সীতাকুণ্ডে জলাতঙ্কে গরু মারা যাওয়ায় সরকারী ক্ষতিপূরণ ৮০ হাজার টাকা পেলেন খামারি
বিশেষ প্রতিবেদক।।
সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের প্রান্তিক খামারি আনোয়ার হোসেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে দেড় বছর আগে একটি গরুর বাচুর লালন-পালন শুরু করেন । কিন্তু ৬ মাসের মাথায় গরুটি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার আগেই মারা যায়।
গরু মারা যাওয়ার বেশ ভেঙে পড়ে আনোয়ার। তাছাড়া ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে সে। অবশেষে সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় নগদ ৮০ টাকা সহায়তা পেয়ে আনোয়ার হোসেনের মুখে যেন হাসি ফুটেছে। নিজেকে আবার দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
বুধবার (৫ জুলাই) সকাল ১১টায় সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন খামারি আনোয়ার হোসেনের হাতে ৮০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু।
এসময় খামারি আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০২২ সালের জুনে আমার গরুটি মারা যায়। একমাত্র সম্বল গরুটি হারিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। বিশেষ করে ঋণের টাকা নিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। কখনও ভাবিনি সরকার আমার পাশে দাঁড়াবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমার মারা যাওয়া গরুটির জলাতঙ্ক পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর আমি ৮০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছি। এখন আমি অনেক খুশি। এই টাকা দিয়ে আরেকটি গরু কিনে লালন-পালন শুরু করব ইনশাআল্লাহ। সরকারি সহায়তা পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, আমি সরকারের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
উল্ল্যেখ্য যে, করোনা মহামারীকালে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এ প্রকল্পের কার্যক্রম দেশের ২৮টি জেলার ২০১টি উপজেলায় চলে। প্রকল্পের আওতায় জুনোটিক রোগে মৃত বা আক্রান্ত (কালিং সাপেক্ষে) গরু ও মহিষের খামারি পর্যায়ে ক্ষতিপূরণ এবং নিরাপদ অপসারণে (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) কাজ করা হয়।
গৃহপালিত প্রাণীর ও প্রাণীজাত খাদ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ ল্যাবের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ চারটি জুনোটিক রোগ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হচ্ছে এবং জুনোটিক রোগ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
চারটি জুনোটিক রোগ বোভাইন টিবি, ব্রুসেলোসিস, অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে মৃত গরু-মহিষের ক্ষেত্রে বড় গরু বা মহিষের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার এবং এক বছর বয়সী বাছুর গরুর জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে।
প্রকল্পভুক্ত উপজেলা থেকে আক্রান্ত গরু-মহিষের নমুনা প্রেরণ কেন্দ্রীয় প্রাণিরোগ অনুসন্ধান গবেষণাগার (সিডিআইএল) এবং ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ অনুবিভাগ ঢাকা থেকে চূড়ান্ত ল্যাব পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল প্রাপ্তি সাপেক্ষে খামারিকে ক্ষতিপূরণ ও নিরাপদ অপসারণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় হেলথ সার্ভিস জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় খামারি আনোয়ার হোসেনকে সরকারি সহায়তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক খামারিদের সেবায়-সহযোগিতায় আমাদের নানা প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমরা সবসময় সেবা দিতে প্রস্তুত।
খালেদ / পোস্টকার্ড ;