প্রধানমন্ত্রী আবারও কাঁদলেন এবং কাঁদালেন

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

প্রধানমন্ত্রী আবারও কাঁদলেন এবং কাঁদালেন
প্রধানমন্ত্রী আবারও কাঁদলেন এবং কাঁদালেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন । এ সময় স্মৃতিকাতর হয়ে কেঁদে ফেলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ।

আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর ও দক্ষিণ) আয়োজিত আলোচনা সভায় এ নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্না করেন তিনি। বক্তব্যের মাঝে বারবার শেখ হাসিনাকে আবেগাপ্লুত হয়ে কাঁদতে এবং চোখের জল মুছতে দেখা যায়। এ সময় উপস্থিত অনেককে চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে অতীতেও বিভিন্ন সময় ১৫ আগস্টের নিষ্ঠুরতার কথা বলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে কাঁদতে দেখা গেছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।

পরিবারের সদস্যদের হারানোর দিনটির নির্মমতার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন, ১৫ আগস্ট কালিমালিপ্ত একটি দিন।’

এ সময় কেঁদে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘৩২ নম্বরের ওই বাড়িতে কোনো জীবিত সদস্য ছিল না। সবাইকেই নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আর রাসেলকে সবার শেষে, বাবা-মা সবার লাশের পাশে নিয়ে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করেছিল। আমার ছোট্ট ভাইটি মাত্র ১০ বছরের। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পরের দিন আমার মাসহ অন্যদের লাশ বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়। তাদের কোনো কাফন-দাফন ও জানাজা হতে দেওয়া হয়নি।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘আব্বার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গীপাড়ায়। টুঙ্গীপাড়া তখন দুর্গম পথ, ঢাকা থেকে নৌপথ ছাড়া যাওয়া যেত না। ২২ থেকে ২৪ ঘণ্টা লাগতো, নৌপথে টুঙ্গীপাড়া যেতে। খুনিরা ভেবেছিল আর কখনো সেখানে কেউ পৌঁছাতে পারবে না। শুধু সেখানে নিয়েই যায় না, ওই বাড়িটাও তারা দীর্ঘদিন সিল করে দেয় এবং দখল করে রাখে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সে সময় কাফনের কাপড় পাওয়া যায়নি। দোকানপাট তেমন ছিল না। কারফিউ জারি করার কারণে সবই বন্ধ। রেডক্রসের একটি হাসপাতাল ছিল, রিলিফের কাপড় দেওয়া হতো সেখান থেকে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধুই রিলিফের কাপড় সবকিছু রেডক্রসের মাধ্যমে সেখানে রেখেছিলেন। সেখান থেকে কয়েকখানা রিলিফের কাপড় নিয়ে এসে কাপড়ের পাড় ছিঁড়ে সেই কাপড় দিয়ে তাকে দাফন করা হয়। তিনি (বঙ্গবন্ধু) কিছু নিয়ে যাননি। বাংলাদেশের জনগণের কাছ থেকে কিছু-ই নেননি। তার গরিব মানুষ, দুঃখী মানুষ; তাদের তিনি যা দিতে পারতেন। সেই কাপড় দিয়েই তার কাফন হয় এবং সেটা আর কিছু না।’

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, ‘১৫ আগস্ট সেই তাকেই নির্মমভাবে হত্যা করলো কারা? এই বাংলাদেশের কিছু মানুষ। যেটা কোনোদিন বিশ্বাস করতে চাননি তিনি। অনেকেই বলেছেন কিন্তু কোনোদিন এটা গ্রহণ করতে পারেননি যে, এই দেশের মানুষ তাকে কখনও এভাবে হত্যা করতে পারে। আরও অবাক লাগে যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা প্রতিনিয়ত আমাদের বাড়িতে আসতো। এদের ভেতরে এই চক্রান্ত ছিল, এই ষড়যন্ত্র ছিল এটা কখনো তিনি (বঙ্গবন্ধু) স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। আমরাও চিন্তা করতে পারিনি যে, এতবড় বেঈমানি, মোনাফেকি কোনো মানুষ করতে পারে!’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড যে শুধুমাত্র একটা পরিবারকে হত্যা, তা নয়। এই হত্যার মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাস একেবারে মুছে ফেলে। এদেশের স্বাধীনতা, এদেশের ভাষা আন্দোলন, এদেশের প্রতিটি সংগ্রামে জাতির পিতার যে অবদান সেটা মুছে ফেলা হয়েছিল। তার নামটা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কোথাও তার নামটা নেওয়া যেত না। ওই ৭ই মার্চের ভাষণ বাজানো যেত না।’

১৫ আগস্টের নির্মমতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যদি একটু চিন্তা করে দেখেন, যেভাবে নারী হত্যা, শিশু হত্যা- ঠিক ’৭১ এর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল ঠিক মনে হল সেই ঘটনাই। কারবালার ময়দানের যে ঘটনা, মনে হল সেই কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ৩২ নম্বরে। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, আমাদের দুটি বোনের, মাত্র ১৫ দিন আগে আমরা বিদেশে চলে যাই। তখন তো ভাবতেও পারিনি, এই রকমভাবে এই বাংলাদেশের মানুষ- এমন একজন মানুষকে হত্যা করলো, যে তাদের পরিচয় দিয়ে গেল, একটা দেশ দিয়ে গেল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিল আর তাকেই হত্যা করেছে। যে জাতি ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিজয় অর্জন করে বিশ্বব্যাপী বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মান পেয়েছিল, সে জাতি খুনি জাতি হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিত হলো।’

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির শীর্ষ ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।