পুরো সাতকানিয়া মাশুল গুণছে একজনের জন্য, এক পরিবারেই ১২ করোনা রোগী

পুরো সাতকানিয়া মাশুল গুণছে একজনের জন্য, এক পরিবারেই ১২ করোনা রোগী
পুরো সাতকানিয়া মাশুল গুণছে একজনের জন্য, এক পরিবারেই ১২ করোনা রোগী

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ১৫ জন করোনা পজিটিভ রোগীই সাতকানিয়ায় এলাকার। চট্টগ্রামে ১৪টি উপজেলার মধ্যে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়াবহরূপে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণের উপজেলা সাতকানিয়ায়। এর মধ্যে ১২ জন সংক্রমিত হয়েছেন সাতকানিয়ায় প্রথম শনাক্ত হওয়া সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে। সিরাজুল ইসলামের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের বিষয়ে কঠোর ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই সংক্রমণটা ব্যাপক হবে না বলেই মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। পাশাপাশি ১৫ এপ্রিল থেকে চলা লকডাউনে বেশ কড়াকড়ি রয়েছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

সাতকানিয়ায় সর্বশেষ করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া গেল রোববার (২৬ এপ্রিল)। এদিন মাদার্শা ইউনিয়নের রূপনগরে একই পরিবারের ৬ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এদের সবাই গত ১৯ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া রোগীর পরিবারের সদস্য। পুরো সাতকানিয়া উপজেলা ১৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন করা হলেও এই পরিবারটিসহ মাদার্শার রূপনগরের ২৭টি পরিবার তারও তিনদিন আগে থেকে লকডাউনে ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

১৯ এপ্রিলের আগে সাতকানিয়ায় করোনা পজিটিভ মিলেছিল ১৪ এপ্রিল। ওইদিন একই সাথে ৫ জন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায় সাতকানিয়ায়। ওই ৫ জনের সবাই পশ্চিম ঢেমশার ইছামতি আলীনগরের বাসিন্দা। এরাও সকলে সংক্রমিত হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলামের সংস্পর্শে এসে।

এই ১২ জনকে সংক্রমিত করা রোগী সিরাজুল ইসলাম সাতকানিয়ায় শনাক্ত হওয়া প্রথম করোনা রোগী। ৬৯ বছর বয়স্ক এই ব্যবসায়ী ৯ এপ্রিল মারা যান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার পথে। তার শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ থাকায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠালে শনিবার (১১ এপ্রিল) জানা যায় তিনি করোনাভাইরাস নিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে তার জানাজায় অংশ নেয় তার স্বজনরা ছাড়াও স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ঘটনায় ৪০০ পরিবারের প্রায় ৪ হাজার মানুষকে লকডাউন করে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসন।

সাতকানিয়ায় করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়া বাকি ২ জন সাতকানিয়া পৌরসভার। ১২ এপ্রিল শনাক্ত হওয়া এই দুই জনের একজন ১৯ বছর বয়সী কিশোর। সে ৩ দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতকানিয়ায় ফিরেছিল। নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরার পর তার বেশ কজন বন্ধুও তার সংস্পর্শে আসে। ৩২ বছর বয়সী অন্যজন পেশায় ঠিকাদার। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সংক্রমিত হয়েছেন টেরিবাজার থেকে সাতকানিয়ার বাড়িতে ফেরা তার বন্ধুদের দ্বারা। তবে এই দুই জনের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদের কারও মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ-আলম বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে চট্টগ্রামে আমাদের উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এদের সবাই প্রায় একজনের দ্বারাই সংক্রমিত হয়েছেন। ১৫ এপ্রিল থেকে পুরো উপজেলাই লকডাউন। প্রথম দিকে মানুষ খুব একটা সচেতন না হলেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে অনেক। আমরা কারও মধ্যে সিম্পটম দেখলেই টেস্ট করানোর ব্যবস্থা করছি। রোববার যে ৬ জন শনাক্ত হলো ওই পরিবারের ৮ জনের নমুনা পাঠিয়েছিলাম আমরা।’