শুভ জন্মদিন : ছিয়াত্তরে শেখ হাসিনা

শুভ জন্মদিন : ছিয়াত্তরে শেখ হাসিনা
শুভ জন্মদিন : ছিয়াত্তরে শেখ হাসিনা

বিশেষ প্রতিবেদক।।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার বড় কন্যা তিনি। শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শৈশব, শিক্ষা, পরিবার ও ছাত্র রাজনীতি :

দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সায়েরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে টুঙ্গিপাড়ায়। শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেলসহ তারা পাঁচ ভাই-বোন। বর্তমানে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু ও মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। পরে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় তিনি ১৯৬২ সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে পথে নেমে আন্দোলন করেছেন। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন শেখ হাসিনা। ১৯৬৬ সালে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন ১৯৬৭ সালে ও ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের তত্ত্বাবধানেই ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় তার প্রথম সন্তান জয়ের মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা পুতুলের জন্ম হয়।

অর্জন :

মিয়ানমারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে  হয়েছেন প্রশংসিত হয়েছেন। তার নেতৃত্বে স্থায়ী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, আইসিটি ও এসএমই খাতে এসেছে সাফল্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি সম্পাদন, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতিসহ জাতীয় জীবনের বহু ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন শেখ হাসিনা।

সম্মাননা ও পদক :

টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দেয় গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই)। একই মাসে শেখ হাসিনাকে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পদক দেওয়া হয়। এর আগে বিশ্বে র কয়েকটি বিখ্যাত বিশ্ব বিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র সমুন্নত ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে পদক দেয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ও ২০১৮ সালে স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশিপ গ্রহণ করেন।

সঙ্কটময় পথ :

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে এক ক্রান্তিকাল দেখা দেয়। জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী ও কামারুজ্জামানকে কারাগারে হত্যা করায় গভীর সঙ্কট দেখা দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। দলের সেই বেসামাল পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে সভানেত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্তত ১৯ বার হামলা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

সংগ্রামী পথচলা :

দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার সঙ্গে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার নেতৃত্বে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সাফল্য ছিল ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ৩০ বছরের চুক্তি এবং পাহাড়ে সংঘাত নিরসনে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। এ ছাড়া কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু করেছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব নেন। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এ ছাড়া তিনি তিন মেয়াদে সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।

সাফল্য :

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড, জিডিপির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্য রয়েছে।

শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্য :

শেখ হাসিনার লেখা ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০টিরও বেশি। প্রকাশিত অন্যতম বইগুলো হচ্ছে : ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘সাদা কালো’, ‘ওরা টোকাই কেন’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ’, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’, ‘আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন’, ‘বিপন্ন গণতন্ত্র’, ‘সহে না মানবতার অবমাননা’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’ ইত্যাদি। সময়ের আলো।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;