সীতাকুণ্ডে বাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে মৃত্যু, মামলার সূত্র ধরে আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সদস্য গ্রেপ্তার

সীতাকুণ্ডে বাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে মৃত্যু, মামলার সূত্র ধরে আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সদস্য গ্রেপ্তার
সীতাকুণ্ডে বাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে মৃত্যু, মামলার সূত্র ধরে আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সদস্য গ্রেপ্তার

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

সীতাকুণ্ডে বাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যুর মামলার সূত্র ধরে প্রায় ২০ বছর ধরে শতাধিক অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সদস্য আবদুস সাত্তারকে তার সহযোগী মো. ইসমাইলসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

সোমবার রাতে নগরের অয়্যারলেস মোড় থেকে সাত্তারকে এবং জালালাবাদ এলাকা থেকে ইসাইলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের হেফাজত থেকে ১৩টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। প্রত্যেকটি মোবাইল লোকজনকে অজ্ঞান করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

পিবিআই জানায়, এক বছর আগের একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সাত্তারকে। এরপর তার অন্যান্য অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসে। সাত্তারকে গ্রেপ্তারের পর নগরের মনোহরখালী এলাকা থেকে পলাশ দাশ নামে একজন ভুক্তভোগী পিবিআই কার্যালয়ে গিয়ে তাকে ও ইসমাইলকে শনাক্ত করেন।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম শহর থেকে সীতাকুণ্ডগামী বাসে অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েছিলেন আবু ছৈয়দ (৫৪) নামে এক ব্যক্তি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ অক্টোবর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গত ১ জানুয়ারি পিবিআই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এরা হল মহিন উদ্দিন (৩০), আনোয়ার হোসেন (৪২) এবং রফিকুল ইসলাম (৪২)। তাদের কাছ থেকে ঘটনায় জড়িত আবদুস সাত্তারের বিষয়ে তথ্য পেয়েছিল পিবিআই।

পিবিআই জানায়, ওই হত্যা মামলা তদন্তে নেমে তারা মোট তিনটি সক্রিয় অজ্ঞান পার্টির সন্ধান পেয়েছে, যার প্রতিটির সঙ্গে আবদুস সাত্তারের সম্পৃক্ততা আছে। নোয়াখালীর সেনবাগের একজন জনপ্রতিনিধি তাদের গডফাদার বলে তথ্য দিয়েছেন আবদুস সাত্তার।

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বলেন, একবছর আগে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় একটি মামলা আমরা ছায়া তদন্ত করছিলাম। গত জানুয়ারিতে আমরা এ ঘটনায় অজ্ঞান পার্টির তিন সদস্যকে গ্রেফতার করি। আট মাস পর এসে আমরা আবদুস সাত্তারের তথ্য পেয়ে তাকেও গ্রেপ্তার করি।

তিনি বলেন, বলেন, গত ২০ বছর ধরে সাত্তার এভাবে প্রতারণামূলক নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু পুলিশ কখনও তার হদিস পায়নি। এমনকি পুলিশের সন্দেহের তালিকায়ও সে কখনও ছিল না। অবশ্য বেশভূষা দেখে তাকে বোঝারও কোনো উপায় নেই। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালীসহ আন্তঃজেলা বাসে এসব অপরাধ গত প্রায় ২০ বছর ধরে নির্বিঘ্নে করে গেছে সাত্তার। সেনবাগের একজন পৌর কাউন্সিলর তাদের গ্রুপগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয় বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

আবদুস ছাত্তার একসময় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ছিলেন। সেখানে আয়–উপার্জনে তেমন সুবিধা না হওয়ায় ২২ বছর আগে দেশে ফিরে আসেন। নোয়াখালীর সেনবাগে তার বাড়ির কাছে বাজারে একটি পান দোকান খোলেন। কিন্তু সেই দোকানও নিয়মিত লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। পরে তার পরিচয় হয় মহিনসহ কয়েকজনের সঙ্গে। পরে তাদের মাধ্যমে পকেটমারে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রথমে চট্টগ্রাম শহরে এসে বাসে পকেটমারের কাজ করেন। গত ২–৩ বছর ধরে অজ্ঞান পার্টির সদস্য হিসেবে কাজ করছেন।

আবদুস সাত্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ ভালোভাবে গুঁড়া করি। সেখানে মধু মিশিয়ে দিই, যাতে খেলে বোঝা না যায়। এরপর হালুয়া বানিয়ে এর সঙ্গে মেশাই। তারপর ছোট ছোট প্যাকেটে হালুয়া ভরে সেগুলো নিয়ে তিন–চারজন বাসে উঠি। বাসে আলাদা–আলাদা সিটে আমরা বসি। টার্গেট করা যাত্রীকে প্রথমে হামদর্দ কিংবা বিভিন্ন কবিরাজি বই পড়ানোর কথা বলে ভাব জমায়। এরপর যৌনশক্তি বর্ধক ওষুধের কথা বলি। এর মধ্যে আমাদের লোকজনই আগ্রহ নিয়ে সেই ওষুধ চেয়ে খেতে থাকে। তখন টার্গেট করা ব্যক্তিও খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে ঘুমের ওষুধ মেশানো হালুয়া খেতে দিই। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তখন আমরা কৌশলে টাকা–মোবাইল নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;