বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল  - ড. আব্দুল ওয়াদুদ 

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল  - ড. আব্দুল ওয়াদুদ 
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল  - ড. আব্দুল ওয়াদুদ 

উন্নয়ন’ হলো এমন একটি তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ, যার কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নেই। 'উন্নয়ন’ শব্দটির সমার্থক শব্দসমূহের মধ্যে আছে বিস্তৃতি, প্রসারণ, বিবর্তন, বৃদ্ধি, প্রগতি, অগ্রগতি, উত্তরণ, বিকাশ ইত্যাদি। আবার 'উন্নয়ন' শব্দের বিপরীতার্থক শব্দগুলোর মধ্যে যা আছে তা হলো- প্রত্যাবৃত্তি, পশ্চাদগমন করা, প্রত্যাবর্তন করা ইত্যাদি।

সাধারণভাবে বলা যায় – উন্নয়ন হলো অগ্রগতি, বৃদ্ধি অথবা ব্যাপকতার ফল স্বরূপ প্রাপ্ত হয়েছে এমন কিছু। অভিধানে উন্নয়নকে সংক্ষেপে বলা হয়েছে, "A process of unfolding, maturing and evolving."(উদঘাটন,পরিপক্কতা এবং বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া)। উন্নয়নের এই অর্থ ও ধারণা মানব সমাজের ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য। উন্নয়ন হলো কোনো কিছুর কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন বা উত্তরণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নয়ন  অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে দেশ তথা জাতিকে আধুনিকায়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ও দেশের সঞ্চয়, বিনিয়োগ, উৎপাদন এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধি এসব নিশ্চিত করা। অ্যাডাম স্মিথ জাতীয় উন্নয়ন বলতে সামগ্রিকভাবে পুঁজি সঞ্চয়নকে বুঝিয়েছেন। পূর্বে  অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবক্তারা মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধিকে জাতীয় উন্নয়ন মনে করতেন।

ষাটের দশকে বলা হতো জাতীয় আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা  দেশের উন্নয়ন হয়। কিন্তু জাতীয় আয় উন্নয়নের প্রকৃত অর্থ বহন করে না। কারণ জাতীয় আয়কে দেশের মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে মাথাপিছু আয় দেখালেও জনসাধারণ তার সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।

সত্তরের দশকে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ সামনে রেখে প্রবৃদ্ধির পুনর্বন্টনের দৃষ্টিকোণ থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাখ্যা দেয়া হয়, এর পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক উন্নয়ন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গও জুড়ে দেওয়া হয়। তবে সত্তরের দশকে প্রচলিত উন্নয়নের সংজ্ঞায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রসঙ্গ বাদ থেকে যায়।

জাতীয় আয় যদি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয় তবে তাকেই প্রকৃত উন্নয়ন বলা যাবে।

Schumpeter এর মতে উন্নয়ন হচ্ছে  "The development is a spontaneous and discontinuous change in the channels of the circular flow, disturbance of equilibrium state previously existing" (উন্নয়ন হলো বৃত্তাকার প্রবাহের চ্যানেল গুলির একটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং অবিচ্ছিন্ন পরিবর্তন, ভারসাম্যের ব্যাঘাত যা পূর্বে বিদ্যমান ভারসাম্যের অবস্থাকে চিরতরে স্থানচুত্য  করে)।

কিন্ডলেবার্গার বলেছেন, "উন্নয়ন হলো কাঠামোগত পরিবর্তনের সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি“। বয়ার বলেছেন, "উন্নয়ন হলো জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধাদির পছন্দগত সম্প্রসারণ”।

হার্বিসন ও মায়ার্স বলেছেন "অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় একটি দেশের মানুষের প্রকৃত মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়“।

Paul Stitin, James Grants (১৯৭০) এবং আরো কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন, "সকল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণই হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন“। ILO বলেছে, "মানুষের জন্যে খাদ্য ও পুষ্টি, মৌলিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, গৃহায়ন ইত্যাদি সুবিধা সৃষ্টি করাই উন্নয়ন“।

