বহুল প্রত্যাশিত ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস খুলে দেয়া হচ্ছে ডিসেম্বরে

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

বহুল প্রত্যাশিত ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস খুলে দেয়া হচ্ছে ডিসেম্বরে
বহুল প্রত্যাশিত ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস খুলে দেয়া হচ্ছে ডিসেম্বরে

বহুল প্রত্যাশিত ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক আগামী ডিসেম্বরে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। ডিসেম্বরে যান চলাচল শুরু হলেও রাস্তাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে মার্চে। এখন এই প্রকল্পের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি ব্রিজসহ ৬ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ কাজ প্রায় শেষ । বাইপাসটি চালু হলে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ, আবাসন, শিল্পায়ন ও পর্যটনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রথম বাইপাস রোড হিসেবে নির্মিত রাস্তাটি চালু হলে শহরে তীব্র যানজট সৃষ্টিকারী গাড়ি গন্তব্যে যেতে পারবে সেগুলো শহরে প্রবেশ না করেই ।

এদিকে নগর বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের লোকসংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়ছে যানবাহন। ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি বাড়ছে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেনার মোভারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। মানুষ ও যানবাহন দুইটি বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শহরে প্রতি বছর গড়ে দশ শতাংশ লোক বৃদ্ধি পেলেও রাস্তার সংখ্যা সেই অনুপাতে বাড়েনি। একটি নগরীতে যে পরিমাণ রাস্তা প্রয়োজন তা চট্টগ্রামে নেই। মানসম্পন্ন একটি নগরে অন্তত ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকতে হয়। অথচ চট্টগ্রামে রাস্তার পরিমাণ ১৫ শতাংশেরও কম বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এতে বহু বছর ধরে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে বেহাল দশা বিরাজ করছে ।
যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বন্দরনগরী পরিণত হয়েছে ভয়াবহ এক যানজটের নগরীতে । নগরীর বাইরে দিয়ে যে সব গাড়ি চলাচল করতে পারে সেই সব গাড়ি ভেতর দিয়ে চলাচল করার কারণে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। উত্তরাঞ্চল কিংবা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গাড়িগুলো রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার , টেকনাফে যাতায়াত করে নগরীর ভেতর দিয়ে। এতে নগরীর একটি বড় অংশে যান চলাচলে প্রভাব ফেলছে। নগরে প্রবেশ করার প্রয়োজন নেই এমন গাড়িগুলো বাইপাস না থাকায় নগরীর ভেতর দিয়ে চলাচল করছে। প্রতিদিন রড ও স্টিল আনা নেয়ার জন্য অসংখ্য লরি নগরীর ভেতর দিয়ে নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় যাতায়াত করে ।
বিশাল বিশাল গাড়িগুলো জাকির হোসেন রোডে যে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে তা পুরো এলাকার যানবাহন চলাচলে প্রভাব পড়ে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সড়কটি নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সময় গৃহীত প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালে একনেকে পাশ হয়। এরপর ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফৌজদার হাট থেকে কাজ শুরু হয়। নির্মিত হয় ব্রিজসহ নানা স্থাপনা। এর মধ্যে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। রাস্তাটির কাজ নিয়ে ।

এই রাস্তার জন্য যখন ভূমি হুকুম দখল করা হয় তখন এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটিকেও ১০৪ একর ভূমি প্রদান করা হয়েছিল। রাস্তা নির্মাণের সময় দেখা যায় যে প্রায় ৪ হাজার ফুট বা ১.২২ কিলোমিটার রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪ একর এলাকার মধ্যে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তাদের ভেতর দিয়ে রাস্তা যাওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি তোলে। এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটি সিডিএ কর্তৃক নির্মিত রাস্তার ওই অংশটি তাদের নিকট হস্তান্তর করে ক্যাম্পাসের বাইরের অংশ দিয়ে নতুন রাস্তা তৈরির দাবি জানায়। ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তা তারা অভ্যন্তরীণ রোড হিসেবে ব্যবহার করবে এমন শর্তও জুড়ে দেয়। সিডিএ আপত্তি করলে বেঁকে বসে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটি। এক পর্যায়ে নারী শিক্ষার অনন্য এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেয়ার হুমকিও দেয়া হয়।

এতে রাস্তাটির বিভিন্ন অংশ নির্মিত হলেও কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরিত্যক্ত হয়ে যায় পুরো প্রকল্প। পরবর্তীতে নানা দেন-দরবারের পর রাস্তাটি নির্মাণের গুরুত্ব সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তুলে ধরা হয়। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এশিয়ান উইম্যান ইউনির্ভাসিটির ভেতর দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি তাদের ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশ ঘেঁষে নতুন রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। নতুন করে গ্রহণ করা হয় প্রকল্প। ব্যয় নির্ধারণ হয় প্রায় ২১০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরো কিছু খরচ কমিয়ে প্রকল্প ব্যয় ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়। আগের কাজগুলো পরিত্যক্ত হয়। প্রকল্প ব্যয় উন্নীত হয় ৩২০ কোটি টাকায়। ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার জন্য ৯১৯.৭৮ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। একটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ নির্মাণসহ ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কয়েকটি কালভার্টও রয়েছে।

পাহাড়ের ভেতর দিয়ে পাহাড়ের ক্ষতি না করেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ে যাতে পানি জমে সড়কের ক্ষতি কিংবা পাহাড় ধসের মতো অঘটন না ঘটে সেজন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, রাস্তাটিতে প্রচুর লোকজন কাজ করছে। ড্রেন নির্মাণের পাশাপাশি রাস্তার কাজও চলছে। রাস্তাটির প্রায় কাজই শেষ হয়েছে। তবে এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির পাশে আধা কিলোমিটারেরও বেশি অংশে মাটির কাজ চলছে। এই কাজটুকু শেষ হলেই পুরো রাস্তাটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রাজিব দাশ বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। যেটুকু আছে তা করতে আর বেশি দিন লাগবে না।

রাস্তাটি চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইপাস হিসেবে ব্যবহৃত হবে। রাস্তাটি বায়েজিদ রোডের সাথে যুক্ত হবে। বায়েজিদ রোড অঙিজেন মোড়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে অঙিজেন-কুয়াইশ সড়কের সাথে। এতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা গাড়িগুলো উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাইসহ বিভিন্ন অঞ্চলে কিংবা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজারসহ দক্ষিণ শহরে প্রবেশ না করে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। যান চলাচলের পাশাপাশি ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ সড়কটি নির্মিত হলে পুরো এলাকাটি হয়ে উঠবে জমজমাট ।

তবে এক্ষেত্রে বাইপাস মোড়ে চার রাস্তার সংযোগস্থল হওয়ার কারণে সীতাকু-ের ফৌজদারহাটস্থ বাংলা বাজার বাইপাস এলাকার ঢাকা - চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে ।