২৬ বছর পর পদোন্নতি শুরু হচ্ছে প্রাথমিকে,সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে এ পদোন্নতি দেওয়া হবে

২৬ বছর পর পদোন্নতি শুরু হচ্ছে প্রাথমিকে,সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে এ পদোন্নতি দেওয়া হবে

এম মামুন হোসেন ।।

দীর্ঘ ২৬ বছর পর দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদোন্নতির দরজা খুলছে। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে এ পদোন্নতি দেওয়া হবে। একইসঙ্গে প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা-থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এর আগে ১৯৯৪ সালে পদোন্নতির এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। জানা গেছে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ প্রধান শিক্ষক পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হলেও বাকি ২০ শতাংশ বাইরে থেকে উন্মুক্ত প্রক্রিয়ায় নিয়োগের ব্যবস্থা রেখে খসড়া করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ।

সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বর্তমানে দুটি শর্ত পূরণ করে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষা দিতে পারেন। শর্ত দুটি হলোÑ শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে। এভাবে অতীতে অনেক শিক্ষকই সুযোগ পেয়েছেন কর্মকর্তা হওয়ার। ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক, পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে  মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ ছিল। ১৯৯৪ সালে নিয়োগ বিধি সংশোধনের পর শিক্ষকদের এভাবে কর্মকর্তা হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

খসড়া নিয়োগ বিধি অনুযায়ী, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ২৫৮৯টি পদে নিয়োগে ৮০ শতাংশ বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ২০ শতাংশ পদ উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণযোগ্য। বিভাগীয় প্রার্থী বলতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বোঝাবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ন্যূনতম তিন বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিভাগীয় প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে পদগুলো উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে পূরণ করা হবে। সরাসরি নিয়োগে বয়স অনূর্ধ্ব ৩০ বছর। বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য।

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ‘সমন্বিত নিয়োগ বিধিমালা-২০২০’। এতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে শুধু প্রধান শিক্ষকদের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়নি। তবে প্রাথমিকের শিক্ষকরা নতুন নিয়োগ বিধি নিয়ে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক এবং পরবর্তীতে পদোন্নতি দিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে হবে। আগের নিয়োগ বিধিতে সে সুযোগ থাকলেও তা বাতিল করে নিয়োগ বিধি করা হচ্ছে। এতে করে অনেকেই চাকরি জীবনে কোনো পদোন্নতিই পাবেন না।

সরকারি প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াজ পারভেজ বলেন, আগে প্রধান শিক্ষকদের সব পদে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও নিয়োগ বিধি সংশোধন করায় সেই পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ফলে একই পদে থেকে চাকরিজীবন শেষ করতে হবে। প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য ৪৫ বছর জুড়ে দেওয়ায় থানা শিক্ষা কর্মকর্তা হওয়ার পর তাদের অবসরে চলে যেতে হবে।

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক থেকে পরবর্তী পদে পদোন্নতির সুযোগ থাকলেও ১৯৯৪ সালে পদোন্নতির এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি সমন্বিত চাকরি বিধিমালা তৈরির মাধ্যমে আবারও সেটি চালু করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের ৮০ শতাংশ জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি এবং ২০ শতাংশ সরাসরি প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দিতে একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে এটি যাবে। সেখানে খুঁটিনাটি বিস্তারিত আলোচনা হবে। পরবর্তীতে এটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, কেউ কোনো ব্লক পোস্টে আটকে থাকুক, সেটি চাই না। এতে কোনো প্রণোদনা থাকে না। শিক্ষকরাও ধাপে ধাপে উপরের পদে পদোন্নতি পাবেন। এজন্য পদোন্নতির সোপান তৈরি করা হচ্ছে।