মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর জীবনী

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর জীবনী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

বংশ পরিচয়ঃ

রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বংশ সারা বিশ্বের সেরা ও উত্তম বংশ। আপন পর সবাই অকপটে তা স্বীকার করত। আল্লাহ তাআলা তাঁর সর্বোচ্চ বংশোদ্ভত হওয়ার দিকে ইঙ্গিঁত করে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাঁর রিসালত বা পয়গামের দায়িত্ব কাকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে অনেক জ্ঞাত।” (সূরা আন আমঃ ১২৪)

আবু সুফিয়ান (ইসলাম গ্রহনের পূর্বে) যখন রোমের সম্রাটের কাছে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর পরিচয় দিচ্ছিল তখন সেও বলেছিল যে, তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশীয় ব্যক্তি। তখন রোম সম্রাট হিরাকল বলেছিলেনঃ “তেমনি নবী রসূলগণ সর্বোচ্চ বংশ ও গোত্রে প্রেরীত হয়ে থাকেন।” (সহীহ সীরাতুন নব্বীয়াহ, পৃঃ ৯।)
নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেনঃ “আমি বনী আদমের সর্বোত্তম বংশে প্রেরীত হয়েছি। আমার যুগই সর্বশেষ্ঠ যুগ।”(সহীহ আল বুখারীঃ ৪/১৫১)

অপর এক হাদীসে আছে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা কিনানা গোত্র থেকে কুরাইশকে বাছাই করেন, আবার কুরাইশদের থেকে বনু হাশিমকে বাছাই করেন এবং বনূ হাশিম থেকে আমাকে বাছাই করেন।” (মুসলিম (২২৭৬), তিরমিযী (৩৬০৬), মুসনাদু আহমদঃ ৮/১০৭, হা/ ১৭১১১, , সিলসিলা সহীহাঃ ৩০২।)

পবিত্র বংশধারাঃ

রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র বংশধারা নিম্নরূপঃ

মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) ইবনে আব্দিল্লাহ, ইবনে আব্দিল মুত্তালিব, ইবনে হাশিম, ইবনে আব্দিমানাফ, ইবনে কুছাই, ইবনে কিলাব, ইবনে মুররাহ, ইবনে কাআ’ব, ইবনে লুওয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফেহের (কুরাইশ), ইবনে মালিক, ইবনে নযর, ইবনে কিনানা, ইবনে খুযাইমাহ, ইবনে মুদরিকাহ, ইবনে ইলিয়াস, ইবনে মুদ্বার, ইবনে নাযার, ইবনে মাআ’দ, ইবনে আদনান, ইবনে আদু, ইবনে মাইসা’, ইবনে সালামান, ইবনে এওয়ায, ইবনে বূয, ইবনে ক্বামওয়াল, ইবনে উবাই, ইবনে আওয়াম, ইবনে নাশিদ, ইবনে হাযা, ইবনে বিলদাস, ইবনে ইয়াদলাফ, ইবনু ত্বাবিখ, ইবনু জাহিম, ইবনু নাহিশ, ইবনু মাখী, ইবনু আইফী, ইবনু আবকার, ইবনু উবাইদ, ইবনু আলদুআ’, ইবনু হামদান, ইবনু সাবজ, ইবনু ইয়াসরাবী, ইবনু ইয়াহযান, ইবনু ইয়ালহান, ইবনু আরআওয়া, ইবনু আইফা, ইবনু যীশান, ইবনু আইসার, ইবনু আকনাদ, ইবনু ইহাম, ইবনু মুকছির, ইবনু নাহিছ, ইবনু যরাহ, ইবনু সুমাই, ইবনু মযযী, ইবনু ইওয়ায, ইবনু আরাম, ইবনু কায়দার, ইবনু ইসমাঈল, ইবনু ইবরাহীম, ইবনু তারা (আযর), ইবনু নাহুর, ইবনু সারুজ, ইবনু রাঊ, ইবনু ফাইজ, ইবনু আবির, ইবনু আরফাকশাও, ইবনু সাম, ইবনু নূহ, ইবনু লামক, ইবনু নাতুশাইহ, ইবনু আখনূ’, ইবনু ইদ্রিস, ইবনু ইয়ারিদ, ইবনু মালহালঈল, ইবনু কায়নান, ইবনু আনূশ, ইবনু শীছ, ইবনু আদম আলাইহিসসালাম। -(রাহমাতুল্লিল আলামীন, দ্বিতীয় খন্ড, পৃঃ ২৫-৩১, কাজী মুহাম্মদ সুলাইমান মনছুরপূরী)

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর মাতা পিতা পর্যন্ত নারী পুরুষের যতগুলি স্তর রয়েছে প্রত্যেক স্তরের প্রতিটি নারী ও পুরুষ সৎ ও পবিত্র ছিলেন। কেউ কখনো ব্যবিচারে লিপ্ত হন নি। রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি বিবাহের মাধ্যমে জন্ম গ্রহন করেছি, ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়। হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমার পিতা মাতা পর্যন্ত কোন নারী পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হননি। আর জাহেলী যুগের ব্যভিচার আমাকে ছুয়েঁ নি।” (ইরওয়াউল গালীলঃ ১৯৭২, সহীহুল জামিউস্ সাগীরঃ ৩২২৫।)

আব্দুল্লাহ ও আমেনাঃ

কুরাইশ সর্দার আব্দুল মুত্তালিবের ছিল দশ পুত্র। এদের সকলেই ছিলেন বিশিষ্ট ও খ্যাতিমান। তাঁর সকল পুত্রের মধ্যে আব্দুল্লাহ খুবই প্রশংসনীয় গুণাবলী ও কেন্দ্রীয় মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তাঁর পিতা বিয়ে দিয়েছিলেন বনূ যুহরার সর্দার ওহাব এর কন্যা আমেনার সঙ্গেঁ, যাঁকে সে সময় উচ্চ বংশ, সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির দিক দিয়ে কুরায়শদের ভিতর সবচেয়ে সম্মানিত মহিলা মনে করা হত।

রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম মাতৃগর্ভে থাকাকালেই তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি সিরিয়া সফর থেকে ফেরার পথে মদীনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তথায় মৃত্যু বরণ করেন। ‘দার আল্ নাবেগা আলজা’দী’ নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। (আর রাহীকুল মাখতুম, ছফীউররাহমান মুবারকপুরী, পৃঃ ৫৩।) হযরত আমেনা তাঁর জন্মের পূর্বেই এমন বহু নিদর্শন দেখতে পান যাদ্বারা বোঝা যেত যে, তাঁর সন্তানের ভবিষ্যৎ অত্যুজ্জল ও মর্যাদাকর হবে।” (নবীয়ে রহমত- সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী- ১১৩)

জন্মঃ

রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম ‘আমুল ফীল’ অর্থাৎ হস্তি বাহিনীর অভিযানের বছর প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে রবিউল আওয়াল মাসের ১৭ তারিখ মুতাবিক ৫৭০ খৃষ্টাব্দ শুক্রুবার দিন সকালে জন্ম গ্রহণ করেন। এটি ছিল মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোকোজ্জল ও বরকতময় দিন।

উল্লেখ্য যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখের ব্যাপারে বিদ্বান গণের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইতিহাস গ্রন্থসমূহে অনেক উক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী বলেনঃ “ইমাম মালিক ও অন্যান্য মুহাদ্দিসরা মুহাম্মদ ইবনে জুবাইর ইবনে মুত্ইম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল, রবিউল আওয়ালের ৮ তারিখ। হাফেজ মুহাম্মদ ইবনে মূছা আল খাওয়ারযমী এউক্তিকে অকাট্য বলেছেন। আর ইবনে দেহয়াহ এউক্তিকে প্রধান্য দিয়েছেন।”(সহীহুস সীরাতিন নববীয়্যাহ, টীকা, পৃঃ ১৩।) মিসরের প্রসিদ্ধ গণিতশাস্ত্র বিশারদ মাহমূদ পাশা একটি পুস্তিকা রচনা করেন যাতে তিনি গণিত বিদ্যার অকাট্য দলীল প্রমাণাদী দ্বারা একথা প্রমাণ করেছেন যে, রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম তারিখ হল রবিউল আওয়ালের ৯ তারিখ মুতাবিক ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল। (সীরাতুন্নবী আল্লামা শিবলী পৃঃ ১০৮)

নাম করণঃ

হযরত মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম হতেই মা আমেনা এসংবাদ দাদা আব্দুল মুত্তালিবকে পাঠান। সংবাদ পেতেই তিনি ছুটে আসেন, পরম স্নেহে দেখেন, যত্নের সঙ্গেঁ কোলে নিয়ে কা’বার ভেতর প্রবেশ করেন, আল্লাহর হামদ বর্ণনা করেন এবং দোয়া করেন। অতঃপর তাঁর নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’। আরবে এনাম ছিল একেবারেই নতুন। ফলে লোকেরা খুব বিস্মিত হয়। (সীরাতে ইবনে হিশামঃ ১/১৫৯-৬০, ইবনু কাছীরঃ ১/২১০।)

যুবাইর ইবনে মুতায়িম থেকে বর্ণিত রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমি মুহাম্মদ, আহমদ, হাশির, আকিব, মাহি এবং খাতম।” (মুসনাদে আহমদঃ ৪/৮১,৮৪/ ১৬৮৬৯,১৬৮৯২।)

দুগ্ধ পান কালঃ

সর্ব প্রথম তাঁকে তাঁর মাতা হযরত আমেনা দুগ্ধ পান করান। অতঃপর আবুলাহাবের বাঁদী ‘সুওয়াইবা’ তাকে দুগ্ধ পান করায়। অতঃপর ধাত্রীর সন্ধান করতে থাকেন। ‘হাওয়াযিন’ গোত্রের বানী সা’দ এর মহিলা হালীমা ছা’দিয়া এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হন। এমন ভাবে যে, অন্য কোন ধাত্রী শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণ করলনা পক্ষান্তরে হালীমা সাদীয়াও অন্য কোন শিশু পেলনা। ফলে বাধ্য হয়ে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম কে গ্রহণ করলেন। গ্রহণ করার পর থেকেই হালীমার ঘরে ইলাহী বরকতের জোয়ার শুরু হল। দুবছর দুগ্ধ পানের পর বিবি হালীমা শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে তাঁর মার নিকট হাজির হন এবং সাথে সাথে এই আকাঙ্খাও ব্যক্ত করেন যে, শিশুকে আরো কিছু দিনের জন্য তাঁর নিকট যেন থাকতে দেয়া হয়। এদিকে মক্কায় তখন মহামারী চলছিল। উভয় দিক চিন্তা করে বিবি আমেনা তাঁর শিশুকে হালীমার নিকট ফিরিয়ে দেন। এমনি ভাবে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বানী সাদে লালিত পালিত হন। সেখানে তিনি তাঁর দুধ ভাইদের সঙ্গেঁ জঙ্গঁলে ছাগল চরাতেন। (সহীহ আল বুখারী, কিতাবুন নিকাহ, সীরাতুননবীঃ ১/১৭২।)

হালীমা সাদীয়ার পরিবারঃ

হালীমা সাদীয়ার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিল তাঁর স্বামী হারিছ ইবনে আব্দিল উয্যা এবং তাঁর চার সন্তান আব্দুল্লাহ, উনাইসা, হুযাইফা এবং হুযাফা (শায়মা)। রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম সেই পরিবারে প্রায় ছয়টি বছর অতিবাহিত করেন। হালীমা সাদীয়া ও তাঁর স্বামী উভয়ে ইসলাম গ্রহন করেছেন। সন্তানদের মধ্যে আব্দুল্লাহ এবং শায়মা ইসলাম গ্রহন করেছেন। বাকী দুই জনের কথা জানা যায়নি। (সীরাতুন্নাবী-আল্লামা শিবলীঃ ১/১১৯।)

মদীনার সফরঃ

রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ছয় বছর চলছিল তখন মা আমেনা তাঁকে নিয়ে মদীনা সফর করলেন। সাথে ছিল উম্মে আয়মান বারাকা নামে একজন হাবশী দাসী। ‘ইয়াছরিব’ তথা মদীনা শরীফের নাজ্জার গোত্র ছিল তাঁর দাদার মাতৃকুল। আর রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর পিতা হযরত আব্দুল্লাহ এর কবরও ছিল তথায়। মা আমেনা তাঁর শিশুকে নিয়ে প্রায় এক মাস পর্যন্ত মদীনায় অবস্থান করেন। (সীরাতুন্নাবী-আল্লামা শিবলী)

