সীতাকুণ্ডের সাজ্জাদ বাড়িতে থেকেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামি !

সীতাকুণ্ডের সাজ্জাদ বাড়িতে থেকেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামি !
সীতাকুণ্ডের সাজ্জাদ বাড়িতে থেকেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুর মামলার প্রধান আসামি !

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভাঙচুরের ঘটনায় না থেকেও মামলার আসামি করা হয়েছে সাজ্জাদ হোসেন নামে এক সাবেক শিক্ষার্থীকে। এমনকি গত দেড় বছর তিনি ক্যাম্পাসে যাননি।

সাজ্জাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। মামলার আসামি হয়ে হতবাক সাজ্জাদ নিজেই। অথচ পরিবহন দপ্তরে ভাঙচুরের মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে তাকে।

তিনি বলেন, '২০২২ সালে আমার মাস্টার্স শেষ হয়েছে। এরপরই গত দেড় বছর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি। এখন জানতে পারলাম আমি মামলার আসামি। অথচ ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার আমি বাড়িতে ছিলাম। সরকারি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি বাড়ি থেকে। শুক্রবার আমার চাচা এক্সিডেন্ট করায় ওনার সাথে হাসপাতাল ছিলাম। আজ চাচাকে নিয়ে বাড়িতে আসছি।

তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা আমার মোবাইলের লোকেশন চেক করলেও জানতে পারবে আমি কোথায় ছিলাম। আমার এলাকায় জিজ্ঞেস করলে জানা যাবে আমি কোথায় ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি কখনও রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও ছিলাম না, বাড়ি থেকে আসা যাওয়া করতাম নিয়মিত।'

সাজ্জাদ বলেন, 'আমার নাম ভুলে দেওয়া হয়েছে। আমার ব্যাচে তিনজন সাজ্জাদ আছে। আমি প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, বিষয়টি তদন্ত করতে। মিথ্যা মামলা থেকে আমি মুক্তি চাই।'

এদিকে, গতকাল শনিবার রাতে সামনে আসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহন দপ্তরে গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় আসামিদের তালিকা। দুই মামলায় ১৪ আসামির ১২ জনই ছাত্রলীগের কর্মী। এর আগে শনিবার হাটহাজারী থানায় মামলা দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এই মামলাগুলোর বাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক।

মামলার দুইটির এজহার অনুযায়ী আসামীরা হলেন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুইরেন্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন আইমুন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দীপন বণিক দীপ্ত, শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রিয়াদ হাসান রাব্বি, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নুর মোহাম্মদ মান্না, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ ভূইয়া, পালি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম, পদার্থবিদ্যা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম, হলেন দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইমরান নাজির ইমন, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ বিভাগের অনিক দাশ, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ বিশ্বাস এবং একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের আজিমুজ্জামান।

এর মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম সাধারণ শিক্ষার্থী। বাকিরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী ৫ জন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুর অনুসারী ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াসের অনুসারী আছে একজন।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করতে গিয়ে গাছের আঘাতে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। এর পরপরেই শিক্ষার্থীরা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে আহত একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্স, উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তরে ও শিক্ষক ক্লাবে ব্যপক ভাঙচুর চালান।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;