ছাত্রলীগ চবি'র দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম, প্রতিবাদে গাড়ি ভাংচুর, টিয়ারশেল নিক্ষেপ পুলিশের

চবি শাখা ছাত্রলীগের অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের ডাক

ছাত্রলীগ চবি'র দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম, প্রতিবাদে গাড়ি ভাংচুর, টিয়ারশেল নিক্ষেপ পুলিশের

পোস্টকার্ড (চবি ) প্রতিনিধি ।।

চট্টগ্রাাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাখা ছাত্রলীগের গত কয়েক দিনের সংঘর্ষের জের ধরে দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম করেছে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কর্মীরা।

গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন হাটহাজারীর এগারো মাইল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের নেতা নাসির উদ্দিন সুমন ও ছাত্রলীগ নেতা আল নাহিয়ান রাফি। তারা দুইজনই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। মারধরকারী গ্রুপ হচ্ছে ভিএক্স। তারা নগরীর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

এদিকে ছাত্রলীগ দুই নেতার ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যার পর থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। দুই গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা পুলিশের পাঁচটি এবং প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়ি ভাংচুর করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়া জিরো পয়েন্টে অবস্থিত ওয়াচ টাওয়ারও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় রহস্যজনকভাবে লোডশেডিং হয়। ভাঙচুরের পরপরই বিদ্যুৎ চলে আসে। ছাত্রলীগ কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ও দুই-তিন রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ।

বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাত ১০ টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভিএক্স গ্রুপের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী ও সিএফসি গ্রুপের নেতাকর্মীরা শাহ আমানত হলে অবস্থান করছিলো। যেকোনো সময় আবারও সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদে আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও তার অনুসারী গ্রুপ সিএফসি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তাপস হত্যার সহযোগী সিরাজ উদ-দৌলার প্রত্যক্ষ মদদে ও তাপস হত্যার আসামিরা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে আমাদের দুই নেতার উপর বর্বরচিত হামলা চালিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে আমরা আগামীকাল (আজ সোমবার) থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। অপরাধীদের আইনের আওতায় না আনা পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলবে।’

ভিএক্স গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, ‘ঘটনাটা গত দুই-তিনদিন ধরে চলমান। এর আগে আব্দুর রব হলে রেজাউল হক রুবেল (শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি) ভাইয়ের সামনেই আমাদের কর্মীদের মারধর করে তার অনুসারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তার উচিত ছিলো কার অনুসারী তা না দেখে মারধরকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি তা না করে উল্টো উস্কে দিচ্ছেন। তাই আমাদের জুনিয়র কর্মীদের ভিতরে একটা ক্ষোভ দেখা দেয়। সেই ক্ষোভ থেকেই নাসিরউদ্দিন সুমন এবং আল নাহিয়ান রাফিকে মারধর করেছে আমাদের জুনিয়রা।’
চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা জলকামান এবং দুই-তিন রাউন্ড টিয়ারশেল ছুঁড়ি। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত এর আগে গত ২৮ ও ২৯ নভেম্বর উভয় গ্রুপের দফায় সংঘর্ষে ১০ ছাত্রলীগকর্মী আহত হয়। পুনরায় সংঘর্ষের সম্ভাবনা থাকায় ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র ও পাথর উদ্ধার করলেও কাউকে আটক হয়নি।