মাতা বিয়োগঃ

মদীনার সফর শেষে আসার পথে ‘আল আবওয়া’ নামক স্থানে বিবি আমেনা ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হল। অতঃপর উম্মে আয়মান তাঁকে নিয়ে মক্কায় আসেন। এবং আল্লাহর এই আমানত দাদা আব্দুল মুত্তালিবের নিকট সোপর্দ করেন। কেউ কেউ বলেছেন তাঁর দাদাও এই সফরে সাথে ছিলেন।

দাদার স্নেহ ছায়ায়ঃ

তখন থেকে পিতা মাতা হারা এই শিশু দাদার স্নেহ ছায়ায় লালিত পালিত হতে থাকে। দাদা তাঁকে মন প্রাণ দিয়ে চাইতেন, ভালবাসতেন এবং ক্ষণিকের তরেও তিনি তাঁর এই এতীম পৌত্র সম্পর্কে গাফেল হতেন না।

দাদার ইন্তেকালঃ

দুই বৎসর পর্যন্ত হযরত দাদা আব্দুল মুত্তালিব স্বীয় পৌত্র মুহাম্মাদ (সা) কে অতি আদর যত্নের সহিত লালন পালন করেন। যখন তাঁর বয়স আট বছরে উপণিত হয় তখন তাঁর দাদা হযরত আব্দুল মুত্তালিব বিরাশী বছর বয়সে ইহদাম ত্যাগ করেন।

চাচা আবু তালিবের দায়িত্বেঃ

তাঁর দাদা ইন্তেকালের সময় নিজ পুত্র আবু তালিব কে পৌত্র মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অছিয়ত করে যান এবং তাঁকে লালন-পালন করার দায়িত্ব দিয়ে যান। হযরত আবু তালিবও তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং নিজের ছেলেমেয়েদের চেয়েও বেশী মায়া দিয়ে লালন-পালন করতে থাকেন।

সিরিয়ার সফরঃ

নয় বছর বয়সে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা হযরত আবু তালেবের সাথে বানিজ্জিক সফরে সিরিয়া যান। সিরিয়ার প্রসিদ্ধ নগরী ‘বুছরা’ নামক স্থানে পৌঁছার পর ‘বুহায়রা’ নামক এক ধর্মজাযকের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। বুহায়রা বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম কে চিনতে পেরে তিনি সহ তাঁর কাফেলাকে খুব বেশী খাতির যত্ন করলেন এবং হযরত আবু তালেবকে বললেন যে, আপনি আপনার ভাতিজাকে নিয়ে মক্কায় চলে যান। ইহুদীদের হাত থেকে একে বিশেষ ভাবে হিফাজত করবেন। কারণ ভবিষ্যতে এ বিরাট মর্যাদার অধিকারী হবেন। এরপর হযরত আবু তালেব তাঁকে নিয়ে নিরাপদে মক্কায় ফিরে আসেন। (সীরাতুন নব্বীয়্যাহ, পৃঃ ২৯-৩১।)

লালন পালনঃ

রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর লালন পালন বিশেষ নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন হয় এবং জাহিলিয়াতের নাপাক ও খারাপ অভ্যাস সমূহ থেকে আল্লাহপাক তাঁকে সর্বদাই দুরে ও মুক্ত রাখেন। তাঁকে তাঁর জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে লোকেরা প্রথম থেকেই সবচেয়ে বেশী প্রশংসনীয় গুণাবলী, উন্নত মনোবল, উত্তম চরিত্রে বিভূষিত, লাজনম্র, সত্যবাদী, আমানতদার, কটুক্তি ও অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ থেকে দুরে বলে মনে করত। এমন কি তাঁর জাতির লোকেরা তাঁকে ‘আল্ আমীন’ বিশ্বস্ত, আমানতদার নামে স্মরণ করত। তিনি আত্মীয়তার দিকে খেয়াল রাখতেন, লোকের দুর্বহ বোঝা হালকা করতেন এবং তাদের প্রয়োজন মেটাতেন। তিনি মেহমানদারী করতেন, কল্যাণমূলক ও তাকওয়া ভিত্তিক কাজে কর্মে অন্যদেরকে সাহায্য করতেন। (নবীয়ে রহমত, পৃ ১১৮।)

আল ফিজার যুদ্ধে অংশ গ্রহণঃ

রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন ছৌদ্দ কি পনেরো তখন কুরায়শ ও কায়স গোত্রের মধ্যে ‘আল ফিজার’ এর যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি এই যুদ্ধ খুব কাছে থেকে দেখেন। তিনি শত্র“দের নিক্ষিপ্ত তীর কুড়িয়ে কুরায়শদেরকে পৌঁছে দিতেন। (সীরাত ইবনে হিশামঃ ১/১৮৬।)

খদীজা (রাঃ) এর সঙ্গেঁ বিবাহঃ

যখন তিনি পঁচিশ বছর বয়সে উপনীত হলেন তখন হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়ায়লিদ এর সঙ্গেঁ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। হযরত খদীজা কুরায়শ গোত্রের খুবই প্রভাবশালী মহিলা ছিলেন এবং বোধ শক্তি, দুরদর্শিতা, মহান চরিত্র ও ব্যবহার, অধিকন্তু ধন সম্পদের দিক দিয়েও খ্যাতনাম্নী ছিলেন।

বিয়ের সময় মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স ছিল পঁচিশ বছর আর হযরত খাদীজার বয়স ছিল ৪০ বছর। আবু তালেব বিয়ের খুতবা পাঠ করেন এবং এখান থেকেই তাঁর দাম্পত্য জীবনের সূচনা ঘটে। তাঁর সন্তান ইব্রাহীম ছাড়া আর সকলেই ছিলেন হযরত খাদীজার গর্ভজাত। (সীরাত ইবনে হিশামঃ ১/১৮৭-৯০, ইবন কাছীরঃ ২৬২-৬৫, নবীয়ে রহমত পৃ ১২০, ১২১।)