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন "উন্নয়ন হলো মানুষের স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়া“। তিনি মনে করেন, "Development means freedom“ (উন্নয়ন মানে স্বাধীনতা)। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন প্রমাণ করেছেন যে, শুধু নিম্ন আয়ই নয়; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার পশ্চাদমুখীতাই দারিদ্রের অন্যতম কারণ।

Meir এবং Baldwin অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা অনেকখানি সন্তোষজনক। "Economic  development is a process through which the per capita real national income of a country increase over a long" (অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি দেশের মাথাপিছু প্রকৃত জাতীয় আয় দীর্ঘকাল ধরে বৃদ্ধি পায়)। 

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (UNDP) মতে, "উন্নয়ন বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যা মানুষকে তার পছন্দমতো জীবনযাত্রার সুবিধা ও মান বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়"।

মোট কথা উন্নয়ন হলো একটি অব্যাহত পরিবর্তন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে কোনো দেশের জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি ঘটবে, সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে, সম্পদের সুষম বণ্টন সম্পন্ন হবে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মৌলিক চাহিদা অপেক্ষাকৃত স্থায়ীভাবে পূরণ করা সম্ভব হয়।

উন্নয়ন একটি ধ্রুপদী ধারণা। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ এখন সরকারের যে কোনো ইতিবাচক পরিকল্পনা ও কর্মসূচিকে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের লক্ষ্য মনে করে। ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। এটি একসময় সম্ভব ছিল না। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের তথাকথিত হাইপোথ্যাটিক্যাল ধারণার পরিবর্তে প্রযুক্তিনির্ভর বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার মাধ্যমে বাস্তবধর্মী কর্মপরিকল্পনার সূচনা করেন। যাকে ডিজিটাল ধারণা বলা হয়। ২০১০ থেকে ২০২১ সালের পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় দুটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা; ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১১-২০১৫) ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২০২১) বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নের যুগপৎ যাত্রা শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদও। উন্নয়নের কৌশলকে তিনি অবিভাজ্য নীতিতে বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাকে সামাজিক উন্নয়নের পরিধিতে ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে গেছেন, ফলে কার্ল মার্কসের অর্থনীতির উপরি কাঠামো এতদিন যেটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেটি এখন শেখ হাসিনার প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে, যা 'শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল' হিসেবে চিহ্নিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ভেবেছেন প্রযুক্তিগত জ্ঞান ছাড়া অর্থনীতির সুফল জনগণের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কারণ জনগণ যদি অর্থের ব্যবহার তার শিক্ষা স্বাস্থ্য কিংবা লাভজনক চিন্তায়  বিনিয়োগ করতে না পারেন তাহলে সে অর্থ কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে না। Aristotle বলেছিলেন, "Now it is evident that's the form of government is best in which every man whoever he is can act best and live happily" (এখন এটা প্রতীয়মান হয় যে, সে সরকারের ধরনই সর্বোত্তম যেখানে প্রতিটি মানুষ যেই হোক না কেন সর্বোত্তম আচরণ করতে পারে এবং সুখে জীবন যাপন করতে পারে)।  জননেত্রী শেখ হাসিনার সুশাসন এই ধ্রুপদী তত্ত্বটিকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কাছে একটি প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। 

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বদেশে ফিরে এসে একটি কপর্দকহীন অর্থনীতি পেয়েছিলেন। উপরন্তু পাকিস্তানের কাছে প্রাপ্য ৫০০ কোটি ডলার অর্থফেরত পাওয়া যায়নি।মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বড় বড় প্রকল্পের অর্থ যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। যার অর্থের জোগান বঙ্গবন্ধুকে দিতে হয়েছিল। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল বিধ্বস্ত, অফিস-আদালত ছিল কর্মঅযোগ্য। তবুও বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে রাতদিন পরিশ্রম শুরু করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জনগণের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৮ ডলার, যা ছিল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। অর্থনীতির এমন অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সরকার লাখ লাখ বেকারকে চাকরি প্রদান , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, শিল্প-কলকারখানা চালুকরণ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা ছিল চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৩-৭৪ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮২ শতাংশ এবং ১৯৭৫-৭৬ সালে ৩৮০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকারের উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করতে, সে সময় জাসদ ও পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টিসহ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তি নানাভাবে অপতৎপরতা চালিয়েছে।

