রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাড়ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাড়ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম

আমিরুল ইসলাম, কক্সবাজার ।।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একের পর এক ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে কুতুপালং শিবিরে নতুন ও পুরনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। তার মধ্যে অপহরণের শিকার হয়েছে অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে ৬ রোহিঙ্গা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসলেও অন্যদের এখনও খোঁজ নেই বলে জানা গেছে। ফলে ক্যাম্পজুড়ে অপহরণ আতঙ্কের পাশাপাশি উত্তেজনাও বিরাজ করছে।

রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘মুন্না গ্রুপ’ গত কয়েক দিনে ১৫ জন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করেছে। এর মধ্যে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছে ৬ জন। বাকিরা এখনও তাদের হাতে জিম্মিদশায় রয়েছে বলে দাবি তাদের।

জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট রাতে সন্ত্রাসী গ্রুপের এক নেতা নেছার আহমদের ছেলে সদ্য জেলফেরত আবুল কালামকে অপহরণের জের ধরে একের পর এক সংঘর্ষ ও অপহরণের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। স্বামীকে অপহরণের ঘটনায় আবুল কালামের স্ত্রী নুর জাহান বেগম বাদী হয়ে গত শনিবার রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী আবদুল হামিদসহ ১১ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এরপর থেকে ক্যাম্পের পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তা ছাড়া গত পাঁচ দিন ধরে অপহরণ, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উখিয়ার রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের ই-ব্লকের মোহাম্মদ ফরিদ ও এফ-ব্লকের নুর হাশিম, মাস্টার মুন্না এবং আনরেজিস্টার্ড ক্যাম্পের নেতা রফিক উদ্দিন, হাফেজ জাবেদ ও সাইফুলের মধ্যে অন্তঃকোন্দল শুরু হয়। এরপর থেকে ক্যাম্পের পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।

তবে কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএনের পরিদর্শক মো. সালেহ আহমদ পাঠান বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। বর্তমানে ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করেছেন তিনি। অন্যদিকে থমকে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব প্রক্রিয়াই। মিয়ানমারের মিথ্যা প্রতিশ্রæতি, একের পর এক শর্তের কারণে ভেস্তে গেছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। প্রাণঘাতী মহামারির কারণে আড়ালে পড়ে গেছে বিশে^র সবচেয়ে বড় শরণার্থী সঙ্কট। এর আগে দুবার সরকারিভাবে প্রত্যাবাসনের সব আয়োজন হলেও কোনো রোহিঙ্গা ফিরে যায়নি নিজ দেশে। বরং জুড়ে দিয়েছিল নতুন শর্ত এতে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

তবে প্রত্যাবাসনের পেছনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দেশীয় বিভিন্ন এনজিওকে ব্যবহার করে গোপনে প্রত্যাবাসনবিরোধী কার্যক্রম চালায়। এতে করে রোহিঙ্গাদের মাঝে ফিরে না যাওয়ার দাবিগুলো উঠে আসছে। তখন ওই সংস্থাগুলো বলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ হয়নি রোহিঙ্গাদের। যার কারণে কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরেও সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে গত ৩ বছরে রোহিঙ্গাদের কর্মকান্ডে কেবল অতিষ্ঠ নয় বরং রোহিঙ্গাদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয়দের। কারণ রোহিঙ্গারাই এখন স্থানীয়দের গুম-খুনসহ নানা অপরাধ করতে দ্বিধা করছে না। আর সব অপরাধ ধামাচাপা দিতে ব্যস্ত থাকে একটি সুবিধাভোগী মহল। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আগামী দিনের কথা চিন্তা করে রীতিমতো অস্থিরতায় আছে স্থানীয়রা। তাই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের ভাসানচরসহ অন্য জেলায় বা অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করার দাবি জানিয়েছে কক্সবাজারের সুশীল মহল।

কক্সবাজার সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মঈনুল হাসান চৌধুরী বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা থেকে কিছু অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। ফলে তারা গোটা দেশের জন্য যেমন হুমকিস্বরূপ তেমনি ক্যাম্পেও আধিপত্য বিস্তারে বিভক্তি সন্ত্রাসী বাড়ায় সেখানে নিয়মিত হচ্ছে অপহরণ, মারামারি ও মাদক কারবার। তাই রোহিঙ্গাদের এই দেশ থেকে সরানো ফরজ হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজারে সুশীল সমাজের অন্যতম নেতা ডিএম রুস্তম জানান, এদেশে এসে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ এখন বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে। ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি এবং ২২ আগস্ট দুবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও একজনও ফেরত যায়নি বরং তারা নতুন শর্ত দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে ফেলেছে। তাই আর কোনো কথা নয় তাদের দ্রুত এই দেশ সরানোর দাবি তুলছেন তিনি।

তবে এ ব্যাপারে জানতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের ফোনে কল করলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।