মুক্তিযুদ্ধা ডা. এখলাছ আর নেই

মুক্তিযুদ্ধা ডা. এখলাছ আর নেই
মুক্তিযুদ্ধা ডা. এখলাছ উদ্দিন আর নেই

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

 

চট্টগ্রাম উক্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: মোঃ এখলাস উদ্দীন (৮৫) মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

আজ (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর মেহেদীবাগ ন্যাশানাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম সরোয়ার কামাল দুলুর বড় ভাই।

ডা. এখলাছ ১৯৩৮ সালের ২০ এপ্রিল সীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের বহরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম সৈয়দুর রহমান বার্মা রেলওয়ের হিসাব কর্মকর্তা ও পরে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সেক্রেটারি ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাগদাদেও কর্মরত ছিলেন তাঁর বাবা।

ডা. এখলাছ ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিক পাস করেন। আইএসসি উত্তীর্ণ হন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে। চট্টগ্রাম ও ঢাকা( মিটফোর্ড) মেডিকেল স্কুলে এলএমএফ কোর্স সম্পন্ন করেন। এমবিবিএস পরীক্ষা চলাকালীন স্বাধীনতাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় তা আর শেষ করতে পারেন নি। 

স্কুলজীবন থেকে ডা. এখলাছ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে জাতির প্রতিটি অপরিহার্য আন্দোলন- সংগ্রামে রয়েছে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মেডিকেল স্কুলে ১৭০ দিন ধর্মঘট করে চট্টগ্রাম মেডিকেল স্থাপনেও তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৮ সালের আইয়ুবের সামরিক শাসনের সময়েও হুলিয়া জারি হলে তাঁকে বগুড়া, কুষ্টিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে আত্মগোপন করে থাকতে হয়। ১৯৬৮ সালে সীতাকুণ্ড থানা আওয়ামী লীগের প্রথম সক্রিয় কমিটি গঠিত হলে ডা. এখলাছ ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তাঁর ওপর চরম নির্যাতন চালায়। ১৯৭১ সালে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতের হরিণা ক্যাম্পে প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও মোটিভেটর ছিলেন তিনি। এ ছাড়া যুবশিবির ও শরণার্থী শিবির দেখভাল দায়িত্বও তাঁর ওপর ছিল।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের পর ডা. এখলাছ সীতাকুণ্ড এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সিভিল প্রশাসন স্থাপন করেন।স্থানীয় এমপির অনুপস্থিতিতে তিনি ডেপুটি এডমেনিস্ট্রেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সার্বক্ষণিক রাজনীতি করতে গেয়ে ডা. এখলাছকে বিভিন্ন সময়ে আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। ’৭১ সালে সীতাকুণ্ডের বড়দারোগাহাটে তার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এছাড়া বহরপুরে তাঁর গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় পাকবাহিনী। ড. কামাল হোসেনের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করার সময় সীতাকুণ্ড বাজারস্থ তাঁর চেম্বার পুড়িয়ে দেয়া হয়।

১৯৬০ সালে ডা. এখলাছ ফটিকছড়ির রোসাংগিরির জমিদার আরমান আলী চৌধুরীর কনিষ্ট কন্যার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর এক ছেলে ও পাঁচ মেয়ে; সকলেই উচ্চশিক্ষিত। একমাত্র ছেলে ডা. মাসুদ পারভেজ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন । ২০২১ সালের ৭ মে একমাত্র ছেলেটি মারা যান । এর পর মৃত্যুবরণ করেন ডা.এখলাছের স্ত্রীও।

মৃত্যুকালে তিনি ৫ মেয়ে ও অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মরহুমকে আজ বাদ আছর চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার ২নং বারৈয়ার ঢালা ইউনিয়নের পশ্চিম বহর পুর গ্রামে ২য় নামাজে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;