কা’বার নব নির্মাণ এবং একটি বিরাট ফেতনার অবসানঃ

রসূল কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর বয়স যখন পঁয়ত্রিশ বছর, তখন কুরায়শরা নতুন ভাবে কা’বা শরীফ নির্মাণ করতে চাইলেন এবং এর উপর ছাদ ঢালাইয়ের মনস্থ করলেন। দেওয়াল যখন উঁচু করে হাজরে আসওয়াদের উচ্চতা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল তখন হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে কুরায়শ নেতৃবর্গের মধ্যে বিরাট মতানৈক্য দেখা দিল। প্রতিটি গোত্রই চাচ্ছিল যে, তার গোত্রই এই সৌভাগ্য লাভ করুক এবং তারা এই পাথর উঠিয়ে তার সঠিক স্থানে স্থাপন করুক। মতানৈক্য বৃদ্ধি পেতে পেতে অবশেষে তা যুদ্ধ বিগ্রহে উপণীত হবার উপক্রম হল। মোট কথা যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হল। কুরাইশরা কয়েকদিন যাবত এই সংকটের মাঝে কালক্ষেপণ করল। অতঃপর সকলেই এ বিষয়ে একমত হল যে, যে ব্যক্তি অমুক দিন প্রথম প্রবেশ করবে সে এ ব্যাপারে ফায়সালা প্রদান করবে। অনন্তর সর্বপ্রথম রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম প্রবেশ করেন। তাঁকে প্রবেশ করতে দেখেই সবাই সমস্বরে চেচিয়ে উঠে, এই যে আমাদের ‘আল আমীন’ আসছেন। আমরা তাঁর ফয়সালায় রাজী আছি। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক গোত্র থেকে এক একজন সর্দার নির্বাচন করলেন এবং একটি চাদর বিছিয়ে নিজ হাতে পাথরটি চাদরের উপর রাখলেন এবং প্রত্যেক গোত্রের সর্দারকে চাদরের পাশ ধরতে বললেন। তারপর যখন সবাই উঠালেন তখন তিনি নিজ হাতে হাজরে আসওয়াদকে তার বর্তমান স্থানে রেখে দিলেন। (মুসতাদরাকে হাকেম, সীরাতুন্নাবী-আল্লামা শিবলী, ১ম খন্ড, পৃঃ ১২৪)

হিলফুল ফুযুলঃ

নবী কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম হালাফুল ফুযুলেও শরীক ছিলেন যা ছিল আরবদের সবচেয়ে অভিজাত ও সহানুভূতিমূলক পারস্পরিক চুক্তি। তখনকর প্রত্যেক উৎসাহদীপ্ত, সাহসীও ইনসাফের সমর্থক ব্যক্তিরা আব্দুল্লাহ ইবনে জাদআনের ঘরে একত্রিত হয়ে এই চুক্তি করেন। তারা আল্লাহর নামে এ অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয় যে, তারা সবাই জালিমের মোকাবেলায় ও মজলুমের সাহার্য সমর্থনে ‘এক দেহ এক প্রাণ’ হয়ে থাকবে এবং একত্রে মিলে কাজ করবে যতক্ষণ না জালিম মজলুমের হক প্রদাণ করে। কুরায়শরা এই অঙ্গীঁকারের নাম দেয় হালাফুল ফুযুল। রসূল কারীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) এই অঙ্গীকারে খুবই খুশী হয়েছিলেন এবং নবুওয়াত প্রাপ্তির পরও তিনি এর প্রশংসা করেন এবং বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনে জাদ্আন এর ঘরে আমি এমন একটি অঙ্গীকারে শরীক ছিলাম যার দিকে সেই নামে ইসলামের পর আজও যদি আমাকে আহবান করা হয় তবে আমি তাতে সাড়া দেবার জন্য তৈরী আছি। (সীরাতে ইবনে কাছীরঃ ১/২৫৭-৫৯।)

নুবুওয়াত লাভঃ

চল্লিশের কাছাকাছি সময়ে একাকিত্ব ও নির্জনতা প্রিয়তা তাঁর নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। তিনি সকলের থেকে আলাদা হয়ে নিঃসঙ্গঁ অবস্থানে বিরাট তৃপ্তি ও শান্তি পেতেন। তিনি মক্কার বিভিন্ন ঘাঁটি ও উপত্যকাসমূহ যখন অতিক্রম করতেন তখন গাছ পালা ও প্রস্তর মালা থেকে শব্দ ভেসে আসত ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ ’। (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর রাসূল।) তিনি ডানে বামে ঘুরে তাকাতেন কিন্তু গাছপালা ও প্রস্তুর খন্ড ছাড়া আর কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। তিনি বলেছেনঃ আমি সেই পাথরকে এখনো চিনি যা আমাকে নবী হওয়ার আগে থেকে সালাম করত। (সহীহ মুসলিম।)
এসময় তিনি নিজের মধ্যে এক ধরণের অদৃশ্য ও অনিশ্চিত অস্থিরতা অনুভব করতেন। আল্লাহ তাআলা এব্যাপারে বলেছেনঃ “এভাবে আমি তোমার প্রতি ওহী (প্রত্যাদেশ) করেছি রূহ তথা আমার নির্দেশ। তুমি তো জানতেনা কিতাব কি এবং ঈমান কি। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যাদ্বারা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত করি। আর নিশ্চয় তুমি সরল পথের দিকে আহবান করবে”। (সূরা শুরাঃ ৫২।)
অন্যত্র বলেনঃ “তুমি আশা করনি যে তোমার উপর কিতাব অবতীর্ণ হবে। এতো কেবল তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ। সুতরাং তুমি কখনো কাফিরদের সহায় হয়োনা”। (সূরা কাসাসঃ ৮৬।)

হেরা গুহায় জৌতির সাক্ষাৎ:

বেশীর ভাগ সময় তিনি মক্কার প্রসিদ্ধ পাহাড় ‘জাবালে নূরে’ অবস্থিত ‘গারে হেরা’ তথা হেরা গুহায় অবস্থান করতেন এবং উপর্যুপরি কয়েক রাত সেখানে অতিবাহিত করতেন। এর ব্যবস্থাও তিনি আগে থেকেই করে নিতেন। এভাবে একদা তিনি হেরা গুহায় তশরীফ আনেন এমন সময় তাঁকে নুবুওয়াতের পদমর্যাদা দিয়ে সৌভাগ্যবান করার পবিত্র মুহুর্ত এসে যায়। জন্মের ৪১ তম বছরে ২৭ ই রজব (হিজরতের ১৩ বছর পূর্বে) মুতাবিক ৬১০ খৃষ্টাব্দ তারিখে জাগ্রত ও চৈতন্য অবস্থায় এঘটনা সংঘটিত হয়। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল (আঃ) প্রথমবারের মত তাঁর কাছে, পৃথিবীবাসীদের জন্য আল্লাহর সর্বশেষ ঐষীবাণী, বিশ্বমানবতার মুক্তির পথের দিশারী, জ্বিন ও ইনসানের জন্য পরিপূর্ণ জীবন বিধান ‘আল্ কুরআনুল কারীম’ এর সর্বপ্রথম কথাগুলো নিয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন।

পড় তোমার প্রতিপালকের নামে

তাঁর সামনে হেরা গুহায় ফেরেশতা আগমন করেন এবং বলেনঃ পড়ুন। তিনি উত্তর দিলেন আমি কি ভাবে পড়ব? ফেরেশতা বললেনঃ

إقرأ باسم ربك الذي خلق . خلق الإنسان من علق . إقرأ وربك الكرم . الذي علم بالقلم . علم الإنسان مالم يعلم .

অর্থাৎ “পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পড়! তোমার পালনকর্তা মহা দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানতনা”। (সূরা আলাকঃ ১-৫।)

আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্চিত করবেন না

ঘরে পৌঁছেই স্বীয় পত্নী হযরত খদীজা (রাঃ) কে বললেনঃ “ আমাকে ঢেকে দাও, আমাকে ঢেকে দাও, আমাকে ঢেকে দাও। আমার বিপদের আশংকা হচ্ছে।” তখন হযরত খদীজা (রাঃ) সুদৃঢ় বিশ্বাস, গভীর আস্তা ও পূর্ণ শক্তিতে বললেনঃ “কখনো নয়। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তাআলা কখনো আপনাকে লাঞ্চিত ও অপমানিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অপরের বোঝা বহন করেন, অভাবী লোকের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন, মেহমানের খাতির যত্ন ও মেহমানদারী করেন এবং সত্য পথে চলতে গিয়ে বিপদ ও সংকটে সাহায্য করেন”। (সহীহ বুখারী, বাবু কায়ফা কানা বদউল ওহী।) হযরত খদীজা কথাগুলো তাঁর সুস্থ প্রকৃতি, আপন জীবনের অভিজ্ঞতা ও লোকের সম্পর্কে জানা-শোনার ভিত্তিতে বলেছিলেন।
কিন্তু তিনি স্বীয় জীবন সাথী কে আরো বেশী শান্তনা দেয়ার জন্য তাঁর জ্ঞানী চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফলের কাছে নিয়ে যান এবং পূর্ণ ঘটনা তাঁর কাছে ব্যক্ত করেন। ওয়রাকা ছিল বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাস, নুবুওয়াত ও তার মেজাজ, অধিকন্তু কিতাবীদের সম্পর্কে বেশ ভালবাবে অবহিত এবং পূর্বের আম্বিয়ায়ে কেরামের ঘটনাবলী ও তাদের জ্ঞানের ব্যাপারে কিছুটা ওয়াকেফহাল।

ওয়ারাকা শুনতেই বলেনঃ “কসম সেই পবিত্র সত্ত্বার যাঁর হাতে আমার জীবন! আপনি এই উম্মতের নবী। আপনার কাছে সেই নামুসে আকবর এসেছিলেন যিনি মূসা (আঃ) এর কাছে এসেছিলেন। একদিন আসবে যখন আপনার জাতি ও সম্প্রদায় আপনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং কষ্ট দেবে, আপনাকে বের করে দেবে, আপনার সাথে যুদ্ধ করবে। আমি যদি সেদিন থাকি আর আমার হায়াতে যদি কুলায় তাহলে সর্ব শক্তি দিয়ে আমি আপনাকে সাহায্য করব”। (সহীহ আল বুখারী)

এরপর অনেক দিন যাবত ওহী বন্ধ থাকে। পুনরায় এর ধারা শুরু হয় এবং কুরআন মজীদ নাযিল হতে থাকে।

গোপনে ইসলামের দাওয়াতঃ

প্রথম দিকে রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ গোপনে করতে থাকেন। আর এভাবেই কেটে যায় তিনটি বছর। এসময় যাঁরা মানুষের মনগড়া নিয়ম-নীতি ধ্যান-ধারণা ও জীবন পদ্ধতির পরিবর্তে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ও জীবন বিধান দ্বীন ইসলাম কে যারা ধর্ম ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে স্বাদরে গ্রহন করেছিলেন তারা ছিলেন তাঁর সর্বাধিক নিকটবর্তী এবং যারা তাঁর সত্যবাদিতা, নিষ্ঠা ও উত্তম চরিত্র সম্পর্কে সর্বাধিক ওয়াকিফহাল।

প্রথম মুসলিমগণঃ

হযরত আলী (আঃ) ছিলেন নবীর মত প্রথম মুসলমান। এবং তাওহীদের উপরে পুরুষদের ভীতরে প্রথম ঈমান্দার।

এবং নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম হযরত খদীজা ইসলাম গ্রহণ করেন। তারপর যায়েদ ইবনে হারেছা, আবুবকর, উসমান, আব্দুর রহমান ইবন আউফ, সা’আদ ইবন আবি ওয়াক্কাস, ত্বালহা এবং যুবায়র মুসলমান হলেন। এমনি ভাবে একেরপর এক মুসলমান হওয়া শুরু হল। (আসসীরাতুন নববীয়্যাহ- আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী)