তারপরও মাত্র সাড়ে ৩ বছরের বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান, বিচারপতি সাত্তার, জেনারেল এরশাদ এবং বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট দ্বারা শাসিত বাংলাদেশের উন্নয়ন নীতি ছিল বিদেশি ঋণনির্ভর ও দলীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমর্থকদের কল্যাণ। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৪ হাজার ২০০ মেগওয়াট আর 'শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল'-এ ২০০৯ থেকে গত ১১ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগওয়াটের বেশি। গত ১০ বছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি। 

কোভিড-১৯ কারণে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হলেও ২০১৫ থেকে ২০১৯ জিডিপি বেড়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। লক্ষণীয় বিষয় হলো একই সময়ে ভারতে এ হার ছিল ৬ এবং পাকিস্তানে ৫ শতাংশের নিচে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িযেছে এখন ২৮২৪ মার্কিন ডলারে আর অর্থনীতির আকার ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা টাকার হিসেবে ৩৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে,  মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পসহ এরকম মেগা প্রকল্প দেশের অর্থনীতির চাঙাভাবকে মনে করিয়ে দেয়। দেশের অর্থনীতির এই অগ্রগতির সঙ্গে সামাজিক অগ্রগতিও হচ্ছে সমান্তরাল গতিতে। জনগণের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। প্রতিহাজারে শিশু মৃত্যুহার ৩১ অথচ ৯০-এর দশকে এ হার ছিল হাজারে ১৪৪। এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) সফলতার সঙ্গে পূরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা) পূরণে এরই মধ্যে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে

'শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল' এর কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে এখন ২০ দশমিক ৫। অর্থনীতির সঙ্গে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরসহ সরকারের ২৯টি বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এ মডেলে যেসব কর্মসূচি চলমান রয়েছে সংক্ষেপে তা হলো বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার, দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, জটিল রোগীদের আর্থিক সহায়তা, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা তহবিল, অনাথ আশ্রম কর্মসূচি, প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের উপবৃত্তি, হিজড়া, বেদে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উপবৃত্তিসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। 

'শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল' একটি প্রযুক্তিনির্ভর সমন্বিত মডেল। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সফলতার একমাত্র উদ্ভাবক জননেত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের ধ্রুপদী তত্ত্বকে শেখ হাসিনাই শুধু প্রায়োগিক মডেল হিসেবে বাস্তবতার নিরিখে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। যেখানে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অর্থ একসঙ্গে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারণাকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। আর যখন তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে তখনই উন্নয়নের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এটি উন্নয়নের রাষ্ট্র মডেলের সঙ্গে সাদৃশ্য। ‘শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল’-এ গত নভেম্বরে (২০২১) বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটেছে। আগামী দিনে এসডিজি, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সমন্বিত কর্মসূচি যুগপৎভাবে সম্পাদিত হলে সারা বিশ্বে 'শেখ হাসিনা উন্নয়ন মডেল’ আরো বেশি অনুকরণীয় ও ব্যাপকভাবে সমাদৃত হবে।

বঙ্গবন্ধুর পর জননেত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার ১৮ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের স্বর্ণালি সময়, যা আজও অব্যাহত আছে। অর্থনীতি ও উন্নয়ন, সমাজনীতি, সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা, পররাষ্ট্রনীতিসহ সব খাতকে প্রধানমন্ত্রী ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, একসময়ের দরিদ্রতম দেশটি আজ ৩৫ তম অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড রিসার্চের (সিইবিআর) সমীক্ষামতে, বর্তমান ধারায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি বিশ্বে ২৫তম অর্থনীতির দেশ হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ও প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ঝুঁকির কারণে কাঙ্খিত উন্নয়নের দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ 'ব-দ্বীপ' পরিকল্পনা নামে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। সমগ্র বাংলাদেশ এই মহাপরিকল্পনার আওতাভুক্ত। সর্বশেষ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে বেশি পরিচিত শত বছরের এ মহাপরিকল্পনার অনুমোদন দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ২১০০ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে

২০৩০ সালের মধ্যে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় হবে প্রায় ৫ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও অভীষ্ট লক্ষ্যে অবিচল থেকে সব চ্যালেঞ্জ এবং ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আর এসবই সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা আর কূটনৈতিক দক্ষতার কারণে। মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত শেখ হাসিনা আজ 'Mother of Humanity' (মানবতার জননী)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী 'দ্য ফরেন পলিসি’র করা 'প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা' ক্যাটাগরিতে সেরা ১০ চিন্তাবিদের তালিকায় উঠে এসেছে জননেত্রী শেখ হাসিনার নাম। মার্কিন প্রভাবশালী সাময়িকী ফোর্বসের চোখে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ১০০ নারীর তালিকায় ২৬তম স্থানে রয়েছেন প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।

বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায়ও স্থান পেয়েছেন তিনি। বিশ্বের সেরা পাঁচ নীতিবান নেতার একজন হলেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা; বলছে নাইজেরিয়ার প্রভাবশালী দৈনিক ডেইলি লিডারশিপ। বর্তমান বিশ্বে এশিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেত্রী হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা

নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকতে শেখ হাসিনা একের পর এক যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চমক দেখাচ্ছেন তাতে বাংলাদেশ-বিরোধী অশুভ শক্তির মুখে চুনকালি লেগেছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারকে যে কোন মূল্যে উৎখাতের লক্ষ্যে যে বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, সেই ষড়যন্ত্র যে ভণ্ডুল হয়েছে সেটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন নিয়ে নির্বাচনের বছরে নানা বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং অশুভ কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছিল। কেউ কেউ সন্দিহান ছিলেন, শেখ হাসিনা এতো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও কূটনৈতিক মারপ্যাঁচ মোকাবেলা করতে পারবেন কিনা।

নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস পূর্বে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে সুউচ্চ মর্যাদা দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাতে বুঝা গিয়েছে শুধু ভারতই যে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সেটি নয়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে তথা বিশ্ব ব্যবস্থায় শেখ হাসিনার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সরকার প্রধান যিনি এই জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরল সম্মান। শুধু তাই নয়, জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের ঠিক আগের দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনজন রাষ্ট্রনায়কের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। তারা হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় বংশোদ্ভুত মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবীন্দ কুমার জগন্নাথ। এতে বুঝা যায়, ভারতের কাছে শেখ হাসিনার গুরুত্ব ও সম্মান কতটুকু।বাইডেনের সাথে নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের আগে শেখ হাসিনার সাথে তার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বানে আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নপূরণের একমাত্র পথ। এই সময়ের বাংলাদেশে তিনি একজন ব্যক্তি মাত্র নন, ব্যক্তির ঊর্ধ্বে গণমানুষের আশা-জাগানিয়া বাতিঘর ও অভিভাবক। নিজেকে নিয়ে আত্মবিসৃত কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য একজন অক্লান্ত অতন্দ্র প্রহরী। সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা-রাত কেটে যায় দেশ-মানুষের মঙ্গল চিন্তায়। তিনি দীর্ঘ জীবনের সুস্থতা নিয়ে আমাদের মাঝে সজীব থাকবেন এই প্রত্যাশা আমাদের। বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরাধিকার জননেত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে। আজ উন্নয়নের এই মাহেন্দ্রক্ষণে মনে পড়ে কবি ত্রিবিদ দস্তিদারের কবিতার পঙক্তি - "আপনিই তো বাংলাদেশ"।

লেখক - ড. আব্দুল ওয়াদুদ, ফিকামলি তত্ত্বের জনক, শিক্ষাবিদ, লেখক, গবেষক,  রাজনৈতিক বিশ্লেষক; প্রেসিডিয়াম সদস্য - বঙ্গবন্ধু পরিষদ ; প্রধান পৃষ্ঠপোষক - বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি।

খালেদ / পোস্টকার্ড;