আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া সভাপতি, সম্পাদক এস.এম আল মামুন

সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সংঘর্ষ, আহত ১৮

আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া সভাপতি, সম্পাদক এস.এম আল মামুন

শুক্রবার বিকালে পৌরসদরস্থ হাইস্কুল মাঠে সীতাকুন্ড উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। এ কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের দীর্ঘ ২৫ বছরের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা যুবলীগ সভাপতি এস.এম আল মামুন। তাদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ড উপজেলা আ.লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সভাপতি প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া ও এস.এম আল মামুনের সমর্থকরা মিছিল করে পৌর এলাকা সরগরম করে তোলে। বেলা ১২টার আগে পুরো মঞ্চ নিয়ে নেয় এ দুই গ্রুপের সমর্থকরা। এক পর্যায়ে চেয়ার দখল নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুঁড়ি ও মারামারি শুরু হয়। এতে সেখানে উপস্থিত অন্তত ১৮ জন আহত হয়। তাদেরকে সীতাকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদিকে বিকাল ৩টার পর অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হতে থাকেন অতিথিরা।

প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়াম মোশাররফ হোসেন এমপি, অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে করিম এমপি, প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ সালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সীতাকুন্ডের এমপি দিদারুল আলম, রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হক বাবুল। উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইসহাকের সভাপতিত্বে ও যুগ্ন সম্পাদক আ ম ম দিলশাদের সঞ্চালনায় কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনে অতিথিবৃন্দ বক্তব্য রাখার পর কাউন্সিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠান স্থল থেকে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অবস্থান নেন।

এসময় নিজেদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচন না করে প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, সীতাকুন্ড উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন সভাপতি হিসেবে আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস.এম আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এসময় তাদের সমর্থকরা শ্লোগান ও করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানালেও সীতাকুন্ডের এমপি দিদারুল আলম এ সিদ্ধান্ত মানেন না বলে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি দিদারুল আলম বলেন, আওয়ামীলীগের প্রবীন ও সিনিয়র নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নির্বাচন ছাড়াই সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেছেন। এ সিদ্ধান্তে আমাদের কোন মতামত ছিলো না। তাই আমরা এ ঘোষণা মানতে পারিনি। তবুও আমরা এ নিয়ে তাঁর সাথে আবার কথা বলব। এদিকে প্রথমে সভাপতি প্রার্থী হলেও পরে তাকে এস.এম আল মামুনকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এস.এম আল মামুন বলেন, চেয়েছিলাম সভাপতি পদ। কিন্তু সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আমাকে সাধারণ সম্পাদক পদ দিয়েছেন।

তাদের সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিয়েছি। অন্যদিকে এ নির্বাচনে একমাত্র আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়াই যে পদ চেয়েছেন তাকে সে পদে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে। অন্য কেউই তাদের চাওয়া বা পছন্দের পদ পাননি। তাই বাকের ভূঁইয়ার সমর্থকরাই সবচেয়ে বেশি আনন্দ উল্লাস করছেন। বিজয়ী হওয়ায় তিনিও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনটি সমঝোতার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম. এ সালাম। তিনি বলেন, সমঝোতার ভিত্তিতে আব্দুল্লা আল বাকের ভূঁইয়া সভাপতি ও এস.এম আল মামুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

এদিকে শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আওয়ামীলীগের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সীতাকুন্ড থানার ওসি মো. ফিরোজ মোল্লা। তিনি বলেন, অতিথিবৃন্দ আসার আগে মঞ্চে অবস্থান নেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার মারামারি হলেও পরে নেতারা আসার পর আর কোন অসন্তোষ হয়নি। সুন্দরভাবে কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, ৭ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে সীতাকুন্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ২২ অক্টোবর। ঐ নির্বাচনে সাবেক সাংসদ মরহুম এবিএম আবুল কাসেম সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

সুত্রঃ দৈনিক পূর্বকোণ