প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতঃ

অতঃপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে খোলামেলা ও প্রকাশ্যে দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ ঘোষিত হয়। ইরশাদ হয়ঃ “অতএব আপনি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছেন তা প্রকাশ্যে প্রচার করুন এবং মুশরিকদেরকে উপেক্ষা করুন।” (সূরা হিজরঃ ৯৪।) “আপনার নিকট আত্নীয় বর্গকে সতর্ক করে দিন আর যারা আপনার অনুসরণ করে তাদের প্রতি বিনয়ী হউন।” (সূরা শুআরাঃ ২২৪, ২২৫।) “এবং বলুন, আমি তো কেবল এক প্রকাশ্য সতর্ককারী।” (সূরা হিজর।) এই নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে তিনি প্রকাশ্যে ইসলামের তাবলীগের কাজ শুরু করলেন। যখন তিনি তাদের উপাস্য দেবদেবীর নিন্দা করতে শুরু করলেন তখন তারা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল এবং ঐক্যবদ্ধভাবে তাঁর বিরোধিতায় কোমর বেঁধে নেমে পড়ল।

আবিসিনিয়ার দিকে হিজরতঃ

দুই বৎসর পর্যন্ত মুসলমানগণ অনেক কষ্ট সহ্য করে শেষ পর্যন্ত মক্কা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলেন। পঞ্চম নব্বীতে মুসলমানদের প্রথম একটি দল আবিসিনিয়ার হিজরত করেন। এ কাফেলাতে ছিল হযরত জাফর ইবন আবিতালিব এবং আরো অন্যান্য ছাহাবীগণ।

হযরত হামযা (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণঃ

ষষ্ট নববীতে হযরত হামযা প্রকাশ্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। এর পূর্বে মুসলমানেরা চুপিসারে সালাত আদায় করতেন। তখন থেকে কা’বা শরীফে গিয়ে পড়া শুরু করেন।

সাধারণ বয়কটঃ

সপ্তম নব্বীতে কুরায়শরা এ মর্মে একটি লিখিত অঙ্গিঁকার বা চুক্তিনামা সম্পাদন করল যে, কেউ মুসলমানদের সাথে লেনদেন বা বিয়ে শাদীর সম্পর্ক করবেনা। বনী হাশিমের সাথেও করবেনা যেহেতু তারা রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষপাতিত্ব ছেড়ে দেয়নি। এই চুক্তি নামার পরই বনি হাশিম ও বনি আব্দিল মুত্তালিব তাদের সর্দার হযরত আবু তালিবের পিছনে ঐক্যদ্ধ হল, এবং হযরত আবু তালিব গিরি বা উপত্যকায় গিয়ে উঠল। আর সেখানে অবরূদ্ধ হয়ে পড়ল। সেই অবরুদ্ধ ও বয়কাটের অবস্থায় তিনটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। তিন বছর পর সেই চুক্তিনামা ভঙ্গঁ ও বয়কটের অবসান ঘটে।

পেরেশানীর বছরঃ

নুবুওয়াতের দশম বর্ষে একই সালে চাচা হযরত আবু তালিব ও হযরত খদীজা ইন্তিকাল করেন। এই শোকাবহ ঘঁটনার পর রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম কে উপর্যুপরী কয়েকটি বিপদের সম্মুখিন হতে হয়। একই বছরে তিনি তায়েফ গিয়ে মানুষদেরকে দ্বীনের প্রতি দাওয়াত দেন। একাদশ নব্বীতে মদীনা শরীফের ছয়জন ব্যক্তি রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে ইসলাম প্রহণ করেন।

মি’রাজঃ

দ্বাদশ নব্বীতে মি’রাজ সংঘটিত হয়। তথায় মুসলমানদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়। একই বছর হজ্জের মৌসূমে আঠার জন ব্যক্তি মদীনা থেকে মক্কা আগমন করে এবং ইসলাম প্রহণ করে। হযরত মুছ আ’ব ইবন উমায়রকে তাবলীগের জন্য পাঠান হয় মদীনায়।

হিজরাতঃ

হিজরাতের পর থেকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতী জীবনের শেষ পর্ব অর্থাৎ মাদানী জীবন শুরু হয়। নুবুওয়াতের ১৩ বছরে প্রায় ছাহাবীগণ ধীরে ধীরে মক্কা ছেড়ে মদীনায় চলে গেলেন। মহিলা এবং শিশুরা ছাড়া প্রসিদ্ধ ছাহাবীদের মধ্যে আবুবকর এবং আলী (আঃ) ব্যতীত বাকী সবাই মদীনায় হিজরাত করলেন। রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম হিজরাতের জন্য আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় ছিলেন। পরিশেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁকে হিজরাতের জন্য অনুমতি দেয়া হল।

হত্যার ষঢ়যন্ত্র বিফলঃ

এদিকে কুরাইশরা রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম কে হত্যা করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ২৬ শে ছফর তাঁর ঘরকে ঘেরাও করল। কিন্তু তার পরেও -রাখে আল্লাহ মারে কে? তিনি আলী (আঃ) কে নিজের বিছানায় শুইতে বলে, সুরা ইয়াসীনের শুরুর আয়াতগুলি পড়তে পড়তে, কাফেরদের চোখে ধুল মেরে তাদের সামনে দিয়েই, আল্লাহর হুকুমে একেবারে নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। পথে জুটে গেলেন সাহাবা আবুবাকার।

মক্কা থেকে দক্ষিণ দিকে চার/পাঁচ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করার পর বিশ্রামের জন্য ‘ছাওর’ নামক পাহাড়ের উপরের গুহায় অবতরণ করলেন। তিন দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন।

এদিকে কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম এর নিরাপদে বের হয়ে যাওয়ার খবর শুনে তাঁকে ধরার জন্য চতুর্দিকে লোক পাঠিয়ে দিল। একদল কাফের তাঁদের কে তালাশ করতে করতে ছাওর পাহাড়ের গুহা পর্যন্ত পৌঁছে গেল। আবুবকর বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এদের কেউ তার পায়ের দিকে নজর করলে আমাদের দেখে পেলবে। আবুবকর ভীত হয়ে কান্দতে লাগলেন। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘লা তাহযান ইন্নাল্লাহা মা’আনা’ চিন্তা করনা আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।
তিন দিন পর্যন্ত গুহায় অবস্থান করার পর প্রথম হিজরীর পহেলা রবিউল আউয়াল সোমবার গুহা থেকে বের হয়ে মদীনার পথে রওয়ানা করলেন। এদিকে আবুবকর ও আব্দুল্লাহ ইবনু উরাইকিত নামক এক ব্যক্তি এই মহতি সফরে সাথী হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করল।

