।  সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট ফিটনেস বিহনী গাড়ি চালানোর অপরাধে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট গাড়ির চালক হেলাপরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নগরীর বেশিরভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে লাখ লাখ যাত্রীকে দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
চট্টগ্রামের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নুরুল আবছার বলেন, ‘পরিবহনে নৈরাজ্য ঠেকাতে ট্রাফিক বিভাগে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা যায় ঠুনকো অজুহাতে অনেক সময় মালিক-শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট ডেকে বসে। অথচ কোন কারণ ছাড়া বা অযথা বাস চলাচল বন্ধ রাখলে সংশ্লিষ্ট যানবাহনের রুট পারমিট বাতিল করার বিধান রয়েছে। কিন্তু পরিবহন সংগঠনগুলোর চাপে ও নৈরাজ্যের ভয়ে অনেক সময় বিআরটিও সেই ব্যবস্থা নিতে পারে না।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা বলেন, ‘অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের আপত্তি নেই। ট্রাফিক বিভাগ অনেক সময় অহেতুক হয়রানি করে থাকে। আবার ভ্রাম্যমান আদালত হঠাৎ করে সর্বোচ্চ সাজা দেয় । এতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।