সীতাকুন্ডের দর্জি দোকানের কারিগরদের কাটছে নির্ঘুম রাত 

সীতাকুন্ডের দর্জি দোকানের কারিগরদের কাটছে নির্ঘুম রাত 
দি ফ্যাশন টেইলার্স এর মালিক দিলীপ কান্তি নাথ ব্যাস্ত সময় পার করছেন।

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

রমজানর প্রায় শেষ। ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে বিভিন্ন শপিং মলগুলো। বেচাকেনাও ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে রেডিমেড অত্যাধুনিক পোশাক-পরিচ্ছদের কারণে ক্রমেই পোশাক কারিগরদের চাহিদা যেন কমে আসছিল। তবে নিত্যনতুন পোশাকের আকাশচুম্বী দামের কারণে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের এখনো ভরসা কাপড় কিনে তৈরি করা পোশাকের প্রতি। সে কারণে দর্জি দোকানগুলোতে ভিড় লেগে যায়। ফলে এখন বিরামহীন ব্যস্ততা চলছে দর্জি দোকানগুলোতে। আগে গ্রামগঞ্জের মানুষ একটু ভালোমানের কাপড়চোপড়ের জন্য শহরে ছুটে যেতেন । এখন শহরের ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমে এসেছে। মফস্বলের উপজেলাগুলোতে এখন গড়ে উঠেছে একাধিক শপিং মল।

উপজেলার সীতাকুন্ড, বাডবকুন্ড, বাঁশবাডীয়া, কুমিরা, বারআওলিয়া, ফৌজদার হাট , ভাটিয়ারীসহ বিভিন্নস্থানে গড়ে উঠেছে এই শপিং মল গুলো । অত্যাধুনিক সাজসজ্জার এসব মল গুলোতেও এখন আর সাধারণ মানুষের ঠাঁই হচ্ছে না। তাদের শেষ আশ্রয় পাড়া-মহল্লা আর হাট-বাজারের দর্জির দোকানগুলো।

উপজেলার বৃহত্তম বাজার সীতাকুন্ড। বৃহত্তম শপিং মল গুলোর মধ্যে আছে নাহার প্লাজা, সুপার মার্কেট, আফরোজা প্লাজা, সমবায় সমিতি মার্কেট অন্যতম । এসব বাজারে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি দর্জিদের চাহিদাও উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ভাটিয়ারী, ফৌজদার হাট ও বারআউলিয়া, কুমিরা বাজার, বাঁশবাডীয়া বাডবকুন্ড মতো স্টেশনগুলোতে ঈদের জমজমাট বেচাকেনা হয়। এদের সাথে পাল্লা দিয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে দর্জি গুলোকে। এমন প্রতিকুলতার মধ্যেও তাদের দোকানগুলোতে এখন প্রচন্ড ব্যস্ততা। কাজের চাপে বিনিদ্র রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের। এতে তারা বাড়তি অর্থ উপার্জনের সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি।

এসব দোকান ঘুরে দেখা যায়, এখন তাদের কথা বলার ফুরসৎ নেই। দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। শার্ট, প্যান্ট, সেলোয়ার কামিজ, ফতুয়া, ব্লাউজ, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, কামিজসহ বিভিন্ন ধরনের থান কাপড় থেকে পোশাক সেলাই করছেন ।

উপজেলার বড় বড় শপিং মলগুলোতে তৈরি পোশাকের যেমন কদর বেশি, তেমনি বাজার ভিত্তিক স্টেশনগুলোতে এখনো দর্জি দোকানে চলছে পোশাক তৈরির ধুম। থান কাপড়ের দোকানগুলোতেও সেলাই মেশিন দিয়ে দর্জি রাখা হয়েছে। থান কাপড় থেকে নিজেরা অর্ডার নিয়ে কাপড় তৈরি করেও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক দর্জি।

কয়েকজন দর্জির সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখানে মেয়েদের সেলোয়ার, কামিজ, ব্লাউজ, পেটিকোট, ছেলেদের পাঞ্জাবি, পায়জামা, ছোটদের প্যান্ট-শার্ট তৈরি করা হয়।

