বোয়ালখালীর ভূমি ব্যবস্থাপনা বদলে দিয়ে সীতাকুণ্ডে 

বোয়ালখালীর ভূমি ব্যবস্থাপনা বদলে দিয়ে সীতাকুণ্ডে 
এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) আলাউদ্দিন।

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

বোয়ালখালীর ভূমি ব্যবস্থাপনা বদলে দিয়ে সীতাকুণ্ডে আসলেন এসি ল্যান্ড আলাউদ্দিন। একটা সময় ছিল চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা ভূমি অফিসে নথি গায়েবের ঘটনা ঘটতো । সেই নথি খুঁজে পেতে সময় লাগতো দিনের পর দিন, কখনো আবার মাসের পর মাস!

এখন আর নথি গায়েব হওয়ার সুযোগ নেই। সেই নথি গায়েবের হাত থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে এবং নথি যেন সহজে খুঁজে পাওয়া যায় সেজন্য বোয়ালখালীতে ‘ডিজিটাল রেকর্ড রুম’ প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে ডিজিটাল রেকর্ড রুম থেকে ৫ মিনিটের মধ্যেই যেকোনো নথি খুঁজে বের করা সম্ভব হচ্ছে। এতে জনগণের হয়রানি কমেছে, কমেছে সময় ও অর্থের অপচয় ।

২০২২ সালের ৭ আগস্ট বোয়ালখালী উপজেলার এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) পদে দায়িত্ব নেন আলাউদ্দিন। এরপর থেকে ডিজিটাল রেকর্ড রুম প্রস্তুত থেকে শুরু করে আরও নানা জনবান্ধব উদ্যোগ নেন তিনি।

এসি ল্যান্ড আলাউদ্দিনের গত এক বছরের প্রচেষ্টায় বোয়ালখালী উপজেলার সকল বিএস এবং আরএস মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজ করা হয়েছে। ডিজিটাইজ মৌজা ম্যাপের সাথে ভূমি সংক্রান্ত রেকর্ডগুলো সংযুক্ত করে একটি স্মার্ট ভূমি ম্যাপও প্রস্তুত করা হয়েছে। এই স্মার্ট ভূমি ম্যাপের মাধ্যমে অফিসে বসেই জমির অবস্থান, অবস্থা, পরিমাণসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে।

এছাড়াও খাস, অর্পিত, পরিত্যক্ত, সিকস্তি, সায়রাত মহাল, সংস্থার জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। তহসিলদারগণ ব্যবহারভিত্তিক ভূমি উন্নয়ন কর নিতে পারছেন। এই স্মার্ট ম্যাপের মাধ্যমে খাস জমি, নদী-খাল ও রাস্তার জমি দখলকারীদেরও চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, অর্পিত সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে ডাটাবেজ প্রস্তুত করে অর্পিত জমিগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। যার ফলে গত এক বছরে বোয়ালখালী উপজেলায় অর্পিত সম্পত্তির লিজ ফি আদায়ের হার দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানান এসি ল্যান্ড আলাউদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘মিস মামলায় মানুষজন যেন হয়রানির শিকার না হন, সে লক্ষ্যে সপ্তাহে দুদিন শুনানি নিয়ে মিস মামলার জট কমানো হয়েছে। প্রায় শতভাগ নামজারি ২৮ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা হচ্ছে।’

ওয়ারিশ সনদ যেন জাল না হয় সে লক্ষ্যে কিইউআর কোড যুক্ত অনলাইন ওয়ারিশ সনদ ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে জানিয়ে এসি ল্যান্ড আলাউদ্দিন বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মামুন স্যারের নির্দেশনা এবং সহযোগিতায় কাজটি করেছি। যা বর্তমানে বোয়ালখালীর নয়টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় চলমান আছে।’

বোয়ালখালীর শাকপুরার বাসিন্দা নান্টু পাল জানান , ডিজিটাল সেবার কারণে ভূমি কার্যালয়ে না গিয়েই ভূমিসেবা গ্রহণ করা যাচ্ছে। ঘরে বসেই অনলাইনে জমির নিবন্ধন, নামজারি, খাজনাসহ সব ধরনের কাজ করা যাচ্ছে। এতে সময়, শ্রম এবং খরচ—সবই সাশ্রয় হচ্ছে।

অন্যদিকে আদালতের আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভূমিসংক্রান্ত সব রেকর্ড এখন ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করায় সহজেই জমির মালিককে সেবা দিতে পারবে বোয়ালখালী ভূমি অফিস। স্মার্ট ভূমি ম্যাপ তৈরির ফলে খাস জায়গা, নদী-খাল ও রাস্তার জায়গা রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

এসি ল্যান্ড আলাউদ্দিন বলেন, বোয়ালখালী উপজেলায় এসি ল্যান্ড হিসেবে কাজ করতে পারা আমার জন্য একটা সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। সহকর্মীরা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। ইউএনও স্যার আমাকে যেভাবে সাপোর্ট, পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছেন তা সারা জীবন মনে থাকবে।

বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মামুন বলেন, তিনি (আলাউদ্দিন) খুব ভালো অফিসার। তিনি বোয়ালখালীর ভূমি ব্যবস্থাপনা বদলে দিয়েছেন। নানা উদ্যোগ নিয়ে ভূমিসেবা ত্বরান্বিত করেছেন। বিশেষ করে ডিজিটাল রেকর্ড রুম আমূল পরিবর্তন এনেছে ভূমি অফিসে। এছাড়াও সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও চিহ্নিতকরণে তিনি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। আমি আশা করি তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলায়ও ভালো করবেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;