সমস্যায় জর্জরীত সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ ধাম, কাল শুরু হচ্ছে শিব চর্তুদশী মেলা

সমস্যায় জর্জরীত সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ ধাম, কাল শুরু হচ্ছে শিব চর্তুদশী মেলা
সমস্যায় জর্জরীত সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ ধাম, কাল শুরু হচ্ছে শিব চর্তুদশী মেলা

বিশেষ প্রতিবেদক  ।।

কাল থেকে শুরু হচ্ছে ভারত উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাম্বলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শিব চর্তুদর্শী মেলা। এ মেলাকে ঘিরে সকল প্রকার আয়োজন শেষ করেছে মেলা পরিচালনা কমিটি। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশ হতে আগত তীর্থ যাত্রীদের নিরবিচ্ছিন্ন ফুটপাত, পয়নিস্কাশন,পানীয় জলের সুব্যস্থা, সার্বিক নিরাপত্তা ও লাইটিং, চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপনসহ সকল প্রকার সুবিধা প্রদানে আলোচনা পর্ব শেষে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

২০ ফেব্রুয়ারী তিথির মাধ্যমে পূজার শুরু হয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারী স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মেলা। এই তিন দিনে পূজার সাথে থাকছে ধর্মী আলোচনা ও ঋষি সম্মেলন। বিশ্বের নানা দেশের ধর্মী ঋষিদের সমাগমের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলন।

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মেলা হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পাওয়ায় প্রতি বছর শিব চর্তুদশীতে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ ধামে। দেশী-বিদেশী সনাতানী সম্প্রদায়ের লোকজনের সমাগমে লোকে-লোকারন্য হয়ে উঠে চন্দ্র নাথ ধামের মঠ-মন্দির। চর্তুদশী তিথিতে শিব পূজা প্রধানতম পূজা পালনে পূর্ণার্থীদের উঠতে হবে পাহাড়ের প্রায় ৩২’শ ফুট উপরে। সু-উচ্চ পাহাড়ের খাড়া সিটির সাথে বনের সরু পথ বেয়ে মন্দিরে পৌছাটা দুঃসাধ্য হয়ে উঠলেও অসাধ্যকে সাধন করে পূর্নতা অর্জন করায় পূণার্থীদের মূল্য বলে জানান চন্দ্রনাথ ধামের মঠ-মন্দিরের পূজারীরা।

পূজারী দীপক চক্রবর্তী বলেন, শিব চর্তুদশী তিথিতে দেব-দেবীরা পূজা অর্চনায় মিলিত হন। এই তিথিতে মহাদেবে সান্নিদ্য লাভ করা সহজ হওয়ায় ভক্তরা মিলিত হন মহাদেবের পূর্ন ভূমিতে। এবার তিথি শুরু হবে ২১ ফেব্রুয়ারী ৬টা ১০ মিনিট একুশ সেকেন্ড হতে ২২ ফেব্রুয়ারী শনিবার রাত ৭টা ৭ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে শেষ হবে। পরদিন আমবস্যা রাতে ভ্যাস কুন্ডের পুকুরে প্রয়াতদের উদ্দিশ্যে জল ও পিন্ডদান কার্যক্রম শেষে মেলার শেষ হবে বলে জানান তিনি।

পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃংঙ্গে উঠতে আঁকা-বাঁকা ও ভাঙা সিড়ির পথে উঠার সময় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে হরহামেশা। এরপরও সকল ত্যাগ স্বীকার করে শিব দর্শনই পূজার অন্যতম লক্ষ্য। মেলাকে ঘিরে যাত্রী সুবিধায় কিছু পদক্ষেপ হাতে নিলেও হাজারো সমস্যা আর বিড়ম্বনার শেষ থাকে না মেলায়। ফলে শুরুতে পদে পদে ভোগান্তির সাথে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে যাত্রীরা। তবে মেলা কমিটির সাথে স্রাইন কমিটির দ্বন্দ্বে সমস্যার সমধান নেই বলে জানান স্থানীয় সনাতনীরা।

স্থানীয় হিন্দুধর্মাম্বলম্বীরা বলেন,‘ শিব চর্তুদশী পূজা উপলক্ষে বিশ্বের নানা দেশের প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জমায়েত ঘটে চন্দ্রনাথ ধামে। বিভিন্ন সংস্থার সাহায্য-সহযোগীতায় যাত্রী সুবিধা প্রদানে নাম মাত্রে কিছু ব্যবস্থা হাতে নেয়া হলেও লেগে থাকা সমস্যা থেকে যায় স্থায়ী রুপে। দেশী-বিদেশী সাহায্যে মঠ-মন্দিরগুলোতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলেও ধামে উঠার সিড়ি হয় না সংস্কার। বৃটিশ সরকারের অর্থায়ানে তৈরী সিঁড়ি ভেঙে বিলিন হয়ে পড়েছে। স্রাইন কমিটি ও মেলা কমিটির সমন্বয়হীনতায় সমস্যার কূলকিনারা নেই বলে জানান তারা।

এভাবে চন্দ্রনাথ ধাম সমস্যার বেড়াজালে বন্ধি হয়ে চরম আকার ধারন করেছে জন ভোগান্তি। এ পরিস্থিতিতে দুর-দুরান্তের যাত্রীদের দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ঢলে পড়তে হচ্ছে অনাকাঙ্কিত মৃত্যুর কোলে।

এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, মেলায় আগত যাত্রীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ –সুবিধা প্রদানে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। যাত্রী দুর্ভোগ লাগবে মেলা কার্যলয় থেকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করবে ভলনটিয়ার। অসুস্থদের চিকিৎসায় থাকবে চিকিৎসক দল, নিরাপত্তা পুলিশ, র‌্যাব, আনসারসহ গোয়েন্ধা পুলিশ। প্রতিবারের মত এবারও ভারত,নেপাল ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫ লাখ ধর্মপ্রান মানুষের জমায়াতের আশা করছি। ২০-২২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলতে থাকা মেলার নিরাপত্তায় তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকবে। দুর্ঘটনা আহত ও অসুস্থদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় থাকবে এম্বোল্যান্সসহ চিকিৎসক টিম। এরপরও কোনো প্রকার ছিনতাই ও স্লীলতাহানীর খবর পাওয়া গেলে সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।