কুবায় অবস্থানঃ

প্রথম হিজরী ৮ ই রবিউল আওয়াল মোতাবেক ২০ এ সেপ্টেম্বর ৬২২ ইং সোমবার রসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম মদীনার এরিয়ায় পৌঁছে গেলেন। এদিকে মদীনাবাসীরা সবাই শুভাগমণের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁরা আল্লাহর রাসূলকে কিভাবে স্বাগতম জানালেন তা ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করার মত নয়। মদীনার এরিয়ায় পৌঁছার পর চার দিন বা মতান্তরে চৌদ্দ দিন পর্যন্ত মদীনার উঁচু স্থান ‘কুবা’য় অবস্থান করলেন।

কুবা মসজিদ নির্মাণঃ

কুবায় অবস্থানকালে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করলেন। যা পরে ‘কুবা মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধ হল। এটি ছিল ইসলামের সর্বপ্রথম মসজিদ। যেখানে দু রাকাত নামায আদায় করলে মাকবুল উমরার ছাওয়াব পাওয়া যায়।

প্রথম জুমার ছলাতঃ

চার দিন বা চৌদ্দ দিন পর আল্লাহর হুকুমে কুবা থেকে মদীনার দিকে রওয়ানা করলেন। পথে বনূসালিমের বস্তিতে পৌঁছার পর জুমার ওয়াক্ত হয়ে গেল। তখন সেখানে জুমার নামায আদায় করলেন। জুমার পর পুনরায় সওয়ার হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হতে থাকলেন।

আল্লাহ নির্দেশীতে স্থানে অবতরণঃ

মদীনাবাসীরা সবাই আল্লাহর রাসূলকে নিজ নিজ ঘরে মেহমান হিসেবে পাওয়ার বড় আকাঙ্কায় ছিল। কিন্তু রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলেহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা উটের লাগাম ছেড়ে দাও। কারণ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট। পরে আবু আইয়ুব আনছারীর ঘরের সামনে অর্থাৎ বর্তমান যেখানে মসজিদে নববী অবস্থিত, সেখানে গিয়ে তাঁর উট বসে গেল। তখন তিনি বললেনঃ এটিই স্থান। অতঃপর তিনি আবুআইয়ূব আনছারীর ঘরে মেহমান হলেন। সাত মাস পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেছিলেন। এভাবে তাঁর মাদানী জীবন শুরু হল।

পরিবারের সবাইকে মক্কা থেকে নিয়ে আসাঃ

আমালি সেখ তুসিতে উল্লেখ্য, নবী (সাঃ) আলী (আঃ) হীরা গুহায় বলেছিলেনঃ যখন আমার বার্তা আসবে তখনই মক্কা থেকে মদিনায় হিজরাত করবে। হিজরাতের প্রায় ছয় মাস পর রসূলে কারীম (সাঃ)এর আদেশ অনুজাই হযরত আলী (আঃ) হযরত ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ(সাঃ), ফাতিমা বিনতে আসাদ, ফাতিমা বিনতে যুবাইর ইবনে আবদুল মুত্তালিব, যুবা’আ, আইমান বিন উম্মে আইমান, নবীর দাশ, ও আবু ওয়াকিদ কে নিয়ে মক্কা তেগ করেন। যাজনান এলাকার নিকটে কুরাইশের সাত যুদ্ধ্যা মদিনায় জেতে বাদ্ধা দেয় এবং মহিলা ও আসবাব পত্র লুটে নেয়ার চেস্টা করে। হযরত আলী (আঃ) তাদের মুকাবেলা করেন এবং জুনাহ নামক বেক্তিকে হুত্তা করেন। যাজনান পৌঁছানর পর এক রাত্র অখানেই কাটান কিন্তু সর্ব রাত্র নাজাম পড়ে কাটান। মদিনা পৌঁছার পূর্বে আল্লাহ তা’লা সুরা আলে ইমরানের ১৯০-১৯৫ আয়াত এই ঘটনার জন্য নবীর উপরে নাযিল করেন।

মসজিদে নববী নির্মাণঃ

আল্লাহর নবী (সাঃ) মদীনা পৌঁছার পর প্রথম মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করলেন। এটি ছিল নবীর হাতে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ মসজিদ। যেহেতু রাসূল (সাঃ) ছিলেন শেষ নবী। তাঁর পরে অন্য কোন নবী আসার কোন অবকাশ নেই, সেহেতু তাঁর হাতের গড়া মসজিদটিও ছিল সর্বশেষ নববী মসজিদ। এই মসজিদের নির্মাণ কার্যে ছাহাবীদের সাথে তিনি নিজেও অংশ গ্রহন করেন। এই মসজিদের অনেক বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেছেনঃ আমি সর্বশেষ নবী এবং আমার মসজিদ (নবীর হাতে নির্মিত) সর্বশেষ মসজিদ। তিনি আরো বলেছেনঃ তিনটি মসজিদ ব্যতীত (ছাওয়াবের আশায়) অন্যত্র সফর করা যাবে না। মসজিদুল হারাম, মসজিদুল আক্বছা ও আমার এই মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে নববী)। এই মসজিদে এক নামায পড়া, মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য সব মসজিদে এক হাজার নামায পড়ার সমান।

আযানের সূচনাঃ

জামাতে নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে লোকজনকে আহবান করার পদ্ধতি কি হবে তা নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনার পর আল্লাহর হুকুমে আযানের প্রথা চালু হল।

ভ্রাত্ত্বিত্ব স্থাপনঃ

মদীনায় হিজরাত করার পর প্রথম বছর যে কাজগুলি করেছেন সেগুলির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল আনছার মুহাজির তথা মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাত্ত্বিত্ব স্থাপন করা।

