সীতাকুণ্ডে ব্যবসায়ীকে ব্যবসায়ী নেতার মারধর!

সীতাকুণ্ডে ব্যবসায়ীকে ব্যবসায়ী নেতার মারধর!
সীতাকুণ্ডে ব্যবসায়ীকে ব্যবসায়ী নেতার মারধর!

ডেস্ক নিউজ ।।

সীতাকুণ্ডে পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স প্রীতি ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করে পাওনা টাকা দুইবার আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ আসলাম উদ্দিন সীতাকুণ্ড থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।  

অভিযোগে জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বাজারের সদস্য ভোটার ভুষি (পশুর খাবার) ব্যবসায়ী মোঃ আসলাম উদ্দিনকে পাওনা টাকার জের ধরে তার দোকানে ডেকে নিয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে মারধর করেন। শুধু তাই নয় টাকা দেয়ার প্রমাণ দেখাতে চাইলে বেলাল তার দোকানের কর্মচারী দিয়ে ব্যবসায়ী আসলামকে রশি দিয়ে বাধারও নির্দেশ দেন। পরে আশেপাশের মানুষ ভিড় করলে বেলাল হোসেন আসলামকে চোর আখ্যা দিয়ে নানভাবে অপমান করেন। এমনকি মসজিদে গিয়ে পরিশোধকৃত টাকা দ্বিতীয় বার আদায় করা হয়েছে আসলামের কাছ থেকে  ব্যবসায়ী আসলামের অভিযোগ, চরম লাঞ্ছনার শিকার ও বেলালের চাপে বাধ্য হয়ে বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদে গিয়ে পরিশোধকৃত পাওনা টাকা দ্বিতীয়বার পরিশোধ করতে হয়েছে। তার পাওনা মাত্র ৩৪৫০ টাকা ৮ সেপ্টেম্বর পরিশোধ করা হলেও পরদিন প্রীতি ষ্টোরের কর্মচারী আবারও আসলামের কাছে একই টাকার রশিদ পাঠান। এসময় আসলাম কারণ জানতে চাইলে টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে জানায় রশিদ বহনকারী কর্মচারী। এ ঘটনার একদিন পর ১০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটায় বেলাল হোসেন আসলামকে তার দোকানে ডেকে নিয়ে  পরিশোধকৃত ৩৪৫০ টাকা আবারও দাবি করেন। এসময় টাকা পরিশোধ করা হয়েছে জানালে বেলাল হোসেন আসলামকে চোর বলে আখ্যায়িত করেন এবং তার কর্মচারীদের রশি দিয়ে আসলামকে বাধার নির্দেশ দেন। পরে বেলাল হোসেন আসলামকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে হেনস্তা করেন এবং বারবার মারধর করতে তেড়ে আসেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।  

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, আমি সেদিন চরম অপমান হয়েছি। বেলাল আমাকে এতোটা অসম্মান করবে আমি ভাবতেই পারিনি। অথচ সে বাজারের সাধারণ সম্পাদক। আমি তাকে ভোট দিয়েছি। আমার ভোটে সে সাধারণ সম্পাদক। আর আজকে সে আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। আমার গায়ে হাত তুলেছে। চরম অপমান-অপদস্ত করেছে। আমি বয়সে তার চেয়ে বড়। ব্যবসায়ী হিসেবে দীর্ঘ ৩৫ বছর সুনামের সাথে সীতাকুণ্ড বাজারে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কোনদিন কারো সাথে অনৈতিক কাজে জড়াইনি। ৩৫ বছরে কারো সাথে লেনদেনে অসঙ্গতির প্রমাণ দিতে পারলে বাজারে ব্যবসা ছেড়ে দিব।  এদিকে শুধু ব্যবসায়ীকে মারধর নয় বাজার কমিটির সভায় সবার উপস্থিতিতে কমিটির এক সদস্যকে মারধর করার হুমকি দেয়ারও অভিযোগ ওঠেছে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির ওই সদস্য জানান, বেলাল হোসেন সীতাকুণ্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী সমিতির দুইবারের সাধারণ সম্পাদক ও প্রীতি ষ্টোরের স্বত্বাধিকারী। দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে বেলাল হোসেন চরম বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন রীতিমতো। সদস্য ব্যবসায়ীদের গায়ে হাত তুলতে, গালিগালাজ করতেও দ্বিধা করছেন না তিনি। নিজেকে বাজারের মালিক মনে করছেন বেলাল হোসেন। নির্বাচনের ইশতেহারে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন দূরে থাক উল্টো ব্যবসায়ীদের উপর জুলুম করছেন। আমি একজন কমিটির নির্বাচিত সদস্য। আমাকে তিনি সভায় মারধর করার হুমকি দিয়েছেন। আমার দোষ হচ্ছে তার কাছে হিসাব চাওয়া।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের আরেক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, বেলাল হোসেন বাজারে একচ্ছত্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চান। দিনের বেলায় কোন ব্যবসায়ীদের মালামালের গাড়ি বাজারে ঢুকতে দেননা তিনি। অথচ নিজের দোকানের বড় বড় ট্রাক ঠিকই দাঁড় করিয়ে মালামাল ওঠা-নামা করেন। গেল রমজান মাসে এসব নিয়ে একজন ব্যবসায়ীর সাথে তার মারামারিও হয়েছে। ব্যবসায়ী নেতা হয়ে বাজারে সদস্যদের সাথে বেলালের মারামারি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।  এদিকে বেলালের এসব কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বড় ব্যবসায়ী ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়ে একজন সদস্য ভোটারকে সামান্য টাকার জন্য মারধর করা অত্যন্ত অন্যায় হয়েছে। এতো নির্লজ্জ কাজ তার দ্বারা হয়েছে ভাবতেও অবাক লাগছে। আসলাম উদ্দিন তার টাকা পরিশোধ করার পরও জোর করে টাকা আদায় করা হয়েছে। এমনকি মসজিদে গিয়ে ওই টাকা নিয়েছেন বেলাল হোসেন।  

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিচ্ছু জানিনা। আমার সাথে কারো বিরোধ নেই। এমন কোন ঘটনা আমার সাথে ঘটেইনি।  

বিষয়টির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পৌরসদর ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিম বাহার বলেন, আমি এ ব্যাপারে জানিনা। তবে ভুষি ব্যবসায়ী আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন ঘটনাটি। আমি কথা বলবো বলেছি। সামান্য টাকার জন্য বেলাল হোসেন এরকম করবে বলে আমার মনে হয়না। তবুও আমরা খতিয়ে দেখব।  

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, আমি এখনো অভিযোগটি পায়নি। থানায় অভিযোগ হলে অবশ্যই  আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;