সীতাকুণ্ডে বর্ষায় জমে থাকা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ থমকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়

সীতাকুণ্ডে বর্ষায় জমে থাকা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ থমকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়
সীতাকুণ্ডে বর্ষায় জমে থাকা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ থমকে আছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

বর্ষা এলে সীতাকুণ্ডে পৌরসভায় তিন ফসলি শত শত একর জমি পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর তাই কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার সীমা নেই। পৌরসভার ছড়া ও খালগুলো সংস্কারের বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কবলে পড়ে তা সংস্কার করা যাচ্ছে না।  এ নিয়ে থমকে আছে বর্ষায় জমে থাকা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ । 

সোমবার পৌরসভা বিভিন্ন এলাকায় গেলে অনেক ভুক্তভোগীর সাথে দেখা হয় এবং কথা হয় । অন্যন্য সৌন্দর্য খ্যাত এ পৌরসভা এলাকায় অনেকগুলো ছড়া ও খাল আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত এ ছড়া ও খালগুলো সংস্কার বা ড্রেসিং না করার ফলে অতিবর্ষণ বা ভারী বর্ষণে বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের কারণে সর্বদা কৃষি জমিগুলো জলাবদ্ধ থাকে। ফলে কৃষকরা কৃষি কাজ করতে পারে না। এমনকি বসতবাড়ি পানিতে ডুবে মানুষের বসবাসে অনুপযোগী হয়ে উঠে। তখন রাস্তাঘাটগুলো জনগণের চলাচলের জন্য ভীষণ বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। আর এ জলাবদ্ধতা বছরের ১২ মাস থাকার ফলে পৌর এলাকার কৃষি জমিগুলো অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকে। এ জলাবদ্ধতায় স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে অনেক কষ্ট পেতে হয়।

তবে পৌরসভায় অবস্থিত ছড়া ও খালগুলোর সংযোগস্থল কুমিরা খাল হয়ে বঙ্গোপসাগরের সহিত সংযোগ আছে। তাছাড়াও বেড়িবাঁধে সংলগ্ন স্লুইস গেইটগুলো অকেজো থাকার ফলে পানি সরে না। এটিও এলাকায় জলাবদ্ধতার আরেকটি কারণ।

যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ভিশন বাস্তবায়নের অন্তরায়। দ্বিতীয়ত সীতাকুণ্ড পৌরসভা একটি ১ম শ্রণির পৌরসভা। তিন ফসলি শত শত একর জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে কৃষকেরা অর্ধাহারে অনাহারে জীবণ কাটিয়ে সীমাহীন দুঃখ দুর্দশার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়।

প্রান্তিক কৃষকদের ও জমি মালিকদের দাবিতে পৌর মেয়র স্থানীয় কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দিলে খালটি সংস্কারের উদ্যোগে নিলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ধরনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না। তবে খালটি সকল জমির মালিকদের উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে চিহ্নিত করা হয়।

খালের সংস্কার পূর্ববর্তী অবস্থান ছিল ১২/১৪ ফুট প্রস্থ, গভীরতা ৩/৪ ফুট, সীট মোতাবেক খালটি সর্বনিম্ন ১৮ ফুট হতে সর্বোচ্চ ৩৬ ফুট প্রস্থ পাওয়া যায়। বর্তমানে সংস্কার করার পর যার অবস্থান দাঁড়ায় গভীরতা ভূমি হতে ৭/৮ফুট প্রস্থ ৩০/৩২ ফুট পাড়সহ। এছাড়া পূর্ববর্তী সময়ে খালের পাড় ছিলো না বললেই চলে যা বর্তমানে ভূমি হতে ২/৩ফুট উচ্চতা প্রস্থে ৪ থেকে ৬ ফুট। এ দীর্ঘ সময়ে জলাবদ্ধতার দরুন অত্র পৌরসভার কৃষকদের শত শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়।

কৃষক মোস্তফা জানান, অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে আমরা খালের পাড় ঘেঁষা জমিতে চাষ করতাম। কিন্তু এখন থেকে ৩০ বছর যাবৎ খাল সংস্কার না হওয়ায় বৃষ্টির সময় কষ্ট করতে হয়। অপরদিকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়াতে অর্থনৈতিক ভাবেও আমরা কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। এখন খাল সংস্কারের উদ্যােগ নেয়ায় জলাবদ্ধতা হতে মুক্তির পাশাপাশি বর্ষা পরবর্তী জমা পানি কৃষকের উপকারে আসবে।

স্থানীয় কাউন্সিলর মো: ফজলে এলাহী বলেন, আমার এলাকাবাসীর দাবিতে সকল কৃষক ও জমির মালিকদের নিলেও সংস্কারের জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ না থাকায় এস্কেভেটর ব্যয় সহ যাবতীয় ব্যয়ের জন্য কিছু মাটি বিক্রয় করে সংস্কার কাজ শুরু করি এবং সাথে কবরস্থানের জন্য মাটি দেয়াও সিদ্ধান্ত হয়।

এ ব্যাপারে পৌর মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব বদিউল আলম জানান, পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা একটি অভিশাপ স্বরুপ। দীর্ঘদিন ধরে এ জলাবদ্ধতায় কৃষকদের দুঃখ দুর্দশার কথা উপলব্ধি করে খাল সংস্কার জরুরি মনে করি। তাই আমার নির্দেশনা পেয়ে কোন কোন কাউন্সিলর খাল বা ছড়া সংস্কারের কাজে হাত দিলেও পরবর্তীতে অন্যান্য ওয়ার্ডে অবস্থিত খালগুলোও দ্রুত সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করা হবে। এজন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী নাদিরউজ্জামান বলেন, আমরা খুব তাড়াতাড়ি পানি সংস্কারের ব্যবস্থা নেব বলে জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড;