স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী রোগীর সঙ্গে অশ্লীল মন্তব্যের অভিযোগ !

স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী রোগীর সঙ্গে অশ্লীল মন্তব্যের অভিযোগ !
স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী রোগীর সঙ্গে অশ্লীল মন্তব্যের অভিযোগ !

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

স্কয়ার হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নারী রোগীকে অশালীন মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

আফসানা বুশরা নামের এক নারী রবিবার (১২ জুলাই) রাতে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ফেসবুকে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ আনেন।

বুশরা ফেসবুকে জানান, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসক তার যৌনাঙ্গের সমস্যা পরীক্ষা করার সময় মন্তব্য করেন, “আপনাকে ধর্ষণ করা দরকার।”

এ বিষয়ে উক্ত চিকিৎসক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, “কনসালটেন্সি চলাকালীন সময়ে রোগী এবং তার মায়ের সাথে কথোপকথনে কোনো প্রকার অসঙ্গতি ওনারা পেয়েছেন কিনা তা আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়নি। তাছাড়া এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে ওনারা আমার বা হসপিটাল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো প্রকার অভিযোগও করেননি।”

ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন গত শনিবার (১১ জুলাই) ২১ বছর বয়সী বুশরা যৌনাঙ্গের “ভিজিনিসমাস” নামক এক অসুস্থতার জন্য স্কয়ার হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক ডা. কাজী শামসুন নাহারের কাছে যান।

রোগটি পরীক্ষার এক পর্যায়ে ডাক্তারের কারণে যৌনাঙ্গের পেশীতে তীব্র ব্যাথা অনুভূত হলে, ডা. শামসুন নাহার এই মন্তব্য করেন বলে বুশরা ফেসবুকে জানান।

পরে বুশরা বিষয়টি সংক্ষিপ্তভাবে তার ফেসবুক প্রোফাইলে তুলে ধরেন।

বুশরা লিখেন: “ডাক্তার কাজী শামসুন নাহার, আপনি ডাক্তার নামের কলঙ্ক। আপনি পৃথিবীর সমস্ত ডাক্তারদের জন্য কলঙ্কসরূপ, যারা অন্যদের সেবা দিয়ে চলেছে। আপনি আমার রোগ নির্ণয়ের সময় আমাকে ধর্ষণ করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন, যা সমস্ত মানুষের জন্য অপমানজনক।”

বুশরা গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “আমার মা চেম্বারে আমার সাথে গিয়েছিলেন, তিনি একজন প্রত্যক্ষদর্শী, কিন্তু আমি জানি আমি কোনো বিচার পাবো না। যাইহোক, আমি ঘটনাটি ফেসবুকে পোস্ট করেছি যাতে অন্য কোনও মেয়ে তার (কাজী শামসুন নাহার) কাছ থেকে এই ধরনের মানসিক আঘাতের সম্মুখীন না হয়।”

বুশরা বলেন, “আমার আপত্তি এই বিশেষ চিকিৎসককে নিয়ে, স্কয়ার হাসপাতালের প্রতি নয়। হাসপাতালের সুনামের প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই।”

তিনি তার ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, “মহিলা (ডা. কাজী শামসুন নাহার) আমার পেশির পরীক্ষা করছিলেন, যা ছিল অত্যন্ত কষ্টদায়ক। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি ব্যাথা পাচ্ছি। পরীক্ষার পর তিনি আমার সামনে বসলেন এবং কারও মুখ থেকে শুনলাম এমন ভয়াবহ কথা শুনলাম।”

বুশরা লিখেছেন, “তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার স্বাস্থ্যের উদ্বেগজনক বিষয়টি সম্পর্কে কারও সাথে কথা বলা উচিত নয় এবং আমার যৌনাঙ্গ ভবিষ্যতের জন্য আমার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে চলেছে।”

“তারমানে তিনি যৌনশিক্ষার চূড়ান্ত বিরোধী এবং মানুষ তাদের যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে কিছু শিখতে চায় না।” তিনি বলেন, “আধুনিকতাবাদের নামে এই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবেন না।”

তিনি আরও লিখেছেন: “আমি তার পরবর্তী কথাটি আমি উদ্ধৃতিতে রেখে দেব, কারণ এটি আমার কাছে ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষায় প্রকাশ করার মানসিকতা নেই।”

“এইসব মেয়েদের হাসব্যান্ড একটু জংলী টাইপের হওয়া উচিত, যাতে তারা একবারে রেপ করে ফেলে। কারণ এই মেয়েরা পারমিশন দিতে চায়না, যেহেতু ওদের সেক্স এর সময় ব্যাথা লাগে। সো, একবারে রেপ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“আমি চোখে জল নিয়ে কক্ষটি ছেড়ে বের হয়ে এলাম। এ সময় আমি খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, শুধু এই কথাটি বলার জন্য আমি কাউকে টাকা দিয়েছি। আমি খুবই আঘাত পেয়েছি, ভেঙে পড়েছি এবং নিজেকে অসহায় মনে হয়েছে।”

আফসানা তার ফেসবুক পোস্টে আরও লিখেছেন, “তাকে কিছু না বলে আমি নিজের উপর রেগে গিয়েছিলাম, কারণ কে জানে যে কত মেয়ে এই মহিলার (ডাক্তার) চেম্বার থেকে ভাঙা মন ও চোখে জল নিয়ে বের হয়ে গেছে, এই ভেবে যে তাদেরও ধর্ষণ করা দরকার।”

বুশরা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় প্রদত্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডা. শামসুন নাহার একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন: “গত শনিবার বুশরা নামের কিছু সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন।”

“রোগীর সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে তার সাথে আলোচনার ভিত্তিতে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এবং রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য খুবই যুক্তিসংগত এবং প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করি।”

“রোগীর শারীরিক অবস্থা বোঝার জন্য (যা রোগ নির্ণয়ের জন্য আবশ্যক) অনুমতি সাপেক্ষে তার মায়ের উপস্থিতিতে শারীরিক পরীক্ষা করা হয় এবং সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।”

“পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জানতে পারি যে, উক্ত রোগী আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মনগড়া একটি অনৈতিক ব্যাখ্যামূলক অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

“আমার বক্তব্যে আফসারা তাসনিম বুশরার যদি মনে হয়ে থাকে যে আমি চিকিৎসাগত কোনো প্রকার অসদাচারণ করেছি তাহলে তিনি অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখেন। তা না করে তিনি আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এবং সামাজিকভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।”

এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ওয়াহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “আমরা চিকিৎসকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। আমরা সম্ভবত আজ (সোমবার) আমাদের অফিসিয়াল বিবৃতি দেব।”

“মেয়েটির গণমাধ্যমের কাছে যাওয়ার পরিবর্তে প্রথমেই স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাওয়া উচিত ছিল,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, “এই ধরনের ভাষা একজন ডাক্তারের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত। এটা সত্য কিনা তা আমি জানি না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই কোনো পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই বিষয়টি তদন্ত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”