কেবলা পরিবর্তনঃ

দ্বিতীয় হিজরীতে কেবলা পরিবর্তন করা হল অর্থাৎ বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে বায়তুল্লাহ শরীফকে নামাযের জন্য কেবলা নির্ধারণ করা হল। রমযান মাসের রোযা ফরয করা হল।

বদর যুদ্ধঃ

তাফসিরে কুম্মীতে এসেছেঃ মদিনা প্রবেশের ১৬তম বছরে ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হল। এযুদ্ধে মুসলমানদের মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। শত্রুদের সৈন্যসংখ্যা ছিল এক হাজার। ইসলামের মুজাহিদগণ এই যুদ্ধে এক অবর্ণনীয় বিজয় লাভ করল। শত্রুনেতা আবু জাহাল সহ কুরাইশের সত্তর জন বড় বড় নেতা নিহত হল এবং ৭০ জন বন্দী হল। মুজাহিদগণের মধ্যে চৌদ্দজন শাহাদত বরণ করলেন। ওয়াকেদী নিজের পুস্তক মাগাযীতেঃ এই যুদ্ধে ২২ জন হযরত আলী (আঃ) এর হাতে মাড়া জায়।

উহুদ যুদ্ধঃ

তৃতীয় হিজরীতে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে কুরাইশ ৩ হাজার যুদ্ধা সংগ্রহ করে। এ যুদ্ধে নবী করীম (সাঃ) এর দাঁত মোবারক শহীদ হল। মুসলমানদের মধ্য থেকে সত্তর জন শাহাদত বরণ করলেন। এই বছর যাকাত ফরয করা হল।

মদ পান নিষিদ্ধ ঘোষণাঃ

চতুর্থ হিজরীতে মদ পান নিষিদ্ধ করা হল। বনু নযীরে ইহুদীদেরকে অবরোধ করে রাখা হল। ১৫ দিনপর অবরোধ শেষ হল।

পঞ্চম হিজরীতে মহিলাদের পর্দার বিধান নাযিল হল। আর গাযওয়া আহযাব তথা খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হল। খায়বারের যুদ্ধ সংঘটিত হল।

হুদায়বিয়ার সন্ধিঃ

ষষ্ট হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধি সাক্ষরীত হল। এটি ছিল মুসলিমদের জন্য প্রকৃত পক্ষে মহান বিজয়ের সুচনা। তখন নবী (সাঃ) দেশ বিদেশের বড় বড় রাজা সম্রাটদের কাছে চিঠি পত্র লিখতে শুরু করলেন।

মক্কা বিজয়ঃ

অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের ঘটনা ঘটল। কা’বা শরীফ থেকে মুর্তিগুলো সরিয়ে দেয়া হল। পরিপূর্ণভাবে তাকে পবিত্র করা হল।

বিদায়ী হজ্জঃ

নবম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়। আর তাবুকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। দশম হিজরীতে নবী কারীম (সাঃ) হজ্জ আদায় করলেন। অন্তত এক লক্ষ মুসলমান তাঁর সঙ্গেঁ হজ্জ আদায় করেন। এটিই ছিল হাজ্জাতুল বীদা বা বিদায়ী হজ্জ।

ইন্তেকালঃ

নুবুওয়াত লাভের পর তিনি ২৩ বছর পাঁচ দিন পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে উম্মতকে দ্বীন শিক্ষা দেন। ২৮ ই সফর ৬৩ বছর বয়সে পবিত্রাত্মা শরীর থেকে পৃথক হয়ে যায় এবং তিনি দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে যান। রাসুল (সাঃ) কে হযরত আলী (আঃ) গোসল দেন এবং তারপর নামাযে জানাযা পড়েন ও দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।

পবিত্রাত্মা পত্নীগণঃ

(১) খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ

(২) ছাউদা বিনতে যামআহ

(৩) আয়েশা বিনতে আবিবকর

(৪) হাফছা বিনতে উমর

(৫) যায়নাব বিনতে খুযায়মা

(৬) উম্মু সালামা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়্যা

(৭) যায়নাব বিনতে জাহাশ

(৮) জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারিছ

(৯) উম্মু হাবীবা রামলা বিনতে আবি সুফয়ান

(১০) সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই

(১১) মায়মুনা বিনতে হারিছ।

(১২) রায়হানা বিনতে যায়েদ আন নযরিয়্যাহ। তিনি ৫ম হিজরীতে নবী কারীম (সাঃ) এর দাম্পত্য জীবনে শরীক হলেন।

(১৩) মারিয়া কিবতিয়্যাহ। তিনি ৬ষ্ঠ হিজরীর পর নবী কারীম (সাঃ) এর দাম্পত্য জীবনে শরীক হলেন।

পবিত্র সন্তান-সন্ততিঃ

নবী কারীম (সাঃ) এর পুত্র সন্তানদের ব্যাপারে সীরাত বিশেষজ্ঞদের মতানৈক্য রয়েছে। তবে কাসেম এবং ইব্রাহীম সম্পর্কে সবাই একমত। তৈয়ব এবং তাহের দুটি আব্দুল্লাহর উপাধী ছিল।

সন্তানগণঃ

১ – আল কাসিম, তিনি খাদীজার গর্ভে জন্মলাভ করেন এবং বাল্যকালেই মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ছিলেন সর্ব প্রথম সন্তান। একারণেই নবী কারীম (সাঃ) কে ‘আবুল কাসেম’ বলে ডাকা হত।

২ – আব্দুল্লাহ (তৈয়ব ও তাহির) তিনিও খাদীজার গর্ভে জন্মলাভ করেন এবং বাল্যকালে মৃত্যু বরণ করেন।

৩ – ইব্রাহীম (রাঃ) তিনি মারিয়া কিব্তিয়ার গর্ভে জন্মলাভ করেন এবং বাল্যকালে মৃত্যু বরণ করেন।
৪ – ফাতিমা, তিনি আলী (আঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

নবী (সাঃ) এর পরবর্তী বংশধারা তাঁর কন্যা ফাতিমা (সাঃ) এর সন্তান-সন্ততিদের মাধ্যমেই অব্যাহত রয়েছে। ফাতিমা (সাঃ) এর সন্তান-সন্ততি সাদাতে বনী ফাতিমা নামে প্রসিদ্ধ। (সংক্ষিপ্ত)