সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর সংক্রান্ত জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের গণবিজ্ঞপ্তি

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর সংক্রান্ত জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের গণবিজ্ঞপ্তি
সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর সংক্রান্ত জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের গণবিজ্ঞপ্তি

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বসবাসরত প্রকৃত ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসন ও অনেকগুলাে উন্নয়ন প্রকল্প এ মহাপরিকল্পনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মমিনুর রহমান এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। গণবিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন,

অপরূপ সবুজ পাহাড় আর সাগরের দিগন্ত বিস্তৃত নীল জলরাশির এক অপার্থিব মােহনীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই চট্টগ্রাম। কিন্তু কতিপয় পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটিবালু বিক্রয় এবং অবৈধ দখলের কারণে চট্টগ্রামের পরিবেশ-প্রতিবেশ আজ হুমকির মুখে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর ও আলীনগর এলাকায় সরকারের মালিকানাধীন প্রায় ৩,১০০ একর খাস জায়গা পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে কর্তন করে অবৈধ বসতি স্থাপন করছে। এ সকল পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসীরা অর্থের বিনিময়ে প্লট আকারে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে খাস জমি বিক্রয়/হস্তান্তর করছে। এমনকি তারা গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (GTCL) এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম সঞ্চালন লাইনের উপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণভাবে কয়েক কিলােমিটার লম্বা রাস্তা তৈরি করেছে। এ গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস পাইপলাইনের উপরে নির্মিত রাস্তায় পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত এক্সকাভেটর, ড্রাম ট্রাক, লােবেড়সহ বালু ও মাটিবাহী বড় বড় ট্রাক প্রতিনিয়ত যাতায়াত করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ পাইপলাইনের উপর দিয়ে এসব ভারী যানবাহন চলাচল করায় যে কোন সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে জানমালের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জঙ্গল সলিমপুরের অভ্যন্তরে আলীনগর নামক জায়গায় পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে সরকারী খাস পাহাড় ও টিলা কর্তন করে প্লট তৈরি করে উচ্চমূল্যে এ সকল প্লট সম্পূর্ণ প্রতারণামূলকভাবে সাধারণ মানুষকে বােকা বানিয়ে জাল দলিল সৃজন করে বিক্রয় বা হস্তান্তর করছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, গত ২ আগস্ট২০২২ খ্রি. তারিখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক জঙ্গল সলিমপুরের আলীনগরে অভিযান পরিচালনার সময় একটি তথাকথিত সমবায় সমিতির অফিস তল্লাশি করে শত শত জাল দলিল এবং মিনি ব্যাংকের শত শত চেক বই জমা বই ও রেজিস্টার উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারী খাস জায়গায় প্লট বিক্রয় ছাড়াও পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসীরা রাতারাতি টিনের অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পলাতকফেরারী আসামী ও সন্ত্রাসীদের এসকল ঘরে আশ্রয় দিচ্ছে এবং উক্ত এলাকায় তাদের কর্তৃত্ব রক্ষায় এ সকল পলাতক ফেরারী আসামী ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। মাঝে মাঝে চট্টগ্রাম শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরাও আলীনগরের দুর্গম এলাকায় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসন বা আইন-শৃঙলা বাহিনীর অভিযান প্রতিহত করার জন্য এসকল সন্ত্রাসীদের লালিতপালিত মহিলাদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রশাসন বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ এলাকায় কোন অভিযান পরিচালনা করলে বা কোন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করলে সন্ত্রাসীরা এসকল মহিলা বা কোমলমতি শিশুদের দিয়ে মহাসড়কে অবরােধ বা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। ফলে এ দুর্গম এলাকাটি সন্ত্রাসী, পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও দাগী আসামীদের একটি অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্পূর্ণ এলাকাটিতে মাত্র তিনটি বৈদ্যুতিক মিটারের মাধ্যমে হাজার হাজার ঘরে বিদ্যুৎ সংযােগ দেওয়া হয়েছে। নামে বেনামে গড়ে উঠা সমিতিগুলাে সাব-মিটার লাগিয়ে প্রতি ইউনিট ২০ টাকা পর্যন্ত হারে বিদ্যুৎ বিল আদায় করছে। হাজারাে ইজিবাইক/অটোরিক্সাগুলোতে বৈদ্যুতিক চার্জ দেওয়া হচ্ছে এখানে অবৈধভাবে গড়ে উঠা গ্যারেজগুলােতে। ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে আমাদের দেশ; প্রতিনিয়ত লােডশেডিং এ পড়তে হচ্ছে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষকে।

