সরকার পরিচালনার জন্য সুসংগঠিত দল বিরাট শক্তি : শেখ হাসিনা

সরকার পরিচালনার জন্য সুসংগঠিত দল বিরাট শক্তি : শেখ হাসিনা

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক।।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলভাবে সরকার পরিচালনা করতে দলকে সুসংগঠিত ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন । তিনি বলেছেন, একটা সরকার সফলভাবে কাজ করতে পারবে তখনই যখন দল সুসংগঠিত থাকে। কারণ দল সুসংগঠিত থাকলে, এটা হচ্ছে সরকারের জন্য বিরাট শক্তি। গতকাল শুক্রবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, এই শক্তিটাই সব থেকে বেশি কাজে লাগে একটা দেশকে উন্নত করতে। যেটা আমি নিজে উপলব্ধি করি। এবং সে কারণে আমি সবসময় সংগঠনের ওপর সব থেকে গুরুত্ব দিই। আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে স্মরণ করেন দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে, যিনি ঠিক এক বছর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় করতে গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়া, যেন এ সংগঠন আর রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব নিতে না পারে। ৭৫ এর পর আমরা দেখেছি বাংলাদেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীকে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে এবং এখনো অনেকের শরীরে সেই অত্যাচারের চিহ্ন রয়েছে। কত মানুষকে গুম খুন করেছে…এই অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়েও কিন্তু আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে পারেনি।

অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, দুর্ভাগ্যবশত সেটাকে ওইভাবে প্রতিবাদ করা যায়নি। কারণ তখন একটামাত্র টেলিভিশন, সব সরকারি পত্রিকা এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় এই অপপ্রচারগুলো এমনভাবে প্রচার করা হত যে আমাদের সেটা মোকাবেলা করা একটা কঠিন কাজ ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সঠিক ইতিহাস সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মীরা অনেক ত্যাগের বিনিময়ে এই সংগঠনটা ধরে রেখেছে। এটা করতে গিয়ে বহু পরিবার একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে, কত যে নির্যাতনের ইতিহাস, সেটা হয়তো হিসাব করে বলা যাবে না।

২০০৯ সালে আবার সরকারে আসার পর ১১ বছর পূর্ণ হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অন্তত এইটুকু বলতে পারি, মানুষের যে আস্থা-বিশ্বাস, সমর্থন আমরা পেয়েছি, আজকে বাংলাদেশের মানুষ জানে, একমাত্র আওয়ামী লীগ থাকলে উন্নয়ন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় যারা বলেছিল- বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কী হবে, বটমলেস বাস্কেট হবে… আজকে তারা সে কথা বলতে পারবে না। বরং আজকে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে, যেটা মূলত আমার লক্ষ্য ছিল।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরা এবং নেতাকর্মী ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন পাওয়ার কথাও স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এত বড় একটা দলের দায়িত্বভার নেব, সেটা কখনো মাথায় চিন্তাও ছিল না, করিও নাই। তাছাড়া যেহেতু আব্বা রাজনীতি করেন, আমরা সবসময় ছিলাম সক্রিয়। একেকটা দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। কখনো এই আশা বা এই চিন্তাও মাথায় আসেনি যে কোনো কিছু হতে হবে, পেতে হবে, বা কিছু করতে হবে। সেটা ছিল না। কাজ করতে হবে এটুকু জানতাম।

আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমে দলকে সুসংগঠিত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেদের জীবন পণ করেই তারা এ সংগঠনকে ধরে রেখেছে।

সব বাধা পেরিয়ে এসে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এখন একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে দলীয় সভাপতি বলেন, এ দেশে রাজনীতি কেউ যদি শিখিয়ে থাকে, সেটা আওয়ামী লীগই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে করে যাচ্ছে। এই ঐতিহ্যটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে শুনেছি…‘আওয়ামী লীগ নেতারা স্মার্ট না, মডার্ন না। আওয়ামী লীগ আধুনিক না। আওয়ামী লীগ এটা না, সেটা না, আওয়ামী লীগ এটা পারবে না। আওয়ামী লীগে শিক্ষিত লোক নেই…’ ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কথা শুনতে হত তখন। অনেক অপবাদ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেওয়া হত।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা নিজেদেরকে স্মার্ট বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারা ক্ষমতায় আসত শুধু লুটপাট করতে, মানি লন্ডারিং করতে, দুর্নীতি করতে, তাদের স্মার্টনেসটা ছিল নিজেদের অর্থনৈতিক শক্তিকে বাড়ানো, নিজেদেরকে তৈরি করা। কিন্তু দেশের মানুষ কিন্তু এই স্মার্টদের কাছ থেকে কিছু পায় নাই। কিন্তু স্মার্টনেস দেখাতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন দেখিয়েছে যে রাষ্ট্র পরিচালনা আওয়ামী লীগই পারে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন- সেটা আওয়ামী লীগই পারে।

১৯৭৫ সালের পর যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করত না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখানে আমাদের উদ্দেশ্যটা কী? যেহেতু ২৪ বছরের সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না, সেটা প্রমাণ করা। সেটা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।