সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে বন্ধ নেই পাহাড় কাটা - ধ্বসের শঙ্খা, এখনো বাস্তবায়ন হয়নি ৬ সমস্যা ৪ সুপারিশ

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে বন্ধ নেই পাহাড় কাটা - ধ্বসের শঙ্খা, এখনো বাস্তবায়ন হয়নি ৬ সমস্যা ৪ সুপারিশ
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে বন্ধ নেই পাহাড় কাটা - ধ্বসের শঙ্খা, এখনো বাস্তবায়ন হয়নি ৬ সমস্যা ৪ সুপারিশ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে বন্ধ নেই পাহাড় কাটা বরং এত বেশী পাহাড় কেটে যাচ্ছে যার ফলে পাহাড় ধ্বসের শঙ্খা দেখা দিয়েছে আবারো । সেখানে চলছে পাহাড় কাটা ও বাড়ানো হয়েছে লোহার গেটের সংখ্যা। বসানো হয়েছে পাহারাদার। চলছে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাহাড় রক্ষার জন্য কমিটি করা হলেও এক যুগে কমিটির এসব সুপারিশ আলোর মুখে দেখেনি। এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ সমস্যার ৪ সুপারিশ । 

জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুরে হাজারো একর সরকারি পাহাড় রক্ষা করতে চারটি সুপারিশ ও ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। গত এক যুগেও সমস্যা কিংবা সুপারিশ কোনটিই বাস্তবায়ন হয়নি। বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা। এবার সলিমপুরসহ জেলার উত্তর এলাকায় পাহাড় কাটা রোধে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ পাহাড়কাটা রোধে কতুটুক অবদান রাখবে তা হয়তো সময় বলে দেবে।

রক্ষা হয়নি সলিমপুরের পাহাড় : সলিমপুরে সরকারি পাহাড় কাটা ও দখল প্রতিরোধে করণীয় ঠিক করতে ২০০৯ সালে সীতাকুণ্ডের তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেয়। তিন দফা বৈঠকের পর ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করে এবং চার দফা সুপারিশনামা দিয়ে ২০১০ সালের ১৮ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করে।

৬ সমস্যা : সীতাকুণ্ড উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গল সলিমপুরে ৯৪টি দাগে খাস জমির পরিমাণ ১০৮৪ দশমিক ৮৫ একর। এরমধ্যে ৬টি দাগে ৩৬০ দশমিক ২২ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এ বিপুল পরিমাণ পাহাড়ি জমি দখল করা হয়েছে। কমিটি সেই সময় ছয়টি সমস্যা চিহ্নিত করেছিল। তা হলো, দখল করা জায়গায় ২০ হাজার লোক অবৈধভাবে বসবাস করছে। জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশ পথে শক্ত লোহার গেট নির্মাণ করে পাহারাদার বসানো হয়েছে। এতে সবসময় যাতায়াতের পথ বন্ধ থাকে। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কিছু ব্যক্তি সরকারি সম্পত্তি দখল ও কেনাবেচা করছে। দখলদারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিভিন্ন স্থানের সন্ত্রাসীরা সলিমপুর এলাকাকে নিরপদ অভয়ারণ্য হিসাবে ব্যবহার করছে। সন্ত্রাসীদের আখড়ায় পরিণত হওয়ায় সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করতে প্রশাসক প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে এবং অবৈধ দখলদারের কারণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উচ্ছেদ কার্যক্রমে আশানুরূপ ফল না পাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

৪ দফা সুপারিশ : প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ করেছিল উপজেলা কমিটি। এগুলো হলো, সরকারি সম্পক্তি অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা, সেখানে বসবাসরত প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, অবৈধ অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, ভূমিদুস্যদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা ও জঙ্গল সলিমপুরের প্রবেশ পথেই দুই পাহাড়ের মাঝখানে দখলদারদের নির্মিত লোহারগেট তুলে দিয়ে যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত করে সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম জানান, জঙ্গল সলিমপুরের পাহাড়গুলো খাস খতিয়ানভুক্ত। বিষয়টি দেখভাল করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। সেখানেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। আমার জানামতে জঙ্গল সলিমপুরে অনেকে নকল দলিল তৈরি করে পাহাড় দখল করেছে। সেখানে দখলদাররা এতই বেশি সংঘবদ্ধ চাইলে অভিযান চালানো অনেকটা কঠিন। পাহাড় কর্তন রোধে সম্প্রতি আমরা যে কমিটি করেছি তা শুধুমাত্র জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে নয়।

জঙ্গল সলিমপুর, পাহাড়তলী, হাটহাজারীর জালালাবাদ, সীতাকুণ্ড এলাকায় কিছু ব্যক্তি নির্বিচারে পাহাড়া কাটছে। সেখানে কি পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে, পাহাড় কাটার ধরণ, পাহাড় কাটার সাথে কারা জড়িত এসব চিহ্নিত করতে সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। এর আগে এভাবে কখনো অনুসন্ধান কমিটি করা হয়নি। কমিটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এল এ’কে আহবায়ক ও পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে উপ-পরিচালককে সদস্য সচিব সাত সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পাঁচ সদস্য হলেন, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড, আকবরশাহ ও বায়েজিদ থানার ওসি, এবং ফরহাদাবাদ, হাটহাজারী, সলিমপুর ও সীতাকুণ্ড ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

ছয়টি বিষয়ের উপর কমিটি কাজ করবে। তা হলো, বিএস ও আরএস খতিয়ানমূলে জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর, হাটহাজারী উপজেলার জালালাবাদ, নগরীর বায়েজিদ, উত্তর পাহাড়তলী এলাকার সরকারি রেকর্ডিয় পাহাড় ও টিলার প্রকৃত পরিমাণ নির্ণয়, উল্লেখিত এলাকার পাহাড় কর্তনের কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয়, পাহাড় কাটার প্রকৃতি ও পরিমাণ নির্ধারণ, পাহাড় কাটার সাথে জড়িতদের নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ, পাহাড়কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও পাহাড় কাটা রোধে গঠিত কমিটির সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন।

উল্লেখ্য, সোমবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় কর্তন রোধকল্পে অনুসন্ধান কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;