১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাবে, ফলপ্রসূ বৈঠক সম্পন্ন

১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাবে, ফলপ্রসূ  বৈঠক সম্পন্ন
১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাবে, ফলপ্রসূ বৈঠক সম্পন্ন

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকা ।।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ১৪ দলের শরিক নেতারা তাদের গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে পাওয়া না পাওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে শরিক দল গুলোর যেসব দলে যোগ্য প্রার্থী ও এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে তাদেরকে ন্যূনতম একটি করে আসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

বুধবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোট নেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও মহানগর ১৪ দলের সমন্বয় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মাযা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু,বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি প্রমুখ।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা বিগত দিনের নানা বিষয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একলা চলা নীতির কথা সামনে আনেন জোট নেতারা। তারা বলেন, ১৪ দলের নেতাদের সভা সমাবেশে না ডেকে আওয়ামী লীগ নিজেরাই করছে। এটি যেমন আমাদের কাছে বিব্রতকর। তেমনি দেশের জনগণের কাছেও ১৪ দল আছে বলে ভালো কোন মেসেজ যাচ্ছে না। যা কেন্দ্রীয় ১৪ দলের জন্য শুভ লক্ষণ নয়।

এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোট নেত্রী বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ঐক্যবদ্ধ কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতৃত্বে। শুধু তাই নয়, আগামীতে যদি আমরা সরকার গঠন করতে পারি, সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার নয়, ১৪ দলীয় জোট সরকার হবে। জোটের সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন হবে। ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক। এই জোট নির্বাচন কেন্দ্রিক নয়। তাই ১৪ দলীয় জোট সুখে-দু:খে সবাই একসঙ্গে কাজ করবে।

এই মুহূর্তে ১৪ দলীয় জোটের সভা সমাবেশের দিকে সবার নজর দেওয়া উচিত। কারণ আগামী নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। তাই দলের প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই এখান থেকে এক চুলও নড়া যাবেনা। আগামী আগস্ট মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে বিভাগ, মহানগর, জেলা ও উপজেলায় একের পর এক কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভা সমাবেশ হবে। বিভাগীয় সমাবেশের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থাকার কথা বলেন। এখন থেকে ঢাকার বাইরের প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম আওয়ামী লীগের নয়, হবে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের।

কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। স্বাধীনতা বিরোধীরা অর্থাৎ বিএনপি-জামাত বিদেশীদের কাছে গিয়ে ধর্না দিচ্ছে। এমনকি তারা টাকা দিয়ে লবিং করছে কিভাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠানো যায়। কিভাবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করা যায়। তাই সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ওরা যেন কোনভাবে আর দেশের জ্বালাও পোড়াও না করতে পারে। আপনারা সজাগ থাকবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে সভা, সমাবেশ ও সেমিনার করবেন। সরকারের গত সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশের জনগণের কাছে তুলে ধরবেন। আমরা যদি গত সাড়ে চৌদ্দ বছরের সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড  জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারি, ইনশাল্লাহ আমাদের কেউ ক্ষমতা থেকে বিচ্যুত করতে পারবেনা।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক নেতা নেত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নেত্রী জামায়াতে ইসলাম এদেশের স্বাধীনতা বিরোধী একটি দল। এই দলটিকে কেন সরকার সমাবেশের অনুমতি দিল। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, তখন একটি হিসাব করে জামায়াত ইসলামকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আমরাও একটু দেখতে চেয়েছিলাম জামায়াত কি বলে। তারা কি বলতে চায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। সেটি দেখা হয়ে গেছে। ফলে আগামীতে আর জামায়াতে ইসলামকে আর কোনো সভা সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। তাদের দলের নিবন্ধনের বৈধতার ইস্যুটি আদালতে আছে। আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে। ফলে জামাতকে নিয়ে আর কোন কথা বলার দরকার নেই।

এ সময় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের নেতারা বলেন, নেত্রী বিদেশীরা আমাদের দেশকে নিয়ে নাক গলানোর চেষ্টা করছে। আপনি এটাকে কিভাবে দেখছেন, জানিনা। কিন্তু আমরা এটি মেনে নিতে পারছি না। আশা করি বিদেশিদের নাক গলানোর বিষয়টি আপনি আমলে নেবেন না। একইসঙ্গে জোট নেতারা বলেন, বিএনপি এক দফা দাবি দিয়েছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবেনা। আমাদেরও এক দফা দাবি শেখ হাসিনা ছাড়া ১৪ দল নির্বাচনে যাবেনা।

বৈঠকে উপস্থিত শরিকদলের অন্যতম এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে জোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে। দলের জোটে যারা আছেন, তাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে কাজ করতে বলেছেন।

তিনি বলেছেন, প্রত্যেক দলকেই যাদের যোগ্যতা আছে ও এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে তাদের ন্যূনতম একটি করে আসন দেওয়ার ব্যাপারে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আপনারা এখন কাজ করুন। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী ফ্রি এন্ড ফেয়ার।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাসদ আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বলেন, আজকের বৈঠকে নেত্রী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচনে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে। বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। আমরা বলেছি শেখ হাসিনার ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। আমাদের এক দফা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আজকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জোট নেত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা হয়েছে। এই আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে। শেখ হাসিনা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আগামী সরকার হবে ১৪ দলীয় জোট সরকার। আমরা বলেছি শেখ হাসিনার ছাড়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব না। আমাদের এক দফা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;