তিনি আরো বলেন, অতি সম্প্রতি এ এলাকার বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালােচনা করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব সাইফুজ্জামান চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্মানিত মেয়র বীর মুক্তিযােদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ আলীনগর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস গত ৩০ জুলাই ২০২২ খ্রি. তারিখ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে “জঙ্গল সলিমপুর/আলীনগর ঘিরে সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রকৃত ভূমিহীনদের পুনর্বাসন ও পরবর্তী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভা করেন। এরই আলােকে জঙ্গল সলিমপুর এলাকার প্রতিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে পরিবেশের সৌন্দর্য্য ও ভারসাম্য রক্ষার্থে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর সহযােগিতায় একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। অবশিষ্ট পাহাড় ও টিলা যেটুকু রয়েছে তা অক্ষুন্ন রেখে, কেটে ফেলা পাহাড় ও টিলার সমতল জায়গায় পরিবেশবান্ধব স্থাপনা নির্মাণের জন্য এ মাস্টারপ্ল্যানটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, স্পাের্টস ভিলেজ, পাহাড় ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইকোপার্ক/সাফারি পার্ক, পুলিশ, র‍্যাব/আনসার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র/ফাঁড়ি, বাংলাদেশ বেতারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাওয়ার নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্প, জঙ্গল সলিমপুর এলাকার বসবাসরত প্রকৃত ভূমিহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসনসহ অনেকগুলাে উন্নয়ন প্রকল্প এ মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

মমিনুর রহমান বলেন, গত দশ বছরে চট্টগ্রাম জেলায় পাহাড়ধসে ২২৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে। পাহাড়ধসে আর একজন মানুষও যেন মৃত্যুবরণ না করে সেটি নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

তিনি উক্ত এলাকায় অবৈধভাবে বসতি স্থাপনাকারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলার জন্য অনুরােধ জানান ।

১. জঙ্গল সলিমপুর এবং আলীনগরে সরকারী খাস জায়গায় বসতি স্থাপন সম্পূর্ণরূপে নিষেধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ ।

২. এ এলাকায় অবস্থিত পাহাড় ও টিলা শ্রেণির ৩,১০০ একর খাস জমি ক্রয়বিক্রয় হস্তান্তর সম্পূর্ণরূপে নিষেধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ ।

৩. ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ক্রয়বিক্রয়/হস্তান্তরের সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি), সীতাকুন্ড এর অফিস থেকে জমির মালিকানা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য যাচাই করতে হবে ।

৪. এ এলাকার পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যারা বসতি স্থাপন করেছে তাদেরকে অনতিবিলম্বে নিজ উদ্যোগে এ সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘর অপসারণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলাে।

৫. গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড (GTCL) এর গ্যাস লাইনের উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলাে।

৬. প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে এ এলাকার খাস জমিতে জ্বালানী তেল বা কোন প্রকার নির্মাণ সামগ্রী যেমন- ইট, কাঠ, বালু, রড, সিমেন্ট, টিন ইত্যাদির পরিবহন, মজুদ, ব্যবহার, ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ।

৭. কোন অবস্থাতেই অবৈধ বৈদ্যুতিক সংযােগ নেওয়া যাবেনা। বৈধ বৈদ্যুতিক সংযােগ দ্বারাও কোন প্রকার ব্যাটারী চালিত যানবাহনে চার্জ করা যাবে না।

৮. কোন সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, পাহাড়খেকো, মামলার আসামীদেরকে জঙ্গল সলিমপুর/আলীনগরে কোন ধরনের আশ্রয়, প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।

৯. কোন রােহিঙ্গাকে আশ্রয়/প্রশ্রয় বা কোন কাজে নিয়ােজিত করা যাবে না।

১০. নামে-বেনামে কোন সমিতি হতে প্লটখিল কেনা, টাকা জমাদান, ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা যাবে না।

১১. সরকার নির্ধারিত ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিলের চেয়ে বেশী বিল কোন সমিতি বা ভূমিদস্যু, পাহাড়খেকো বা সন্ত্রাসীদেরকে প্রদান করবেন না ।

১২. ভূমিদস্যু, পাহাড়খেকো সন্ত্রাসীদের নিকট হতে উক্ত এলাকায় প্লট/প্লটের দখল কিনে কাউকে প্রতারিত না হওয়ার জন্য অনুরােধ করা হলাে।

তিনি বলেন, উপরে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ অমান্য করলে কিংবা জঙ্গল সলিমপুর এবং আলীনগর এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং চট্টগ্রামের সৌন্দর্য রক্ষার্থে গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে কোন প্রকার বাধা, প্রতিবন্ধকতা, নাশকতা বা উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতােমধ্যে এ এলাকার পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যু ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি জঙ্গল সলিমপুর এবং আলীনগর এর পাহাড়ী এলাকার অপরূপ সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বীর চট্টলাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার অনুরােধ জানান তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;