ভালো কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান সবারই প্রত্যাশা, অতিরিক্ত প্রশংসা ক্ষতি

ভালো কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান সবারই প্রত্যাশা, অতিরিক্ত প্রশংসা ক্ষতি
ভালো কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান সবারই প্রত্যাশা, অতিরিক্ত প্রশংসা ক্ষতি

মাওলানা মাহমুদ হাসান ।।

ভালো কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান সবারই প্রত্যাশা। প্রশংসাও করা যায় কিন্তু সেটা যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর মাধ্যমে সমাজ শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ হয়। যে যতটুকু সম্মান প্রাপ্য তাকে সে স্থানেই রাখা চাই। এর কম হলেও সমস্যা, আবার বেশি হলেও সমস্যা। একজনের কৃতিত্বের প্রশংসা যেটুকু হওয়া সমীচীন ঠিক সেটুকুই করতে হবে। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত সম্মান ও অতি প্রশংসনীয় বাক্য ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে ইসলাম। ইসলাম মানুষকে ভারসাম্য হতে শেখায়। কোনো কাজেই সীমা লঙ্ঘন পছন্দ করে না। যেকোনো বিষয়ে অতিরঞ্জন করা মানেই মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত কর।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো, কাকুতি-মিনতি করে এবং সঙ্গোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না’ (সুরা আরাফ : ৫৫)। আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তায়ালা সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। তা দোয়ায় সীমা অতিক্রম করাই হোক কিংবা অন্য কোনো কাজে, কোনোটিই আল্লাহর পছন্দনীয় নয়। চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, সীমা ও শর্তাবলি পালন ও আনুগত্যের নামই ইসলাম। সালাত, সিয়াম, হজ, জাকাত ও অন্যান্য লেনদেনে শরিয়তের সীমা অতিক্রম করলে সেগুলো ইবাদতের পরিবর্তে গোনাহে রূপান্তর হয়।

বর্ণিত আছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল (রা.) স্বীয় পুত্রকে এভাবে দোয়া করতে দেখলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাতে শুভ্র রঙের ডান দিকস্থ প্রাসাদ প্রার্থনা করি।’ তিনি পুত্রকে বারণ করে বললেন, ‘বৎস, তুমি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাও এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাও। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, এমন কিছু লোক হবে যারা দোয়া এবং পবিত্রতার মধ্যে সীমা অতিক্রম করবে।’ (আবু দাউদ : ৯৬)

ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, মানুষকে তার যথাযথ সম্মান দেওয়া। অতিরিক্ত মর্যাদার অনেক কুফল রয়েছে। যা মর্যাদাকৃত ব্যক্তির ধ্বংস বয়ে আনতে পারে। আর এভাবেই বিশৃঙ্খলার গোড়াপত্তন হয়। তাই সব ক্ষেত্রেই চাই ভারসাম্য। মাইমুন ইবনু আবি শাবীব (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.)-এর সামনে দিয়ে একজন ভিক্ষুক যাচ্ছিল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি প্রদান করলেন। আবার তার সম্মুখ দিয়ে সজ্জিত পোশাকে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তাকে তিনি বসালেন এবং খাবার খাওয়ালেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।’ অন্য রেওয়াতে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আদেশ করেছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে।’ (রিয়াদুস সালেহিন : ৩৫৬)

সম্মান খুবই সেনসেটিভ ও স্পর্শকাতর একটা বিষয়। আর মুসলিম হিসেবে আমাদের এই মাপকাঠি ইসলাম থেকেই নিতে হবে। আর যদি তা না হয়, তবে আমাদেরকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। রাসুলের প্রশংসা করার ক্ষেত্রেও বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ রাসুল (সা.) ছিলেন সব সৌন্দর্যের অধিকারী। কারণ এ বাড়াবাড়ি অন্যান্য উম্মতকে পথভ্রষ্ট করেছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি উমর (রা.)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি কোরো না, যেমন ঈসা মারইয়াম (আ.) সম্পর্কে নাসারা সম্প্রদায় (খ্রিস্টানরা) বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’ (বুখারি : ৩৪৪৫)

প্রশংসা কীভাবে করবে তা আল্লাহর রাসুল আমাদের বলে গেছেন। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.)-এর সামনে এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তোমার জন্য আফসোস! তুমি তো তোমার সাথির গর্দান কেটে ফেললে, তুমি তো তোমার সাথির গর্দান কেটে ফেললে। তিনি এ কথা কয়েকবার বললেন, অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের প্রশংসা করতেই চায় তাহলে তার বলা উচিত, অমুককে আমি এরূপ মনে করি, তবে আল্লাহই তার সম্পর্কে অধিক জানেন। আর আল্লাহর প্রতি সোপর্দ না করে আমি কারও সাফাই পেশ করি না। তার সম্পর্কে ভালো কিছু জানা থাকলে বলবে, আমি তাকে এরূপ মনে করি।’ (বুখারি : ২৬৬২)

অপরদিকে অতিরিক্ত প্রশংসা মানুষকে অহঙ্কারী করে তুলতে পারে। হজরত মুয়াবিয়াহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা পরস্পরের সামনাসামনি প্রশংসা কোরো না, কেননা তা হত্যার সমতুল্য’ (ইবনে মাজাহ :৩৭৪৩)। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) এক ব্যক্তিকে অপর এক ব্যক্তির প্রশংসা করতে শুনে বললেন, ‘তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে’ কিংবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) বলেছেন, ‘তোমরা লোকটির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে’ (বুখারি : ২৬৬৩)।

আর অতিরিক্ত বা অবাস্তব প্রশংসায় মানুষ অহঙ্কারী হয়ে ওঠে। মিথ্যা ও অতিরিক্ত প্রশংসা শুনে মানুষ নিজের সম্পর্কে সেরূপ ধারণা পোষণ করতে থাকে; যে রূপ প্রশংসা করা হয়। পাশাপাশি অন্য লোকদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের নজরে দেখতে থাকে। আর সবসময় মানুষের কাছ থেকে অবাস্তব প্রশংসাবাণী শোনার জন্য উদ্গ্রীব থাকে। আর এটাই তার ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ সঠিক বোঝার ও আমল করার তওফিক দিন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;