ওভারব্রীজ ফকিরহাটের দি ফ্যাশন টেইলার্স এর মালিক দিলীপ কান্তি নাথ বলেন, এ মাসের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করেন । গত বছর করোনার কারণে তাদের ব্যাবসা হয়নি। তাছাড়া দিন-রাত পরিশ্রম করে এ মাসে বেশি টাকা আয় করেন।

তিনি আরো বলেন, আগে মধ্য রোজার সময় তাদের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়া হতো। এখন ঈদের ২-৩ দিন আগেও তারা অর্ডার নেবেন। কাজের চাপ বেশি হলেও অতিরিক্ত কারিগর রাখা হয়েছে। এসব দোকানে ছুটছেন মধ্যবিত্ত বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকেরা। ঈদের সময় সবাই চায় সামর্খের মধ্যে নিজের পরিবারের সদস্যদের নতুন কাপড় উপহার দিতে। বিশেষ করে শিশুদের মন জয় করতে তাদের থাকে প্রাণান্তকর চেষ্টা। সীতাকুন্ড সাথী টেইলার্সে কাপড় সেলাই করতে আসা সামীমা আক্তার বলেন , যদিও সেলাইয়ের দামটা একটু বেশি। তারপরও ঈদ উপলক্ষে পছন্দের পোষাক দামি না হলেও চলেনা।

অনেকে জানিয়েছেন ঈদ উপলক্ষে পোশাক সেলাইয়ের দাম অনেকটা বেশি রাখা হচ্ছে। এব্যাপরে রেমি টেইলার্স এর মালিক মিন্টু জানান, ঈদ উপলক্ষে কারিগরদের বেতনের পাশাপাশি বোনাস ও দিতে হয় তাই একটু বেশিই মজুরি নেয়া হচ্ছে। তবে তা অতিরিক্ত নয়।

সীতাকুন্ডের উজ্জল টেইলার্স এর মালিক উজ্জল দে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার রোজার প্রথম থেকেই অর্ডার শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পনের রোজার পর থেকে আরো প্রচুর অর্ডার আসবে। দোকানের সবাই এখন অনেক ব্যস্ত। ছেলেদের পাঞ্জাবীর চাহিদা বেশি তাই নতুন নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবীর অর্ডার পাচ্ছি। তিনি বলেন, এখন যেহেতু ঈদ মৌসুম তাই কারিগর পাওয়াও খুব মুসকিল। এখন কারিগরের অনেক ডিমান্ড।

সীতাকুন্ডের আলিফ ট্রেইর্লাসের মালিক নাছির বলেন, মেয়েরা নিত্য নতুন ডিজাইনের কাপড় সেলাইয়ের অর্ডার দিচ্ছে। তাদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সেরকমই তৈরী করে দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা অর্ডার নিচ্ছি। বিশ রোজা পর থেকে আমরা অর্ডার নিচ্ছিনা।

উপজেলার ফকিরহাটে ফ্যাশন টেইলার্সে বাচ্চাদের জন্য কাপড় বানাতে দিতে আসা অভিভাবক মোহাম্মদ শাহজান বলেন , সময়ের চাহিদায় এখন রেডিমেড পোশাকের মতো সেলাই কাপড়েও নানান বৈচিত্র এসেছে। দেশীয় কাপড়ের বুটিক হাউজগুলো স্বপ্লমূল্যের ভিতর নকশা করা পাঞ্জাবি, ত্রিপিস, ব্লাউজ, ফ্রকসহ নানা রকম পিস কাপড় সরবরাহ করছে। সেগুলো থেকে সুলভ মূল্যে পছন্দ করা কাপড় বানানো যাচ্ছে। এসব নকশা করা পোশাকের দাম একটু বেশি হলেও আরো কম দামে থান কাপড় দিয়েও পছন্দমতো জামা বানানো যাচ্ছে। তিনি তার ৪ ছেলে-মেয়ের জন্যে পছন্দমতো কাপড় সেলাই করতে দিতে পেরে বেশি খুশী। সেই সাথে তার বাচ্চারাও খুশী ।